বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ এ বছর আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে ফেসবুকে ঢুকে আমার মন আনন্দে ভরে উঠেছিল । দিনটি যে আষাঢ় মাসের প্রথম দিন সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ফ্লাইং ডাচম্যান আমার ওয়ালে কদম ফুলের ছবি পাঠিয়েছে। আষাঢ়-শ্রাবণের বৃষ্টি, কদম ফুল- এসবই বাংলার অনিবার্য অনুষঙ্গ আমার রক্তে মিশে রয়েছে।
ইন্টারনেট-আসক্ত নতুন প্রজন্ম রবীন্দ্রনাথের গানে কিংবা এইসব কালোমেঘ বৃষ্টিবাদলে আলোড়িত হলে-আমি শিহরণ বোধ করি। ফ্লাইং ডাচম্যান ১৫ জুন সামহোয়্যারে বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল নামে একটি পোস্টও দিয়েছিল । এই পোস্টে ২২টি বৃষ্টির গানের লিঙ্ক রয়েছে! তার মধ্যে একটি আমার লেখা! ... ফ্লাইং ডাচম্যানের গভীর বৃষ্টিপ্রেম টের পেয়ে আমার ভালো লেগেছিল । ...
রাজশাহীর একটি আমবনের পাশের চত্বর বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে।
ফ্লাইং ডাচম্যান যে বৃষ্টি ভালোবাসে তার আঁচ আগেই পেয়েছিলাম তারই ব্লগের কোনও পোস্টে ।
... রাজশাহীর একটি আমবনের পাশের চত্বর বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে। ...
...আমার মাতৃপুরুষ উত্তরাঞ্চলের বলেই ছেলেবেলায় আমি অনেকবারই রাজশাহীতে গিয়েছিলাম । ফ্লাইং ডাচম্যান-এর পোস্টটা দেখে পলকে ১৯৮৪ সালে ফিরে গিয়েছিলাম। ওই বছরই বর্ষাকালের একটি বৃষ্টিভেজা দিন কেটেছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে । রাজশাহী থাকার সময় ভোরবেলা বাবলার (কাজিন) সঙ্গে এয়ারগান নিয়ে চলে যেতাম পদ্মার ধূ ধূ চরে ... হেতেম খাঁ থেকে সাইকেল চালিয়ে চলে যেতাম সিরোল (বালিয়াপুকুর) ... সিরোলের সেরিকালচারের সবুজ ঘাসপাতায় মিশে যেতাম ... কিংবা দূরের রেললাইনের দিকে চেয়ে থাকতাম ... সে সময় উপশহর মাত্র গড়ে উঠছিল ...সাইকেলে করে উপশহরে ঘুরতাম; এসব কারণেই রাজশাহী শহরের সঙ্গে শৈশবেই আমার একটা গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল ...অবশ্য এসব কথা ফ্লাইং ডাচম্যান কে কখনও বলা হয়নি ...
।
ওরও শৈশব-কৈশর রাজশাহী তে কেটেছে। ... এখন পড়াশোনা করছে ঢাকায়।
বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি
ফ্লাইং ডাচম্যান ব্লগ লিখছে ১ বছর ১১ মাস। প্রথম পাতায় লেখার সুযোগ পেয়েই চমকে দিল ও। চা লাগবে, চা? (আপডেটঃ আইস টী'র রেসিপি) প্রচন্ড প্রাণশক্তিতে ভরপুর এক ব্লগারের আগমন টের পেল সবাই ।
সেই ঐতিহাসিক পোস্টটি ১১৩৯ পঠিত। ১২৬টি মন্তব্য। ২৫ জনের ভালো লেগেছে। ওই পোস্টে অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই প্রথম প্লাসটি আমার!
ফ্লাইং ডাচম্যান কেবল প্রাণশক্তিতেই পরিপূর্ণ নয় রসিকও বটে।
এই খাই দাই (অর্থাৎ রেসিপি পোস্ট) পোস্টই তার প্রমান।
আপনাদের রসিক ব্লগার। ছবিটি ফেসবুক থেকে ফ্লাইং ডাচম্যান এর বিনা অনুমতিতেই তুলে দিলাম ... দেখি ও আমার ওপর রাগ করে কি না
আপনাদের রসিক ব্লগারটি শুরু থেকেই গান/ গল্প/ রসিকতা /সংগীত বিষয়ক পোস্ট /জন্মদিনের পোষ্ট /টেকিপোস্ট /খাই দাই পোষ দিয়ে সামু জমজমাট করে রেখেছে।
এই সে দিনও আদ্রিতার জন্মদিনেও পোস্ট দিয়ে সাড়া ফেলে দিল ও।
এবার বলি যে -শুরু থেকেই আমার সঙ্গে ফ্লাইং ডাচম্যান এর বেশ সখ্যতা জমে উঠেছে। ওর ব্লগের “আমার লিঙ্কস” এ প্রথমেই আমার নাম।
তার কারণ আছে। আমি একটা ব্যান্ডের জন্য লিরিক লিখি। কিছুটা কাকতালীয়ভাবেই সেই ব্যান্ডটাই ফ্লাইং ডাচম্যান- এর জান। আর সেটা জানতে পেরে ফ্লাইং ডাচম্যান-এর সে কি উচ্ছ্বাস! শিরোনামে আমার নাম জুড়ে দিয়ে আমার লেখা একটা ‘বিখ্যাত’ গান নিয়ে পোস্ট দিতে দেরি করেনি ও।
ফ্লাইং ডাচম্যানও যে লিরিক-টিরিক লেখে ক্রমশ সে খবরও জানা হয়ে গেল।
ওর একটা লিরিক।
এখানে লুকিয়ে রাখা
এখানে লুকিয়ে রাখা প্রতিবিম্বের পাশে
মৃত স্বপ্নের সমাধি গড়ে
কেন যেতে চেয়েছিলে আলোর মিছিলে?
অথচ রোদের তীব্র দহন ছিলনা,
সে মিছিলেও জ্বলেনি কোন আলো
তবুও হেটে গেলে পাতাঝরা পথে
মুখোশে ঢাকা বর্ণহীন চোখে
দেখনি কী স্বপ্নভাঙ্গা জনপদে
রিক্ত-শুন্য মানুষ তোমারই অপেক্ষায়
নিশ্চুপ জেগে থাকে মশাল জ্বেলে
এদের ফেলে তুমি কোথায় হারাতে চেয়েছিলে?
এখানে লুকিয়ে রাখা চিহ্নে
নীড়হারা জনপদে
কেন তবে বিক্ষত হয়েছিলে?
এই লিরিকের গঠনশৈলীতে আমার নিজস্ব প্রকাশ-ছায়া খুঁজে পেয়ে শিহরিত হয়েছিলাম।
ব্ল্যাক এর প্রতি ওর ডেভোশনের মাত্রা লক্ষ করে মুগ্ধ হলাম। পরে জানলাম যে ও গানও করে।
ফ্লাইং ডাচম্যানের গিটার (ফেসবুক থেকে নেওয়া)
ফ্লাইং ডাচম্যান আমাকে ফেসবুকে আমন্ত্রন জানাতে দেরি করেনি।
আমারও সাড়া দিতে দেরি হয়নি। ফ্লাইং ডাচম্যানের জন্মতারিখ ৪ জুলাই । রাশি কর্কট । কর্কটরা ভারি ইনট্রোভার্ট হয়; মানসিকতা বেশ অতল । বারোটি রাশির মধ্যে এই রাশিটির প্রতিই আমার সবচে বেশি আস্থা আর ভক্তি।
এর ঠিক সবার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না। কিন্তু যার সঙ্গে মেশে, ভীষণ সিরিয়াসলিই মেশে। যে কারণে আমিও ফ্লাইং ডাচম্যান কে হালকাভাবে নিইনি। ওর কাছে প্রায়ই ফেসবুকের মাধ্যমে টেকি বিষয়ে সাহায্য চাই। একবার ভিসতা জেনুইন করবার এক্টিভেটর চাইলাম।
পেয়েও গেলাম। এরই ফাঁকে ও আমার টেলিফোন নাম্বার চাইল। দিলাম। জানি যে সঙ্গে সঙ্গেই ফোন করবে না; কর্কট বলেই অপেক্ষা করবে।
আপনাদের প্রাণবন্ত রসিক ব্লগারের মোবাইল ফোন
তবে এও জানি একদিন ও আমাকে ফোন করবে।
তখন হয়তো আমি ওকে রাজশাহীর দিনগুলির কথা বলব। বলব যে ভোরবেলা বাবলার সঙ্গে এয়ারগান নিয়ে চলে যেতাম পদ্মার ধূ ধূ চরে ... হেতেম খাঁ থেকে সাইকেল চালিয়ে চলে যেতাম সিরোলে ...টলটলে পূর্ণিমাসন্ধ্যায় সিরোলের কফিলের পুকুরে সাঁতার কাটতাম ... আর সেরিকালচারের গাছপালার গভীরে মিশে যেতাম ...সেরিকালচারের পিছনে রেললাইন ... আর উপশহরে সাইকেল চালাতে চালাতে বাবলার ভরাট কন্ঠে রবীন্দ্র জৈন-এর গান ... ‘চলতে পথে হঠাৎ এল বৃষ্টি’ ... সেই গানটার কথাও বলব ...
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ। ১৯৮৪ সালের বর্ষাকালের একটা গোটা দিন কেটেছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা হলে ...শুরুতে আমি বলছিলাম যে ... আষাঢ়-শ্রাবণের বৃষ্টি, কদম ফুল- এসব বাংলার ঐতিহ্য। আমার রক্তে মিশে রয়েছে। ইন্টারনেট-আসক্ত নতুন প্রজন্ম এসব কালোমেঘ বৃষ্টিবাদলে আলোড়িত হলে-আমি শিহরণ বোধ করি।
... তবে আমি মাঝে- মাঝে এই ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠি যে বাংলার অপরূপ প্রকৃতিবন্দনা ছাড়াও তো নতুন প্রজন্মের সাম্রাজ্যবাদী শোষন নির্মম দিক সম্বন্ধেও সচেতন হওয়া দরকার। আজও সাম্রাজ্যবাদীরা গোপন চুক্তি করে বাংলাদেশের তেল-গ্যাস-এর উপর অধিকার আরোপ করছে । অথচ ... অথচ তরুণ প্রজন্মের ভিতর সাম্রাজ্যবাদ শব্দটার ব্যবহার তেমন একটা নেই বললেই চলে!
ফ্লাইং ডাচম্যানের একটি পোস্টের শিরোনাম:Wavin' Flag গানে গানে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী চেতনা ...
ফ্লাইং ডাচম্যান সঠিক পথেই আছে ভেবে স্বস্তি পেলা।
আজ গ্রেট ফ্লাইং ডাচম্যানের জন্মদিন ।
ওর প্রতি রইল আমার এক আকাশ শুভেচ্ছা।
আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে / এ জীবন পুণ্য কর দহন-দানে ...
(আমি আর এই পোস্টে কেক আর কোক-এর ছবি দিলাম না। সে ভার আপনাদের ওপরই ছেড়ে দিলাম ...)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।