আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২১ আগস্ট মামলা: সম্পূরক চার্জশিটে তারেক, বাবর, হারিছসহ ৩০ আসামি

বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরীসহ নতুন করে আরও ৩০ জনকে আসামি করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হয়েছে। দণ্ডবিধি আইনের ৩২৪/৩২৬/৩০৭/১২০-খ/৩২০/৩০২/১১৮/১১৯/২০১/২১২/২২৭/২১৮/৩৩০৩৪ ধারা ও বিস্ফোরক আইনের ৩/৪/৬ ধারায় এ চার্জশিট দেয়া হয়। আগের চাজশিটের ২২ আসামিসহ মোট ৫২ জনের বিরুদ্ধে এ চার্জশিট দেয়া হলো। এদিকে চাজশিট দাখিলের সময় বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীগণ তাদের ভাষায় তারেক জিয়ার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে ও আওয়ামীলীগ সমর্থিত আইনজীবীগণ তারেক জিয়ার ফাঁসির দাবীতে আলাদা আলাদা মিছিল করেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ কমিশনার আব্দুল কাহার আকন্দ স্বাক্ষরিত এ চাজশিট রোববার দুপুর সোয়া দুইটায় সিআইডির উপ-পরিদর্শক গোলাম মওলা ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে দাখিল করেন।

গ্রেনেড হামলার ৭ বছর ও বর্ধিত তদন্তের আদেশ হবার প্রায় ২ বছর পর এ সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হলো। বর্ধিত তদন্তে নতুন করে আরও ৮৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। প্রথম চার্জশিটে চার্জশিটে শেখ হাসিনা, জিল্লুর রহমান, আব্দুল জলিল, আব্দুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমুসহ ৪০৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছিল। আলামত জব্দ দেখানো হয়েছিল ৬৯ প্রকার। সম্পূরক চাজশিটে যাদের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে তারা হলেন, বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব) সাইফুল ইসলাম ডিউক, বিএনপি নেতা শাহ মোফাজ্জল হুসাইন কায়কোবাদ, বিএনপির ঢাকা মহানগর শাখার নেতা ও ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুর ইসলাম আরিফ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, গোয়েন্দা প্রধান মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ও ব্রিগেডিয়ার আব্দুর রহিম, ডিজিএফআইর সাবেক কর্মকর্তা লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জেহাদের (হুজি) বর্তমান প্রধান মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হুজি’র নায়েবে আমির মাওলানা মাওলানা আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির (আইডিপি) আহ্বায়ক মাওলানা আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা ওরফে জিএম, মাওলানা আব্দুর রউফ, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, বাবু ওরফে রাতুল বাবু, পুলিশের সাবেক ডিসি (পূর্ব) মো. ওবায়দুর রহমান, পুলিশের সাবেক ডিসি (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, সাবেক এএসপি আব্দুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, বিশেষ পুলিশ সুপার মো. রুহুল আমিন, তৎকালীন অতিরিক্ত আইজিপি (সিআইডি) খোদাবক্স চৌধুরী ও সাবেক মেজর জেনারেল এটিএম আমিন।

নামগুলি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন মামলার রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান। তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, কায়কোবাদসহ নতুন ৩০ আসামির মধ্যে ১৮ পলাতক আছেন। জামিনে আছেন বিএনপির ঢাকা মহানগর শাখার নেতা ও ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুর রহমান। অন্যারা কারাগারে আটক আছেন। প্রথম চার্জশীটের ২২ আসামির মধ্যে ১৪ জন কারাগারে ও ৮ জন পলাতক আছেন।

পলাতকদের মধ্যে মোরছালিন ও মোত্তাকিন ভারতের তিহার জেলে আটক আছেন। গ্রেনেড হামলার ৪৬ মাস পর ২০০৮ সালের ১১ জুন প্রথম চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। এ চার্জশিটে ২২ জনকে আসামি করা হয়। আরও ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হলেও ২ জন তদন্তকালে মারা যান এবং ৪ জনের সঠিক নাম ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের মামলার দায় হতে অব্যাহতির আবেদন করা হয়। এছাড়াও ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় গ্রেফতারকৃত জজ মিয়াসহ অপর ২০ জনকেও অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করা হয়।

প্রথম চার্জশিটে আসামি করা হয়, জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নান, মুফতি হান্নানের ভাই মুহিবুল্লাহ, মফিজুর রহমান ওরফে অভি, শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল, মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডাক্তার জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলুবুল, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শাহাদত উল্যাহ ওরফে জুয়েল, হোসাইন আহমেদ তামিম, মইনুদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, আরিফ হাসান সুমন, মো রফিকুল ইসলাম সবুজ, মোঃ উজ্জল ওরফে রতন, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, মোঃ খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বাবু, মোঃ ইকবাল, হাফেজ সেলিম হায়দার, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মোরসালিন ও মোত্তাকিনকে । চার্জশিট দাখিলের পর ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর মুফতি হান্নান সহ ২২ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলতে থাকার এক পর্যায়ে ৬১ জন সাক্ষী নেয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলাটি পুনরায় তদন্ত চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়। ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মো. মাসদার হোসেন বর্ধিত তদন্তের আবেদনটি মঞ্জুর করেন এবং ২ মাসের মধ্যে অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দানের জন্য পুলিশের আইজিকে নির্দেশ দেন। একই সাথে মামলাটি দ্রুত বিচার আইনের নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিচার কার্য সম্পন্ন করতে না পারায় মামলাটি ঢাকা মহানগর আদালতে পাঠিয়ে দেন।

বর্ধিত তদন্তকালে আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মাওলানা আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ও মামলার প্রথম চার্জশিটভুক্ত আসামি হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান। চলতি বছরের ৭ এপ্রিল মুফতি হান্নান দ্বিতীয় দফায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এতে এ হামলার ষড়যন্ত্র ও গ্রেনেড সরবরাহের বিষয়ে কয়েকজন নতুন আসামির নাম প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায়। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৩ জন নির্মমভাবে নিহত হন।

সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। আহত হন শতাধিত নেতাকর্মী। এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক ৩টি এজাহার দায়ের করেন। মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হন মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক আমির হোসেন। এরপর ডিবি ইন্সপেক্টর শামসুল ইসলাম, সিআইডির এএসপি আব্দুর রশীদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানের হাত ঘুরে সর্বশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হন সিআইডির এএসপি মো ফজলুল কবীর।

তিনিই প্রথম চার্জশিটটি দাখিল করেন। চার্জশিট দাখিলের পর জজ মিয়া নাটক সৃষ্টিকরে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টার অভিযোগ এনে সিআইডির এএসপি আব্দুর রশীদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানসহ ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। চার্জশিট দাখিলের পর মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু বাংলানিউজকে জানান, তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীকে হাওয়া ভবনে প্রশাসনিক সহায়তা ও পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। মূলত জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা ও আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শুন্য করার জন্যই এ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১১ Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।