যেন এ এক পুরান খেলা । ধুলো ওড়ে, মাটির পথে। জেনো তুমি,আমি হাটি এই পথে গতকাল রাতে নাসিমকে জিজ্ঞাসা করছিলাম পিচ্চি বোনটার কথা। অনেকক্ষণ কথা হলো নাসিমের সাথে। আগামী কাল তার মাস্টার্সের শেষ একজাম,দোয়া চাইলো,প্রাণ ভরে দোয়া করলাম।
সকালবেলা ঠিক ৯টার দিকে নাসিমের ফোন আসলো,ভেজা কণ্ঠে বলে উঠলো,”ভাইয়া,বোন মারা গেছে। ”আমার যেন বিশ্বাসই হলো না,কি বলে ও?এইটুকুন মেয়ে এত সহজেই চলে গেল!নাসিম বললো,”ভাইয়া,আমি বাড়ি যাচ্ছি”অথচ আগামী কাল ওর শেষ একজাম,আমি কিছু বলতে পারলাম না। শুধু ওর ইচ্ছে আর স্বপ্ন গুলোর
কথা বার বার মনে পড়লো। বোনটাকে নিয়ে তার কত স্বপ্ন,নিজের ক্যারিয়ার,বাবার স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছে গুলো,মায়ের কষ্ট মুছার ইচ্ছে।
নাসিম।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজমের ছাত্র। গত ১৪ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার মতো কেউ রেজাল্ট করেনি এই ডিপার্টমেন্টে। অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। মাস্টার্সেও একই রকম রেজাল্ট হওয়ার কথা। ওর বাবার খুব ইচ্ছে ছেলে স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে যাবে,বোনের ট্রিটমেন্টও হবে আরো ভালো কোথাও।
নাসিমও সেইভাবেই এগুচ্ছিল। আজ সব ওলট পালট হয়ে গেল।
নাসিম কি কাল একজাম দিতে পারবে?আমি জানিনা,আমি ওকে ফোন দেয়ার সাহস পাচ্ছিনা। কি বলব ওকে?কি বলে সান্ত্বনা দিব?
নাসিম কি এখন একজামের প্রিপারেশন নিচ্ছে?নাকি শিবচরে ছোট্ট বৃষ্টির বুকটা ঢেকে দিচ্ছে মাটি দিয়ে?জানি না। ওর ইচ্ছে আর স্বপ্ন গুলোর কথা বার বার আমার মনে পড়ছে।
চেনা নেই,জানা নেই অচেনা এই নাসিম আমার খুব প্রিয় মানুষ হয়ে উঠেছে গত এক বছরে। কি কারণে ও আমাকে এত পছন্দ করে,আমি নিজেও জানিনা,এখন সেটা জানতেও চাই না।
৪ বছরের বৃষ্টি। অটিজম রোগটা আগেই দানা বেধেছিল পিচ্চি এই মেয়েটার। বৃষ্টি,নাসিমের ছোট্ট আদরের বোন।
নাসিম একদিন আমায় বললো,”ভাইয়া,বোনের কষ্ট গুলা যদি আমার হতো,বোনটা যদি একবার আমায় “ভাইয়া”বলে ডাকতো,আহ!কী যে সুখ পেতাম!”...আমি আজকের মতোই ঐদিনও চুপ ছিলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।