আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ থেকে উঠে যাচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা

সংসদে উত্থাপনের ছয় দিনের মাথায় বহুল আলোচিত সংবিধান সংশোধনী বিলটি আজ পাস হতে যাচ্ছে। এর ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হবে। সংসদ নির্বাচন হবে দলীয় সরকারের অধীনে। সংশোধনী অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদের শেষ ৯০ দিন হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অর্থাৎ বর্তমান মন্ত্রিসভাই বহাল থাকবে।

মন্ত্রিসভা শুধু রুটিন (নিয়মিত) কাজ করবে। নির্বাচন পরিচালনার মূল কাজ করবে নির্বাচন কমিশন, তবে তা রাষ্ট্রপতির পরামর্শে। এই তিন মাসে সংসদ থাকলেও অধিবেশন বসবে না। সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) বিল, ২০১১ আজ বৃহস্পতিবার পাস হবে বিরোধী দল ছাড়াই। ২৫ জুন বিলটি সংসদে উত্থাপন করা হয়।

সংশোধনী অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। আগে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান ছিল। জরুরি বার্তা: ক্ষমতাসীন মহাজোটের সব সাংসদকে আজ বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে অধিবেশনে যোগ দিতে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে। সংসদের চিফ হুইপ আব্দুস শহীদের সই করা চিঠিতে বলা হয়, ‘৩০ জুন বৃহস্পতিবার সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) বিল পাস হবে। আপনারা অবশ্যই অবগত আছেন, সংবিধান সংশোধনে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হয়।

একই সঙ্গে সংবিধান সংশোধনের সময় বিভক্তি ভোটের সময় সদস্যদের উপস্থিতি জরুরি। সংবিধান সংশোধনের এ গুরুত্ব বিবেচনা করে মহাজোটের সব সদস্যকে যথাসময়ে সংসদে উপস্থিত হতে অনুরোধ করা যাচ্ছে। ’ জরুরি বার্তা পেয়ে সফর সংক্ষিপ্ত করে গতকাল বিকেলেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। ২ জুলাই তাঁর দেশে ফেরার কথা ছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি জরুরি বার্তা পেয়ে গত রাতেই কাজাখস্তান থেকে ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন।

আজ সকালে তাঁর ঢাকায় পৌঁছার কথা। মায়ের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে ছিলেন সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনিও জরুরি বার্তা পেয়ে গতকাল দেশে ফেরেন। এটি তড়িঘড়ির কাজ নয়: যোগাযোগ করা হলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন বলেন, সংবিধান সংশোধনী তড়িঘড়ির কাজ নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার ত্রুটির বিকল্প এ ব্যবস্থা বাদ দেওয়া নয়।

তাঁর মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের ব্যাপারে জনমতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার এখনো সময় আছে। এ বিষয়ে মানুষের মত নেওয়া উচিত। জেলায় জেলায় জনমত যাচাই করা উচিত। কামাল হোসেন বলেন, আদালত আরও দুই মেয়াদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে।

কারণ গণতন্ত্র এ পর্যায়ে পৌঁছায়নি যে রাজনৈতিক সরকারের কাছে নিরপেক্ষতা আশা করা যায়। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ বলেন, সংবিধান সংশোধনের জন্য জনমত দরকার। আর জনমত প্রতিবছর পরিবর্তিত হয়। বিলটি এ অধিবেশনে পাস না হলে কী হতো? তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা দ্রুত বাতিল করার তো কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। এ ব্যাপারে সময় নেওয়া যেত।

সংবিধান সংশোধনে দলীয় বা ব্যক্তিস্বার্থে নয়, দেশের স্বার্থ বিবেচনা করতে হবে। এ পরিস্থিতিতে আমরা কি রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে রক্ষা পাব? ইসির ক্ষমতা: একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ফলাফলের গেজেট প্রকাশের সময় পর্যন্ত কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের কোনো নির্দেশ দেওয়ার সুযোগ রহিত করা হয়েছে। ঋণখেলাপিসহ বিভিন্ন কারণে নির্বাচন কমিশন যেসব প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে, তাঁরা আর আদালতের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। অন্তর্বর্তী সময়ের তিন মাস প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের সব অনুষঙ্গ সংবিধানের ১১৮ থেকে ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলবে। সে মতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পুরো কর্তৃত্ব নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে।

বিলে ১২৫ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনসংক্রান্ত নতুন একটি দফা যুক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন এ সরকারব্যবস্থা বাহাত্তরের সংবিধানেই রয়েছে। সংবিধানের ১১৮ থেকে ১২৬ পর্যন্ত সব অনুচ্ছেদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। অর্থাৎ নির্বাচন করার অধিকার নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দল ছাড়াই এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী পাস হতে যাচ্ছে, এ সম্পর্কে ড. এম জহির বলেন, এখনো সময় আছে, বিএনপি কোনো একটা প্রস্তাব দিক।

তারা সংসদে যাক, হইচই করুক। তার পরও যদি সংশোধনী পাস হয়ে যায়, তখন দেখা যাবে। তিনি বলেন, ‘বিএনপি সংসদে না গেলে উপায় কী? তারা যদি যেত, আপত্তি দিতে পারত। যেহেতু তারা সংসদে যাচ্ছে না, তাহলে আওয়ামী লীগের অন্য কোনো বিকল্প নেই। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা কার্যকর সংসদ পেলাম না।

’ আপত্তি: বিএনপি এ বিলটি পাসের প্রক্রিয়ায় না থাকলেও বিলের পাঁচটি দফার ওপর মহাজোটের শরিক জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির পাঁচ সাংসদ আপত্তি জানিয়ে নোটিশ দিয়েছেন। তাঁরা হলেন রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, মঈন উদ্দীন খান বাদল, শাহ জিকরুল আহমেদ ও ফজলে হোসেন বাদশা। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ ও ন্যাপের নেত্রী আমেনা আহমেদ, গণতন্ত্রী পার্টির রুবি রহমান এবং স্বতন্ত্র সাংসদ ফজলুল আজিমও নোটিশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এসব নোটিশে সংবিধানে বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ বিলোপের প্রস্তাব করা হয়। তাঁরা নাগরিকত্ব এবং আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্বীকৃতিসংক্রান্ত অনুচ্ছেদও সংশোধনের সুপারিশ করেছেন।

এই সাত সাংসদ বিলের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তাঁরা জোটের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কারণ সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী দলের বিপক্ষে ভোট দিলে, দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সংসদে অনুপস্থিত থাকলে বা ভোটদানে বিরত থাকলে সেই সাংসদের সদস্যপদ থাকবে না। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী, আমেনা আহমেদ ও রুবি রহমান বিলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন না। কারণ তাঁরা আওয়ামী লীগের কোটায় সংরক্ষিত নারী আসনে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাংসদেরা নির্বাচনে জিতেছেন আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে।

যে কারণে গতকাল সংসদ সচিবালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কেউ কেউ এই বলে মত দিয়েছেন, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্যরা বিলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন না। মেনন ও ইনু গতকাল বিকেলে স্পিকার আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে পরামর্শ করেছেন। পরামর্শ শেষে মেনন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সংবিধান সংশোধন বিলের বিপক্ষে ভোট দিচ্ছি না। শুধু কয়েকটি অনুচ্ছেদের ব্যাপারে সুপারিশ করে নোটিশ দিচ্ছি। নোটিশ আমরা প্রত্যাহার করব না।

নোটিশের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যদি ভোটাভুটি হয়, আমরা আমাদের নোটিশের পক্ষে ভোট দেব। এতে সদস্যপদ চলে যাওয়ার প্রশ্ন আসে না। ’ বিল পাসের প্রক্রিয়া: সংবিধান সংশোধন বিল পাসের প্রক্রিয়াটি অন্য বিলের চেয়ে একটু ভিন্ন। সংসদের আইন প্রণয়ন কার্যাবলিতে বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করবেন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ। এরপর বিভক্তি ভোটে তা পাস করা হবে।

বিভক্তি ভোট নেওয়ারও সব প্রস্তুতি শেষ করেছে সংসদ সচিবালয়। ‘হ্যাঁ’ ভোটদানকারীদের জন্য চারটি ও ‘না’ ভোটদানকারীদের জন্য একটি লবি নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমে বিলের সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে পাস হবে। এরপর তা বিভক্তি ভোটে নিষ্পত্তি করা হবে। পরে পূর্ণাঙ্গ বিলটিও প্রথমে কণ্ঠভোটে এবং তারপর বিভক্তি ভোটে পাস করা হবে।

স্পিকার বিভক্তি ভোটের ঘোষণা দিয়ে দুই মিনিট ঘণ্টা বাজাবেন। এ সময় সাংসদেরা তাঁদের জন্য নির্ধারিত লবিতে চলে যাবেন। এ সময় লবির বাইরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। সংসদ সচিবালয়ের চার কর্মকর্তা এ ভোটের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। পরে স্পিকার ভোটের ফলাফল ঘোষণা করবেন।

প্রতিবেদন উপস্থাপন: সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) বিল, ২০১১ সম্পর্কে আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত কমিটির প্রতিবেদন গতকাল জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হয়। বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর সভাপতিত্বে গতকাল সকালে কমিটির সদস্য ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯টি সংশোধনীসহ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মহাজোটের অধিকাংশ সাংসদ উপস্থিত ছিলেন। কিছুক্ষণ পর সংসদে যোগ দিয়ে কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এ প্রতিবেদনে সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। ref:- ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।