এখানে বিনামূল্যে বিশ্ব-বিখ্যাত মাইন্ড বৈজ্ঞানিক দ্বারা মাইন্ড রিলেটেড এনি প্রবলেম অতি যত্ন সহকারে সলভ করা হয় । গণমাধ্যম, বাণিজ্য ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি
মুক্তচিন্তা, মুন্সীগঞ্জ, সিরাজুল ইসলাম চৌ. |
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
কেবল যে লক্ষ্যই থাকে তা নয়, বাণিজ্যের মধ্যে একটি দৈত্যও বসবাস করে। দৈত্য-দানবেরা সাধারণত নিষ্ঠুর হয়; এই দৈত্যটিও নিষ্ঠুর বটে; কিন্তু অন্য দৈত্যরা তবু ঘুমটুম দেয়, এই দানব একেবারে নিঘর্ুম। তার ক্ষুধাও প্রচণ্ড। ক্রেতা, উৎপাদক, বিক্রেতা, প্রতিদ্বন্দ্বী_ সবকিছুকে গ্রাস করে ফেলতে চায়।
তার অভিলাষ একচ্ছত্র হবে।
ওদিকে গণমাধ্যমকে যে আমরা আদর করে বলি স্বাধীন হতে সে কাজ কি ও বেচারার পক্ষে করা সম্ভব? যতই যা হোক, হোক না কেন প্রকাণ্ড রূপে ক্ষমতাশালী, তবু সে তো মাধ্যমেই বটে, স্বনিয়ন্ত্রিত নয়, নিরপেক্ষ যে হবে তার উপায় নেই। ইলেকট্রনিকই হোক কিংবা প্রিন্টই হোক, গণমাধ্যম ক্রীতদাস বটে। ওই দৈত্যেরই ক্রীতদাস, যার নাম ব্যবসা-বাণিজ্য। বেতার-টেলিভিশন, সংবাদপত্র, এদের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা তাই অলীক মায়া ভিন্ন অন্য কিছু নয়।
যদি নিরপেক্ষতার ভান করে, ভঙ্গি করে স্বাধীনতার তাহলে সেও এক ধরনের ব্যবসা বটে; মুনাফা বৃদ্ধির চাতুর্য। গণমাধ্যমের কমর্ীরা চাইতে পারেন স্বাধীন হবেন, কিন্তু গণমাধ্যম নিজে তা চায় না।
বাণিজ্যের দাপট নতুন নয়, পুঁজির সেবক হিসেবে সে যত্রতত্র গিয়ে হানা দিয়েছে। স্থল, জল, আকাশ সর্বত্র তার গতিবিধি। সে দখল করে, লুটপাট চালায়, যুদ্ধ বাধায়।
স্থানীয় যুদ্ধ বহুবার হয়েছে। বিশ্বযুদ্ধও বাধিয়ে ছেড়েছে। এখন আর বিশ্বযুদ্ধের দরকার নেই, এখন বহুজাতিক কোম্পানিগুলো মিলেমিশে ব্যবসা করছে এবং পুঁজিবাদী বিশ্বের যে প্রধান সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্য পুণ্য ও প্রায় পূর্ণরূপে বিশ্বময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দোকানের জিনিসপত্রের যেমন মোড়ক থাকে, বাণিজ্যেরও তেমন আবরণ থাকলে ভাল। সেই আবরণ সে নিয়েছে বৈকি।
এককালে বলত সভ্যতার আলো ছড়াচ্ছে, এখন আর সেটা বলে না; না বললেও চলে, কেননা পৃথিবী ইতিমধ্যেই যথেষ্ট সভ্য হয়ে উঠেছে; এখন বলছে বর্বরেরা সন্ত্রাস তৈরি করছে, তাই সন্ত্রাসের দ্বারা আক্রান্ত বিশ্বসভ্যতাকে রক্ষা করার জন্য ক্রুসেড আবশ্যক এবং সেই ধর্মযুদ্ধ তারা চালিয়ে যাবে, যেখানে এবং যখন দরকার সেখানে গিয়ে হানা দেবে। দিচ্ছেও। সবচেয়ে ভাল ব্যবসা হচ্ছে সমরাস্ত্রের; পুঁজিবাদীরা সন্ত্রাস দমনের অজুহাতে সমরাস্ত্র বিক্রি করছে। পৃথিবীর যেখানে যা সম্পদ আছে তা দখল করার পুরনো বাণিজ্যিক পদ্ধতি আসলে ছিল লুণ্ঠনেরই ছদ্মবেশ, ওই লুণ্ঠন এখন আরও ব্যাপক ও হিংস্র হয়ে উঠেছে। এককালে সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব ছিল, তারা ধমকটমক দিত, এখন সেও নেই; ফলে বাণিজ্য দৈত্যের দৌরাত্দ্য অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়ছে।
গণমাধ্যম এখন বিজ্ঞাপনের বাহন; কেবল পণ্যের বিজ্ঞাপনের নয়, বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে ভোগবাদিতা তার বিজ্ঞাপনেরও। বাণিজ্য আছে সংস্কৃতিও আছে; রয়েছে দু’য়ের মধ্যে সম্পর্কও। বাণিজ্যের নিজেরও যে একটা সংস্কৃতি নেই তা নয়; আছে। ব্যক্তির, গোষ্ঠীর, শ্রেণীর সকলেরই ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি থাকতে পারে, থাকেও। কিন্তু গুণগত বৈশিষ্ট্যে চিহ্নিত সংস্কৃতির অস্তিত্ব ও কার্যকারিতাও সম্ভবপর বৈকি।
যাকে আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বলি সেটা নিজস্ব বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। পারস্পরিক সহনশীলতা এবং সে সঙ্গে সহমর্মিতার একটা ভারসাম্য সেই সংস্কৃতিতে অবশ্যই প্রত্যাশিত; কিন্তু সেটাই সব কথা নয়। ওই সংস্কৃতিতে থাকবে অধিকার ও সুযোগের সাম্য; থাকবে মানবিক অধিকারগুলোর প্রতিষ্ঠা। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ দেখা যাবে। সর্বোপরি থাকবে সৃষ্টিশীলতা, যা চলমান সংস্কৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য।
এসব নিয়েই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিদ্যমানতা সম্ভবপর, নইলে নয়।
বলা বাহুল্য বাণিজ্য এই সংস্কৃতির মিত্র তো নয়ই, বরঞ্চ প্রকৃষ্ট শত্রু। কেননা বাণিজ্য সহনশীলতার জায়গায় স্থাপন করে লুণ্ঠনকে; সহর্মিতাতে তো নয়ই, তার আস্থা মানুষের প্রতি অমানবিক উদাসীনতায়। সব সংস্কৃতিরই একটি স্থানীয় রূপ থাকে, থাকে দাঁড়ানোর একটি নিজস্ব জায়গা এবং স্বাতন্ত্র্য। বাণিজ্য এসবে বিশ্বাস করে না।
বাণিজ্য হচ্ছে এককেন্দ্রিক, পরিধিতিতে তার তৎপরতা থাকে, কিন্তু তার প্রধান দপ্তর এক জায়গায়। রাজধানীতে। বাণিজ্যে বিশ্বায়ন আছে, অর্থাৎ বিশ্বের ওপর নিজেকে চাপিয়ে দেয়াটা রয়েছে, কোন আন্তর্জাতিকতা নেই, অর্থাৎ বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা নেই। বাণিজ্য চায় সবকিছুকে পণ্যে পরিণত করতে, ওই পণ্যায়ন সৃষ্টিতে বিশ্বাস করে না, আস্থা রাখে পণ্য উৎপাদনে। মুনাফা বোঝে, মুনাফা সংগ্রহের কাজ চালায়, আবেগ-অনুভূতির গভীরতা ও সূক্ষ্মতাকে স্পষ্ট করার আবশ্যকতাকে পদদলিত করে।
২
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কর্মকা নির্মমভাবে সীমিত; কিন্তু ব্যবসা ঠিকই আছে। উৎপাদন কম, ব্যবসা বেশি। ব্যবসায়ীরা টাকার মালিক, তারা রাজনীতি থেকে সুবিধা নেয় এবং রাজনীতিকে প্রভাবিত করে। আমলাতন্ত্র এখানে খুবই শক্তিশালী কিন্তু আমলারা ব্যবসায়ীদের সহযোগী হয়ে আরাম পায়।
ব্যবসা জিনিসটা এখন যে কতটা সুবিস্তৃত ও শক্তিশালী সেটা গণমাধ্যমের হালহকিকতের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, অন্য প্রমাণের অপেক্ষা বড় একটা রাখে না।
বেসরকারি টেলিভিশন তো পুরোপুরিই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনও বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে আগ্রহী; আরও বড় সত্য যেটা তা হলো এই যে, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও বেতার উভয়েরই প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করা, সে হিসেবে তারা নিজেরাই বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান আসলে।
খবরের কাগজের বেলায়ও সত্য হচ্ছে মুনাফা করা, যারা তা পারে না তারা যে প্রকাশিত হয় তার পেছনে পত্রিকা মালিকের অন্যবিধ ব্যবসায়িক স্বার্থ তৎপর থাকে বৈকি; নইলে থেমে যেত। এখন অধিকাংশ পত্রিকাই রঙিন, সেটাও নন্দনতাত্তি্বকতার অনুরোধে যে ঘটেছে তা নয়। রঙিন হওয়ার কারণ হচ্ছে বাণিজ্যিক বিবেচনা; রঙচঙে না হলে বিক্রি হবে না, এই বোধই তাদের রঙিন করছে। বড় বড় কাগজ যেগুলো তাদের প্রথম পৃষ্ঠাতেও এখন বিজ্ঞাপনে কুমির হা করে বসে আছে, অনেকটাই গিলে ফেলেছে, কিছুটা ছাড় দিয়েছে পাছে খবরের কাগজ হিসেবে সংবাদপত্রের পরিচয়টা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
প্রথম পৃষ্ঠায় কয়েকটা বড় বড় শিরোনাম কোন রকমে নিজেদের অস্তিত্ব জানায়, নইলে সবটাই বিজ্ঞাপন। যেসব সাপ্তাহিক পত্রিকা ঈদে ও পহেলা বৈশাখে বিশেষ সংখ্যা বের করে তাদের অবস্থাও কম করুণ নয়। বিশেষ সংখ্যায় বিজ্ঞাপন তো থাকবেই; কিন্তু প্রথম মলাটটার প্রায় সবটাই বিজ্ঞাপনের প্লাবণে আচ্ছ্বাদিত হয়ে যাবে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। কোন কোন পত্রিকা আবার পত্রিকার সঙ্গে টুথপেস্ট, গুঁড়ো দুধ ইত্যাদি সরবরাহ করছে বিজ্ঞাপিত পণ্যের নমুনা হিসেবে। ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এই রকম যে, পত্রিকার জন্য বিজ্ঞাপন নয়, বিজ্ঞাপনের জন্যই পত্রিকা।
ব্যাপারটা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয় মোটেই, এটা হচ্ছে বিদ্যমান বাস্তবতার নিদর্শন মাত্র।
সবকিছুতেই এখন ব্যবসা ঢুকে পড়েছে। সদম্ভে। ওকালতি সব সময়েই ব্যবসা ছিল এটা ঠিক, কিন্তু এখন যেমন নির্মম ব্যবসা তেমনটা কখনওই ছিল না। চিকিৎসা যে এক ধরনের সেবা সেই ধারণাটা প্রবল না হোক অন্তত প্রবহমান ছিল আমাদের সমাজে।
এখন নেই। চিকিৎসা এখন পুরোপুরি ব্যবসাতে পরিণত হয়েছে। চিকিৎসকের সুনাম ও প্রসার রোগ সারানোর সাফল্য বা নতুন চিকিৎসক সৃষ্টিতে ভূমিকার ওপর নির্ভর করে না, পুরোপুরিই দাঁড়িয়ে থাকে অর্থোপার্জনের দক্ষতার ওপর। শিক্ষা ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। সেই শিক্ষকই সফল, যার অনেক ছাত্র আছে, ক্লাস রুমে নয়, ক্লাশ রুমের বাইরে।
বাণিজ্য ভেজাল নিয়ে এসেছে। পণ্যে ভেজাল, পেশাতেও ভেজাল। সুস্থ সংস্কৃতির প্রাণশক্তি হচ্ছে সৃষ্টিশীলতা, বাণিজ্য সেখানে গিয়ে আঘাত করে, করছেও।
আমাদের সংস্কৃতিতে এখন যে একটি বন্ধ্যাত্ব বিরাজ করছে সেটা প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। এই বন্ধ্যাত্বের কারণ একাধিক।
একটি কারণ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যে বিত্তবান শ্রেণী নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় রয়েছে তার ভেতরকার বন্ধ্যাত্ব। এই শ্রেণী নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নেই। তার মধ্যে দেশপ্রেম কমছে। সে মাতৃভাষার চেয়ে ইংরেজি ভাষাকে অধিক মূল্যবান মনে করে। পুঁজিবাদের কাছে তার আত্দসমর্পণটা পুরোমাত্রায় ঘটেছে।
এসব কারণে বিত্তবান শ্রেণী সৃষ্টিশীল হতে পারছে না। সৃষ্টির কতগুলো শর্ত আছে। একটি শর্ত আনন্দ, যা বিনোদন থেকে আলাদা। এখন সর্বত্র বিনোদন দেখি, আনন্দ বড়ই কোণঠাসা। সৃষ্টির অন্য শর্ত হচ্ছে ঐতিহ্যর সঙ্গে যোগ।
বিত্তবানরা এই যোগটা হারিয়ে ফেলছে; ফলে তারা পরগাছায় পরিণত হচ্ছে। পরগাছা অন্যের কাজ আত্দসাৎ করে, নিজে সে কর্মবিমুখ। কর্মবিমুখেরা সৃজনশীল নয়, ছিল না কখনও, হবেও না ভবিষ্যতে। বন্ধ্যাত্ব তৈরি হচ্ছে আরও এক কারণে। সেটা হলো সাম্রাজ্যবাদী লুণ্ঠন।
সাম্রাজ্যবাদীরা বাজার দখল করে নিচ্ছে। ঋণ গেলাতে বাধ্য করছে এবং আমাদের জন্য ভরসা করার যে জায়গাগুলো আছে তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যে গ্যাস তেল, বিদু্যৎ ও বন্দর তাদেরও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে চাচ্ছে। আমাদের উৎপাদনকারীরা বাজার পাচ্ছে না। মার খাচ্ছে। বেকারত্ব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং ওই বেকারত্বের কারণে সন্ত্রাস, মাদকাসক্তি, ধর্ষণ এসব বাড়ছে।
সমাজে তখন ভীষণ অস্থিরতা। এই অস্থিরতা পুঁজি বিনিয়োগের জন্য অনুকূল নয়। বিনিয়োগ ঘটছেও না। অনেকেই এখন সন্ত্রাসী; বাদবাকিরা হতাশ। এ অবস্থায় সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রাণচাঞ্চল্য দেখে দেবে এই আশাটা বাতুলতা মাত্র।
সমাজের মানুষ এ ওর বিরুদ্ধে লড়ছে। ষড়যন্ত্র, আড্ডা, পরনিন্দা, পরস্পরকে আক্রমণ করা সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠছে। বিনোদনমুখিতা কত দূর গেছে তার প্রমাণ লিপিবদ্ধ হচ্ছে ধর্ষণের ঘটনায়। পৈশাচিক উল্লাসে গণধর্ষণ চলছে। ওই কাজ পাকিস্তানি দসু্যরা শুরু করে একাত্তর সালে; এখন বাঙালি যুবকরা তা চালিয়ে যাচ্ছে স্বদেশী মা বোনদের ওপর।
সবটাই বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ।
অধপতনের খবরগুলো গণমাধ্যমে আসে। কিন্তু কারণ কি, প্রতিকার কোথায় সে নিয়ে আলোচনা দেখা যায় না। রমরমা সংবাদ পাঠক দর্শক উৎসাহভরে খায়, তাতে ব্যবসা জমে কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা চটকদার হবে এমন ভরসা নেই, তারা তাই উপেক্ষিত থাকে। বোঝা যায় গণমাধ্যম ব্যবসায়ের সেবক, সমাজের উপকার নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই।
রোগের বিজ্ঞাপনে রোগ বাড়ে, প্রতিকারের সুবিধা হয় না, প্রতিষেধকের তো হদিশই থাকে না।
কিন্তু গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি তো আমরা চাই। সেই লক্ষ্যে তো লড়াই-সংগ্রাম চলছে। এই সংগ্রাম সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। সাম্রাজ্যবাদের অধীনে রয়েছে পুঁজিবাদী অর্থনীতি ও মূল্যবোধ।
পুঁজিবাদ বৈষম্য বৃদ্ধি করে, সব কিছুকে পণ্যে পরিণত করে ছাড়ে এবং মুনাফা ছাড়া আর কিছু বোঝে না। একদিকে দরিদ্র বিশ্বকে সে আরও দরিদ্র করে, অন্যদিকে দরিদ্রদের আত্দঘাতী কলহে মাতিয়ে রাখে, যেমন আমাদের রাখছে।
গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য আকাঙ্ক্ষাটা আমাদের মধ্যে রয়েছে। রয়েছে লড়াই-সংগ্রামের অভিজ্ঞতা ও চেতনা। এরা মূল্যহীন নয়।
প্রয়োজন তাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়েছে। এক ক্ষেত্রে নয়, সর্বক্ষেত্রে, রাজনীতি থেকে শুরু করে পারিবারিক জীবন পর্যন্ত সকল স্তরে নেতৃত্বের ব্যর্থতার করুণ ইতিহাস নিত্যদিন প্রসারিত হচ্ছে। এক হিসাবে নেতৃত্বকে ব্যর্থও বলা যায় না। কেননা বিদ্যমান ব্যবস্থা ও পরিস্থিতিতে এই নেতৃত্বের পক্ষে যেটা করা স্বাভাবিক তারা সেটাই করছে এবং করতে থাকবে।
ভেরেন্ডা বৃক্ষে তো আম ফলবে না।
প্রয়োজন নতুন নেতৃত্বের। এই নেতৃত্ব হবে একাধারে দেশপ্রেমিক ও গণতন্ত্রকামী। কেবল দেশপ্রেম নয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যও সামনে থাকা চাই। এই নেতৃত্বের মধ্যে যেমন সাংগঠনিকতা থাকবে তেমনি থাকবে স্বতঃস্ফূর্ততা।
অতীতে আমরা এই দু’টি গুণকে একত্রে পাইনি। ‘যারা ভালভাবে সংগঠিত তারা হয়ে পড়েছে আমলাতান্ত্রিক; অন্যদিকে যারা স্বতঃস্ফূর্ত তারা সুসংগঠিত ছিল না। মুক্তিযুদ্ধেও আমরা স্বতঃস্ফূর্ত ছিলাম বটে। কিন্তুু না ছিল প্রস্তুতি, না ছিল সাংগঠনিকতা। নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে দেশপ্রেম কিছুটা ছিল, কিন্তু গণতন্ত্রকামিতা একেবারেই ছিল না।
একাত্তরের পর ওই নেতৃত্বের মধ্যে দেশপ্রেম ও গণতন্ত্রমুখিতা দু’য়েরই অভাব দেখা দিয়েছে। আরও পরে আমরা সরকারের বদল দেখেছি, কিন্তু নেতৃত্বের চরিত্রে কোন পরিবর্তন দেখিনি, যদি না দেশপ্রেম ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসে ক্রমবর্ধমান ঘাটতিকে পরিবর্তন বলি।
সংস্কৃতির ব্যাপারটা খুবই জরুরি। সংস্কৃতি সভ্যতার চেয়েও বড়। কেননা সংস্কৃতিতে আমাদের সমগ্র পরিচয় প্রতিফলিত, সভ্যতায় প্রতিফলিত হয় শুধু অর্জনগুলো।
মুক্তির জন্য যে চেষ্টা সেটা সংস্কৃতির মধ্যে সংরক্ষিত থাকে এবং সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেয়। সংস্কৃতির মুক্তি ও মানুষের মুক্তি একই ব্যাপার আসলে।
এই মুক্তির ক্ষেত্রে ব্যবসাকে মিত্র হিসেবে পাওয়া যাবে না, তা ব্যবসায়ীরা সংস্কৃতি কমর্ীদের ব্যক্তিগতভাবে যত চাঁদাই দিন না কেন। ভুল ব্যাপারটা হচ্ছে আন্দোলন। আন্দোলনই নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করবে এবং মানুষকে মানবিক হতে সাহায্য করবে।
গণমাধ্যম ব্যবসার দাস, আন্দোলন তার জন্য মিত্রপক্ষ নয়, শত্রুপক্ষ বটে। আন্দোলনের খবর তাই এখনকার গণমাধ্যমে আসে না, আসবার কথাও নেই। তাদের কাজ আন্দোলনকে উপেক্ষা করা, না পারলে বিপথগামী করা। আন্দোলনের স্বার্থে তাই বিকল্প গণমাধ্যমের প্রয়োজন হবে। আন্দোলন যদি বেগবান হয় তাহলে প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমও অবশ্য সাড়া দেবে, কেননা দেখবে খবর চেপে রাখলে লোকে ক্ষেপে উঠছে, ক্রেতা তো কমবেই, জনগণের ক্রোধ বাড়ছে।
ব্যবসায়ীরা ক্রোধকে খুবই সমীহ করে।
গণমাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের কতর্ৃত্ব গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য বিপদের লক্ষণ যেমন, তেমনি প্রমাণও বটে। বিপদটা বিশেষ করে এই জন্য যে, গণমাধ্যম ভান করে নিরপেক্ষতার অর্থাৎ সত্যবাদিতার, অথচ সর্বক্ষণ যা করতে থাকে তা হলো প্রকৃত সত্যকে আড়াল করা এবং মিথ্যাকে সত্য বলে প্রচার করা। সবটাই ঘটে প্রভুর স্বার্থে। বাণিজ্য নিজে একটি দানব ঠিকই, কিন্তু সে আবার ভৃত্যও।
মালিকের। আর ওই মালিকটি আর যাই চাক, যথার্থ গণতন্ত্র চায় না, যদিও গণতন্ত্রের কথা বলতে থাকে এবং রটিয়ে দেয় যে বাজারের মুক্তি মানেই গণতন্ত্রের মুক্তি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।