আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টুন-টুনা-টুন

বউটুবান ছোট্ট একটা গ্রামের পাশে ছোট্ট একটা বন। এ বনে টোনাটুনির সংসার। বেশিদিন হয়নি সংসার বেধেছে ওরা। খুব সুখে শান্তিতে দিন কাটছে ওদের। একজন চোখের আড়াল হলে আরেকজন টই টই পঁই পঁই করে খুঁজে ফিরে; না পেলে অস্থির হয়ে ওঠে।

আর পেলেও রাজ্যের মান-অভিমান চলে এদের মধ্যে। একজন রাগ করলে আরেকজন আদর করে রাগ ভাংগায়। টোনা একটা আধার পেলে চঞ্চল হয়ে উড়ে চলে আসে টুনির কাছে। একা একা খায় না। দু’জনে ভাগ করে খায়।

টুনিও টোনাকে রেখে কিচছু খায় না। একজনের সুখে-দুখে আরেকজন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। ওদের মধ্যে এত আনন্দ-হাসি, মিল-মহব্বত আর ভালবাসার জোর দেখে বনের অন্য পাখিরা আড়ালে-আবডালে চোখ টাটায়; হিংসা করে। তারা ইনিয়ে-বিনিয়ে আরে-ঠারে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে- ”এ বনে আর বুঝি কেউ বিয়ে-হাতা করেনি গো; শুধু ওই বউপাগলা টোনা আর স্বামীপাগলী টুনিই বুঝি করেছে। দেখনা কত হাউস-আহ্লাদ আর রং ঢং ওদের।

এত ভাব-তামশা ভালো না গো, ভালো না। এসব দেখে গা জ্বলে। ” কথাগুলো টোনা-টুনির কানেও উঠেছে। দুই টোনা গেছে খাবারের খোঁজে। এদিকে টুনি তো রাগে-কষ্টে গজগজ করছে।

টুনি অভিমানে নিজেকে বলছে, ”ঠিকই তো, সবাই বিয়ে করে খালি ঝগড়া-ফ্যাসাদ আর মারামারি করার জন্য, আমরাই বা এত রং ঢং করছি কেন? যদি রোজ রোজ ঝগড়া করতাম, স্বামী-স্ত্রীতে চুল টানাটানি করতাম তা হলে আর কষ্ট হতো না কারো; সবাই খুশি হতো, পরাণ ঠান্ডা হতো”-কথাগুলো বলেই চিকন ডালে ঠোঁট ঘষে রাগে ছটফট করতে লাগল টুনি। এমন সময় টোনা একটা পোকা নিয়ে এসে টুনির গা ঘেষে বসে হাঁপাতে লাগল। টুনি কিছু না বলে তিনটা লাফে সরে গিয়ে অন্য একটা ডালে গিয়ে বসল। টুনির এ আচরণে টোনা অবাক হয়ে বলল, ”ওম্মা, তুমি এমন করছ কেন গো! কোন ভুল-টুল করেছি আমি! কত কষ্ট করে একটা পোকা ধরে নিয়ে এলাম দু’ জনে একসাথে খাব বলে, আর তুমি মুখটা কালো করে দূরে সরে গেলে যে!” টুনি চোখ লাল করে সমস্ত শরীর ঝাঁকিয়ে ত্যাজ দেখিয়ে বলছে, ”এত ঢংঢাং আর ভাল লাগে না। এখন থেকে দু’জন ধুমছে ঝগড়া করব, চুলোচুলি করে মাথার চুল ছিঁড়ে রক্ত ঝরাব।

থুতু ছিটাছিটি করব। বকাঝকা-করব, তারপর হাতাহাতি ও পরে করব মারামারি। তারপরে ডোবার কাদা-জলে গিয়ে কাদা মাখামাখি করব। আমাদের ঝগড়া দেখে বনের সবাই হাসবে, গাইবে, আনন্দ-ফূর্তি করবে, নাচবে। তবু বনের সবাই খুশি হোক, তৃপ্তি পাক।

তবু শান্তিতে ঘুমাক তারা। এত হিংসা আর ফিসফিসানি ভাল লাগে না আমার। ” তিন টোনা মুচকি হেসে বলে, ”ব্যস, ব্যস, ব্যস আর বলতে হবে না টুনি। বুঝতে পেরেছি আমি। তোমার সুখ-শান্তি দেখে ওরা হিংসার আগুনে পুড়ছে আর তুমি এদের হিংসা দেখে রাগে ফোঁসফাঁস করছ।

নাহ্! বোকা কোথাকার। হিংসার আগুন কখখনো অন্যকে পোড়ায় না; যে হিংসা লালন করে তাকেই পোড়ে। তুমি জান না টুনি, আমি কিন্তু ওদের হিংসা-বিদ্বেষের কথা শুনে হেভী খুশি হয়েছি। এদের হিংসা আমার মনে ভালোবাসার জোর বাড়িয়ে দিয়েছে। আমার চলাফেরা, ভাব-নমূনা দেখে বুঝতে পারছ না, দিনে দিনে আমি যে তোমাকে কত ভালোবাসি, আদর-সোহাগ করি! আমার যে কী ভাল লাগছে না টুনি তা তোমাকে বলে বোঝাতে পারছি না!” টুনি চোখ মুছে গালের টোল আর অভিমান কমিয়ে টোনার কথাগুলো আবার মন দিয়ে শোনার জন্য মুখ ফেরাল।

টোনা বলল, ”যারা হিংসা করে তারা শুধু হিংসাই করতে পারে, হিংসার কারণ হতে পারে না। যারা অন্যের সমালোচনা করে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে না; পেছনে পড়ে থাকে। তুমি বুঝেছ উল্টোটি, তাই তোমার এত কষ্ট লাগছে। ” টোনা আগ বাড়িয়ে টুনির কাছে গিয়ে দুষ্টুমি করে বলছে, ”আরে, তোমার আমার ভালবাসার জোর যে কত তা পরিমাপের জন্য তো কোন বাটখারা নেই। এখন হিংসুকদের হিংসার আগুন দিয়ে ভালোবাসার গভীরতা অনুভব করলাম আর কি।

”-এ কথা বলে টোনাটুনি আনন্দে টুন-টুনা-টুন শব্দ করে নেচে উঠল। তাদের টুন-টুনা-টুন শব্দ হিংসাকাতর পাখিদের অন্তরাত্না বিদীর্ণ করে ভালোবাসার জয়ধ্বনি ঘোষণা করল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।