আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৭ (সাত) টাকার কচু ৬০ টাকায় বিক্রি! কেন এতো আকাশ-পাতাল দামে বিক্রি হচ্ছে এ নিয়ে সরকারের কোন মাথা ব্যাথা নেই

মেহেরপুর থেকে প্রতিদিন ৫০-৬০ ট্রাক সবজি ও কাঁচা পণ্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। আর এই ব্যবসাকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে ট্রাকশ্রমিক ও আড়তদার ব্যবসায়ীদের দুটি চক্র। এই চক্র দুটির কারণে কৃষকের কাছ থেকে কেনা সাত টাকার এক কিলোগ্রাম (কেজি) কচু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। সরেজমিনে সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের বুড়িপোতা ও শালিকা গ্রামে দেখা গেছে, চাষিরা মাঠ থেকে শসা, বরবটি ও ঝিঙে তুলে বিক্রির জন্য স্তূপ করছেন। এ সময় শালিকা গ্রামের কৃষক আকালি খাঁ বলেন, ‘একুন শহুরে গিই শবজি বিক্রি করতি দেয় না।

তাইতি মহাজনদের লোক দুলাল এসি শবজি নি যায়। ’ কৃষক গোলাম মুহাম্মদ বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতি শসা বুনিছিলাম। কেন্তু শসা সরাসরি ঢাকায় বিক্রি করতি পারনু না। শহরের ব্যবসায়ীদের মাধুমে তা পাঠাতি হলু। তাই খরচ পড়লু বেশি।

’ কৃষক তজুর আলী বলেন, ‘এজেন্টদের কাছি কচু বিক্রি করনু সাত টাকা কেজি দরে। আর সেই কচু বাজারে শহুরের ক্রেতাদের কাছে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছি। এ জন্য দায়ী কারা?’ প্রায় একই ধরনের অভিযোগ অন্য কৃষকেরও। মেহেরপুর বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির জন্য প্রভাবশালী আড়তদার ও পরিবহন নেতারা দায়ী। তবে জেলা ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়ন ও জেলা ব্যবসায়ী সমিতি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য একে অপরকে দোষারোপ করেছে।

ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। মেহেরপুর থেকে ঢাকা কারওয়ান বাজার পর্যন্ত কাঁচা পণ্যবোঝাই একটি ট্রাকের ভাড়া সাড়ে ১৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে মালিক পায় পাঁচ হাজার টাকা। বাকি অর্থ খরচ হয় পথেই। অথচ মহাজন ব্যবসায়ীরা এক ট্রাক পণ্য ঢাকা পাঠাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কৃষকের কাছ থেকে ২৬-২৭ হাজার টাকা আদায় করেন।

’ জেলা ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ট্রাকচালক মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘মেহেরপুর থেকে যমুনা সেতু হয়ে একটি ট্রাক ঢাকা পৌঁছাতে হলে ঈশ্বরদী হাইওয়ে, বনপাড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর চৌরাস্তা, টঙ্গী, সাভার বাইপেল, সাভার ও গাবতলী বেড়িবাঁধ এলাকার হাইওয়ে টহল পুলিশ ও সার্জনকে ১০০ থেকে ৩০০ করে মোট সাড়ে ২৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। অন্যথায় পণ্যটি পথে পথে বিলম্বের কারণে পচে যাওয়ার পর ঢাকা গিয়ে পৌঁছায়। ’ মেহেরপুর তহবাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ বলেন, ‘ট্রাকের ভাড়া পরিশোধের পর ট্রাকপ্রতি শ্রমিকনেতা, চালক, মালিক, শ্রমিকসর্দার ও বন্দোবস্তকারীকে প্রায় দুই হাহার ৬০০ টাকা বাড়তি চাঁদা দিতে হয়। তবেই ট্রাকের চাকা ঘুরে। পরিবহনে দেরি হলে কাঁচা পণ্য পচে যাবে—এ আশঙ্কায় সবাই চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছি।

’ জেলা কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবু হানিফ বলেন, ‘পণ্য পরিবহনে ট্রাকশ্রমিক ও মালিকদের বাড়তি টাকা দিতে গিয়ে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি যায়। ’ গত ১৩ জুন ট্রাকশ্রমিকেরা ট্রাকপ্রতি চাঁদা এক হাজার ৩০০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৯০০ টাকা করায় ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করেন এবং ট্রাকে পণ্য আনা-নেওয়া বন্ধ করে দেন। এ ঘটনার পর দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও সংবাদ সম্মেলনে উভয় পক্ষের চাঁদাবাজির মাধ্যমে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির তথ্য ফাঁস হয়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একটি ট্রাকে নয় থেকে ১৩ টন মাল ধরে। কৃষকের দুই টাকা কেজি দরের নয় মেট্রিক টন (এক ট্রাক) শসার মূল্য হয় ১৮ হাজার টাকা।

অথচ এই এক ট্রাক পণ্য ঢাকা পৌঁছাতে ব্যয় দেখানো হচ্ছে ৪৫ হাজার টাকা। জেলা প্রশাসক বেনজামিন হেমব্রম বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ নেব। ’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।