ভিন্য চোখে অন্য আলো কাল বিকেল পাঁচটায় বটতলার সেই জায়গায় দেখা কর। আমি তমার অপেক্ষায় থাকবো।
ইতি তোমার সুমন
কলেজ থেকে ফেরার পথে সুমন ফারজানার সামনে চিঠিটা ফেলে যায় সাইকেল মাড়িয়ে। এদিক ওদিক তাকিয়ে ফারজানা সেটি তুলে নেয় দ্রুত।
বিকেল পাঁচটা।
গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে পাশে বসে পরে ফারজানা। জায়গাটা এমন যে আস পাশ থেকে কারো দেখার উপায় নেই। নিরিবিলি কথা বলার জন্য এ জায়টা ঠিক করে রেখেছে তারা। সমাজের চোখা লোকের অভাব নেই যাদের নজরই থাকে খারাপের দিকে।
তুমি জান মা প্রায়ই এই বট গাছটার কথা বলে।
ফারজানা ,কি বলে?
বাবার সাথে মায়ের পরিচয় হয় এখানেই। সেদিন নাকি খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। মা ছিল নানার সাথে। বৃষ্টি থেকে বাচতে আশ্রয় নেয় এই গাছটার নিচে। মা ঠাণ্ডায় কাপতে ছিল।
বাবার হাতে ছাতা থাকলেও বৃষ্টির বেগ এতো বেশি ছিল যে বাধ্য হয়ে এখানে আসে। মায়ের কাঁপুনি দেখে বাবা ছাতাটা বাড়িয়ে দিয়ে ছিল। আর সে খান থেকেই শুরু।
আর শেষটা তুমি।
সুমন হেসে বলে, ঠিক বলছ।
মঞ্জু সব ঠিক আছে তো?
জি বস, সব ঠিক আছে।
শোন রহিম মেম্বারের বাড়ি গিয়ে তার দরজায় নক করবি। তোর দুই পাশে দুজন দুজন চারজন আড়ালে থাকবে। গিয়ে বলবি আমি দূর থেকে এসেছি মেম্বারের সাথে কথা বলতে চাই। খোলা মাত্রই চার জন ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ডুকে বেদে ফেলবি সবাইকে।
আমরা কয়েক জন বাহির পাহারা দিবো আর কয়েক জন ভিতরে ডুকে যাবে সাথে সাথেই। কাজ শেষ হলে এই বট গাছের নিচে আসবি।
দরজা না খুললে?
কুঠার দিয়ে ভেঙ্গে ফেলবি। কিন্তু সেটা করতে হবে খুব দ্রত।
কিরে চাঁদ গাছে কি করিস?
মটর সাইকেল চালাই।
তুই চালাইলে আয়।
না আমি উপরের মোটা ডালটায় ঘর বানাবো।
ওঠ তাইলে। চাঁদ খুব কষ্ট করে উঠে যায় গাছে। তারা বলে তুই ঘর বানা আর আমি তোর ঘরে মটর সাইকেলে করে যাবো।
আচ্ছা আসিস।
তারা ডালে বসে বলে, ভো......ভো......ভো.........
মাথার উপর দিয়ে চলে গেল একটা এরোপ্লেন। দুজনেই হা করে চেয়ে রইল সেদিক। একেবারের মাথা ঘার ঘুড়িয়ে যত দূর পর্যন্ত দেয়া যায় চেয়ে রইলো। চলে যাওয়ার পর চাঁদ বলে জানিস প্লেনের মধ্য ছোট ছোট মানুষ থাকে।
তারা বলে, না হলে ঢুকবে কি ভাবে? পুতুলের মত তাই না?
হম।
ওরা কি আমাদের মত খায়?
না। ওরা ওষুধ খায়। কিন্তু কোথায় যায় জানি না। খুব সম্ভব চাদের দেশে।
চাঁদ আর তারাদের বয়সী রাখাল মতি এসে দাড়ায়। তারা দেখতে পেয়ে বলে, কিরে তুই ?
তোরা খেলিস?
হম। প্লেনটা দেখছিস।
দেখছি। আমার দিকে একবার চাইছিল।
আমিও তোদের সাথে খেলবো।
তারা, কিন্তু গরু ত অন্যের ক্ষেতে গিয়ে ফসল খাবে।
একেবারে উপরের ডালে বসলে সব দেখা যায়। সেখানেই থাকবো।
চাচা তুমি যখন ছোট তখন এই গাছটা কত বড় ছিল?
এক রকমই দেখতেছি রোটন।
কোন পরিবর্তন হয় না। শুধু কয়েকটা ডাল মরে গেছে আবার কয়েকটা জন্ম নিয়েছে।
এই গাছে নাকি অনেক ঘটনা ঘটতো?
শুনছি তয় দেখি নাই। যুদ্ধের সময় তিন দিন এই গাছে লুকিয়েছিলাম। একটা ঝাপরী ডাল ছিল, বাহির থেকে কিছু দেখা যেতো না।
কিন্তু কেমনে জানি পাক বাহিনী টের পাইলো। আইসা হামলা চালাল। তোর বারেক চাচা সেই যুদ্ধে মারা যায়। ওরা এতো গুলি চালাই ছিল যে অই ডালটা পরে মইরা যায়। আমরা বেশি ছিলাম না।
বারো জন। আর পাক আঁচিল ত্রিশ জনের মত। কিন্তু আমাগো সাথে পারে নাই।
আব্বা বারেক চাচার কথা প্রায়ই কয়।
তখন তোর আব্বার বয়স দশের মতন।
এই সুমন শুনছিস?
কি?
বট গাছটা নাকি কেটে ফেলা হবে।
বলিস কি?
হ্যাঁ। আমি তো সেজন্যই সে দিকে যাচ্ছি।
চলতো।
চেয়ারম্যান বিশাল বাহিনী নিয়ে এসেছে গাছ কাটার জন্য।
আর গাছটা ঘিরে রেখেছ গ্রাম বাসি। সুমন এগিয়ে গিয়ে বলে কি শুরু করছেন আপনারা?
চেয়ারম্যান তোমরা পোলাপান সর। বড়দের মধ্য নাক গলাও কেন?
রোটন, বলে আপনারা বাধ্য করছেন।
ডাকাত সরদার পাশে দাঁড়িয়ে নীরবে কথা শুনছে। সে এর প্রতিবাদ করে পারে না কারণ চেয়ারম্যান প্রায়ই তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় ধরা খেলে।
কিন্তু এখন থেকে তার আশ্রয় স্থল ধংস হচ্ছে। দেখা ছাড়া কিছু করার নেই।
সুমন বলে আপনারা ফিরে যান। না হলে এখানে রক্ত বন্যা বয়ে যাবে।
চেয়ারম্যান গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে ফিরে যায়।
কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাই দেখে এলাকা একেবারে ফাকা। গাছের চিনহও নেই। সবাই কষ্টে মুখ ভার করে রাখে। যেন এ গ্রামে মানুষ মরার মড়ক লেগেছে।
রোটন সুমনকে এসে বলে দেখ আমরা এতো মানুষে এর প্রতিবাদ করলাম কিন্তু গাছ কাটা থেকে ফিরাতে পারলাম না।
এখানে আমাদের কত সৃতি, কত ইতিহাস। গরমে এই বটের ছায়া তলে আশ্রয় নিয়েছি, আশ্রয় নিয়েছিল মুক্তি যোদ্ধারা, ছেলেরা পড়ন্ত বিকেলে খেলা করেছে।
সুমন বলে, দেখ এই বট বৃক্ষের সাথে যদি পুরো দেশের তুলনা করি তবে একই দেখত পাবো। আমাদের সাধারণ মানুষের এতো চাওয়া পাওয়া ,চিন্তা চেতনা কিন্তু ওনারা যা বলেন তাই হয়। ওনাদের যা করার করেই যায়।
ওনাদের টাকা আছে ক্ষমতা আছে, ওনাদের কথা মানুষ খুন করতে পারে এমন মানুষও আছে। কিন্তু আমাদের শুধু জনতা আছে। যা ক্ষমতার কাছে মূর্ছা যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।