লিখতে মুঞ্চাই তাই লিখি । https://www.facebook.com/nostakak উত্তপ্ত বালির উপরে বসে কচি ডাব হাতে সৈকতে আছড়ে পড়া নীল ঢেউ এর দিকে তাকিয়ে আছে "মোহন" ।
কত সুন্দর পানি ,দুপুরের সোনা রোদে ঝিলমিল করছে,ঢেউ এর সাথে ভেসে আসছে কত রং-বেরং এর ঝিনুক!
মোহন নিজের মনের সাথে প্রানপ্রনে যুদ্ধ করে যাচ্ছে । তার মন চাচ্ছে সাগরের পানিতে টুপ করে দুইটা ডুব দিতে । কিন্তু সে তো সাঁতার কাটতে পারে না ।
একটু অসাবধান হলেই মৃত্যু নিশ্চিত ।
আচ্ছা মোহন মারা গেলে কি খুব একটা ক্ষতি হবে ?
বরং এখন মরে গেলেই সব ঝামেলার অবসান ঘঠবে ।
হাতে থাকা ডাবের তলানির পানির সাথে পাতলা সাশটুকু তার শেষ সম্বল । বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে আজ ৩ দিন হল । এতক্ষনে সবাই নিশ্চয় শান্তির নিশ্বাস ফেলছে ।
ফজলু সাহেব মারা যাওয়ার ঠিক ৩ দিন পর্যন্ত লিপি এক ফোটা পানিও পান করেনি
কিন্তু সেই লিপি মাত্র ১ মাসের মাথায় সাহেদ কে বিয়ে করে মোহনদের ফ্লাটে নিয়ে এল । সারাদিন তারা বাহিরে বাহিরে দিন কাটায় । বের হওয়ার আগে মোহনকে ঘরের ভিতর রেখেই বাহির থেকে তালা লাগিয়ে দেয় । এমনও হয়েছে টানা দুইদিন সে একলা একলা ঐ বিশাল ফ্লাটে সময় কাটিয়েছে ।
একটা সময় মোহন অন্ধকারে খুব ভয় পেত , ক্ষিদা সহ্য করতে পারত না ।
কিন্তু এই বেপার গুলি একসময় তার নিত্যদিনের সঙ্গি হয়ে উঠল । আস্তে আস্তে মোহনের স্কুলে যাওয়া ও বন্ধ হয়ে গেল,মানসিকতার সাথে শুরু হল শারীরিক অত্যাচার । ১১/ ১২ বছরের একটা ছেলে কইত আর সহ্য করতে পারে?
শেষে বাধ্য হয়ে বাড়িথেকে পালিয়ে ট্রেনে,বাসের ছাদে চড়ে এই সাগর পাড়ে এসে পৌঁছে ছে ।
পকেটে থাকা সল্প টাকা গুলিও শেষ হয়ে গেল কিছু ক্ষন আগে ।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো ।
কমলা রঙ্গের সূর্য টা লাল বর্ণ ধারন করে আস্তে আস্তে ঢুবে যাচ্ছে সাগরের পানিতে মোহন তার ছোট হাত দুটি দিয়ে চোখের কোনে হলদে আলোয় ঝলমল করা তরল হীরের কনা গুলিকে মুছতে ব্যস্ত। কিছু ক্ষনের মাঝে আকাশ ঘন কালো হলে উঠল,হিমেল হাওয়াতে মোহন কেঁপে উঠছে বার বার ।
শুরু হল তুমুল বৃষ্টি । মোহন তখনও সৈকতের বালির উপর বসে আছে । বৃষ্টির সাথে বালির কনা এসে পড়ছে তার চোখে মুখে ।
কিন্তু কোন এক অজানা কারনে সে ঠায় বসে রইল ঐ একই জায়গাতে । হয়তবা ফেরার কোন পথ তার জানা নেয়।
কাসেম মিয়া দলবল নিয়ে নৌকাটাকে পাড়ে তোলে বাড়ির দিকে হেঁটে যাচ্ছে । ছেলেটাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে সামনে এগিয়ে গেল সে ।
সামনে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ গলায় প্রশ্ন করল "ঐ পুলা এহানে কি করছ ? "
মোহন চোখ খোলে তাকিয়ে, আছে কিন্তু শত চেষ্টা করেও মাথা উঠাতে পারল না ।
ভেজা বালি লাগানো ঠোঁট দুটি নেড়ে অস্পষ্ট কি এক শব্দ করে উঠল ।
কাসেম মিয়া এবার মোহনের কপালে হাত রেখে চমকে উঠে বলল " তুই কি সাড়ারাইত এইখানে আছিলি ? শইলে দেখি আগুইন্না জ্বর আইছে । ঐ পুলা কথা কছ না কেন ? নাম কি তর ? "
মোহন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে , এক মূহূর্তের জন্য মনে হল এই লোকটিই তারা বাবা । ছেলের কষ্ট দেখে থাকতে না পেরে প্রভুর অনুমতি নিয়ে আবার ফিরে এসেছে এই পৃথিবীতে।
"সব ঝামেলা আইয়া আমার কান্ধে দলা হইব, আল্লাহ্ কি চোক্কে আর কেওইরে দেহে না ? "বলতে বলতে সে মোহনকে কাধে তুলে নিল ।
মোহনের মুখের দিকে তাকিয়ে কাসেম হাসছে আর বলছে " তোর আম্মা তোরে দেখলে বিরাট আনইন্দ পাইবরে, বিরাট আনইন্দ পাইব" ।
সকালের কাঁচা রোদে ভিজা বালির উপর দিয়ে কাসেম তার সদ্য পাওয়া ছেলে কে কাধে নিয়ে হেঁটে চলছে আর উপর থেকে কেউ যেন বলে উঠছে "আহা , বাপ-পুতের কি চমইতকার ভালোবাসা .........! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।