আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২৩ জুন :ফিরে আসে পলাশী

যে দিবসটি আমরা ভুলতে বসেছি অথবা আমাদের ভুলিয়ে দেয়া হচ্ছে সেই পলাশী দিবসের কথাই বলছি। আমরা আজ ভালবাসা দিবস,এইডস প্রতিরোধ দিবস,নারী দিবস,এরুপ কতশত দিবস পালন করছি অথচ ভুলতে বসেছি আপন অস্তিত্বের সাথে মিশে থাকা রক্তাক্ত ট্র্যাজিডি ২৩ জুন পলাশী দিবসের কথা। ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন পলাশীর আমবাগানে বাংলার স্বাধীন নবাব ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কাছে কূটচালের যুদ্ধ নামক এক প্রহসনে পরাজিত হয়। মোটামুটি ২০০ বছরের এক গোলামীর জিন্জিরে আবদ্ধ হয় আমাদের স্বাধীনতা। এই ইতিহাস তারাই ভুলে থাকে বা বহুজাতিক কোম্পানীর সাহায্যপুষ্ট মিডিয়ার সে অংশই আমাদের ভুলিয়ে রাখে যাদের ভেতর লুকিয়ে আছে লর্ড ক্লাইভদের প্রেতাত্বারা আর যাদের রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্খা পরাশক্তির সমন্বয়ে সম্প্রসারিত।

দেশীয় দালাল মীউঘরাজদের(মীর জাফর,উমি চাদ,ঘষেটি বেগম,রায় দুর্লভ,জগত শেঠ)ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতায় ৫০ হাজার পদাতিক আর ১৮ হাজার অশ্বারোহী বাহিনী নিয়েও মাত্র ৮০০ ইংরেজ সেনা ও ২২০০ ভারতীয় ইংরেজ পক্ষের সেনাবাহিনীর কাছে বাংলার স্বাধীনতা ভুলুন্ঠিত হয়। মীর জাফরের প্রত্যক্ষ মদদে মোহাম্মদী বেগের হাতে নবাব সিরাজ উদ-দৌলা শহীদ হন। ঐতিহাসিক মেলেসন এই প্রহসনের যুদ্ধকে যুদ্ধ বলতে নারাজ। তার মতে, “....প্রাসাদ ষড়য্ন্ত্রকারী ও কুচক্রী মীর জাফর,রায় দুর্লভ ও খাদেম হোসেনের অধীনে নবাব বাহিনীর একটি বিরাট অংশ পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কার্যত কোন অংশ গ্রহন করেনি। যুদ্ধের নামে প্রহসন হয়েছিল”।

ঐতিহাসিক ড: রমেশ চন্দ্র সেনের মতে, “নবাব ষড়যন্ত্রের কথা জানার পর যদি মীর জাফরকে বন্দী করতেন তবে পলাশীর যুদ্ধ হতো না”। ঐতিহাসিক মোবাশ্বের আলী লিখেছেন, “নবাব তার প্রায় লক্ষসেনা নিয়ে ক্লাইভের স্বল্পসংখ্যক সেনার কাছে পরাজিত হোন মীর জাফরের মুনাফেকীতে। অতি ঘৃন্য মীর জাফরের কুষ্ঠ রোগে মৃত্যু হয় কিন্তু বাংলার ট্র্যাজিডি এই যে,মীর জাফরেরা বার বার গোর থেকে উঠে আসে”। চরম প্রতিকূলতার মধ্যে সিরাজ উদ-দৌলা সিংহাসনে আরোহন করলে শাসক পরিবারে কোন্দল দেখা দেয়। বাংলার উঠতি পুজিপতি ও বনিক শ্রেনীর অবাধ মুনাফামুখী তৎপরতায় উচ্চ করারপ করায় তারা নবাবের বিরুদ্ধে চলে যায়।

অন্যদিকে লবন ব্যবসায়ের অজুহাতে বাংলায় সাম্রাজ্য বিস্তারের স্বপ্নে বিভোর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পোর্ট উইলিয়াম দুর্গ দখল ও সেনাবাহিনী পুষতে শুরু করলে নবাবের তাৎক্ষনিক পদক্ষেপে পরাজিত হয়ে চিকন পথে ক্ষমতা দখলের চক্রান্ত শুরু করে। আমরা দেখতে পাচ্ছি অভ্যন্তরীন বিশৃংখলা,ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে ব্যয় বৃদ্ধির ফলে ঋনগ্রস্ত নবাব আপন অমাত্য সুদব্যবসায়ী অবাঙ্গালী জৈন ধর্মাবলম্বী জগৎ শেঠের কাছে হাত পেতেছেন দিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকারকে কর দেওয়ার জন্য। ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের প্রথম ব্যর্থ ষড়যন্ত্রে হাতেনাতে ধরা পড়লেও নবাব তাকে পদচ্যুত করতে সক্ষম হননি আর্থিক সংকটের দরুন। নবাবের সাথে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যখন যুদ্ধ চলছিল,দিল্লীর মুঘল সম্রাট তখন তাদের বিনা করে বাংলায় ব্যবসা করার অনুমতি দেন!দিল্লীর এ হঠকারী সিদ্ধান্ত এবং নবাবের প্রতি সহায়তার হাত সংকুচিত করাই পলাশীর প্রান্তরে পরাজয়ের অন্যতম কারন। যেখানে ফরাশীরা পর্যন্ত নবাবকে সহায়তার জন্য যুদ্ধে এগিয়ে এলো সেখানে দিল্লী কেন এগিয়ে এলোনা তা এক বিস্ময় বটে।

পরবর্তী একশ বছর শাসন-শোষন আর দুর্ভিক্ষ উপহার দিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমাদের ভাগ্য সমর্পন করে রানী ভিক্টোরিয়ার পদতলে। বাংলার স্বাধীনতা হরনকে জায়েজ করার জন্য ভাড়াটিয়া লেখক মি: হলওয়েল আর সুধীর বাবুরা অন্ধকূপ হত্যার মিথ্যা কাহিনী লিখে সিরাজের চরিত্রকে কলংকিত করার আপ্রান চেষ্টা চালান। পলাশীর ইতিহাস তাই আমরা ভুলে যেতে পারিনা। পলাশী ফিরে আসে বার বার নতুন রুপে দেশে দেশে। ইস্ট ইন্ডিয়ার মত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানী কি আমাদের দেশে এখন নাই?জগৎ শেঠের মতো সুদের ব্যবসায়ী কি এখানে তৎপর না?মীরজাফরের মতো সেনাপ্রধান কি এদেশে বিরল?অন্ধকূপ হত্যার গল্প লেখা মিডিয়া কি সারাদেশ চষে বেড়াচ্ছেনা শপথ নেবার শ্লোগান নিয়ে?পলাশীর চেতনার নির্যাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে অন্তত ইয়াদ আলাবি,আহমদ সালাবি,হামিদ কারজাই,জারদারিদের উথ্থান রোধকল্পে।

শরীফ হোসাইন মৌন Email: কিল্লাপুল,নারায়নগঞ্জ-১৪০০ ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।