আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদেশে মাস্টার্স এবং আমার অভিজ্ঞতা

অনেক ইচ্ছে ছিল ইউনিভার্সিটিতে পড়ার, যদিও দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়ালেখা করেছি তাতে আর যাই ছিল আসল ইউনির মজা ছিল না। লন্ডনে এসেছি প্রায় তিন বছর হয়েছে, প্রথম প্রথম "মায় বানায় পুতে বেচে" টাইপ কলেজে পড়ার সুযোগ হয়েছিল দেশে কিছু প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে। তবে সব সময় ইচ্ছে ছিল যে ইউনি তে পড়ব, তো গত বছর টাকা পয়সা যোগার না করেই আল্লাহ এর উপর ভরসা করে ভর্তি হলাম কিংস্টন ইউনিভার্সিটি তে, সাবজেক্ট হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজম্যান্ট। বেশ অসাধারন অভিজ্ঞতা ছিল পুরো কোর্সটাই, আমাদের ক্লাগে সকল মহাদেশেরই ষ্টুডেন্ট ছিল বাঙ্গালি বলতে আমরা কেবল দুজন। সেই চায়না থেকে আর্জেন্টিনা পর্যন্তা আমাদের ষ্টুডেন্টদের ভৌগলিক অবস্থান।

অনেকই তাদের কর্ম জীবন ছেড়ে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে, তাদের কাছে শিখতে পেড়েছি অনেক কিছু। একটা বিষয় না বললেই নয় এখানে প্রতিটি ক্লাসে আমি একটা জিনিস লক্ষ করেছি যেটা আমাদের দেশে পাইনি, প্রতিটি ক্লাস একাডেমিয়ান (অন্তত পক্ষে পিএইডি) এবং প্রাকটিশনার্স এর মিশ্রন যারা বাস্তব জীবনে অনেক বড় বড় প্রজেক্টে অংশ গ্রহন করেছেন । আমাদের একজন শিক্ষক ছিলেন যিনি ডেল্টা এয়ারলাইন এবং ব্রিটিশ এয়ারের রিক্রুটমেন্ট এডভাইসার হিসেবে কাজ করছেন, আরেকজন টনি ব্লেয়ারের উপদেষ্টা ছিলেন, এছাড়াও আরও অনেকে ছিলেন যাদের কাছ থেকে পেয়েছি নানা রকম বাস্তব জীবনের কাজের উদাহরন। তাদের অভিজ্ঞতা থেকে তারা নানা রকম উদাহরন দিতেন যা আমাদের চাকরি জীবনের ইন্টারভিউ এবং কাজের ক্ষেত্রে অনেক সহায়তা করেছে। আমাদের দেশের ভার্সিটিগুলোতে যতটুকু জানি শুধুই একাডেমিয়ানদের দ্বারা শিক্ষা ব্যাবস্থা চালিত হয় যার কারনে তারা অনেই কর্ম জগতের সম্পর্কে অজ্ঞ।

অবশ্য দেশের বেসরকারী ইউনিগুলোর অবস্থা কি তা জানিনা। আমাদের কোর্সে প্রত্যেককেই অন্তত ৬ টা রিয়েল লাইফ প্রজেক্ট করতে হত, যেখানে ষ্টুডেন্টরা যে কোন প্রতিষ্ঠানের মানব সম্পদ বিভাগ গিয়ে নানা জনকে ইন্টারভিউ, এবং সার্ভে করত এবং বইয়ে কি লিখা আছে আর বাস্তব কাজের ক্ষেত্রে কি আছে এসব বের করে রিপোর্ট লিখতে হত। অনেকটা ইনভেস্টিগেশন টাইপ আরকি। তো আমি এমন একটা স্পন্সর কোম্পানী খুজতে গিয়ে ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্সের সুযোগ পেয়ে ছিলাম। আমাদের রিপোর্ট ইউনি এবং হোস্ট কোম্পানিকে দু পক্ষকেই দিতে হত যার ফলে হোস্ট কোম্পানী দেখতে পেত তাদের কি কি দুর্বলতা রয়েছে এবং কি কি করলে তা থেকে কাটিয়ে ওঠা যাবে।

তো আমার হোস্ট কোম্পানীতে প্রজেক্ট আর দু একদিন কাজ করার সুবাদে জব অফার পেয়েছি, যা কিনা আগামীকাল থেকে শুরু হবে। এখানে শিক্ষা ব্যাবস্থার আরেকটা দিক হল এখানে ঘুরে বেড়ানোর সময় নেই কোর্স চলাকালীন অবস্থায়। দেশে ডিগ্রী পরীক্ষার সময় মাত্র ৪ মাস পড়াশুনা করেছিলাম মনে আছে কিন্তু এখানে বিগত ৯ টা মাস দম ফেলারও সময় পাইনি। এর আগে শুধু ক্লাস ফাইভে থাকতে বৃত্তি পরিক্ষায় রাত বারোটা পর্যন্ত পড়াশুনা করেছিলাম, এবার অবশ্য তা টেক্কা দিয়ে দু একটা রাত ঘুমহীন ও কাটাতে হয়েছে। একজন বন্ধু শুনে অবশ্য বলেছিল যদি ব্রিটিশরা কোন কিছু ফুলটাইম বলে তবে সেটা ফুলটাইম এডুকেশন।

তো এখন সব এসাইনমেন্ট শেষ কেবল ডিজার্টেশন বাকি আছে যা কিনা ৩ মাস পরে জমা দিতে হবে। আজকে শেষ একটা এসাইনমেন্ট জমা দিয়েছি সুতরাং হাতে একটু অবসর সময়। যদিও কাল থেকে আবার প্রফেশনাল জীবন শুরু হবে। সবচেয়ে ভাল যে সুযোগটা পেয়েছি তা হল এবার লন্ডন অলিম্পিকে ৭০,০০০ ভলান্টিয়ার নিয়োগ দেয়া হবে, যাতে তারা গেমসের সময় দর্শনার্থীদের সাহায্য করতে পারে। আমরা যেহতু এইচ আর এর ষ্টুডেন্ট, আমাদের ইউনিভার্সিটি তাই আমাদের সবাই কে এই ৭০,০০০ ভলান্টিয়ার এর মধ্যথেকে কিছু সিলেক্ট করার জন্য নির্বাচিত করছে, এবং যথাযথ ট্রেনিংও দিয়েছে।

আমাদের কাজ হল এপলিকেন্টদের ইন্টারভিউ নেয়া এবং সিলেক্ট করা। আমরা ছাড়া আরও অনেক ইউনি এর সাথে যুক্ত, কারন ৭০,০০০ তো মুখের কথা নয়। তো আগামী শুক্রবার থেকে লন্ডন অলিম্পিকে একজন ইন্টারভিউওয়ার হিসেবে থাকব লন্ডন এক্সেল সেন্টারে। এই এক্সেল সেন্টারেই ভলানটিয়ার নিয়োগ করার কাজ চলবে। ধারনা করছি একটি অসাধারন অভিজ্ঞতা হবে, কারন এতদিন যা শিখেছি তা এখন বাস্তবে প্রয়োজ করতে পারব।

কয়েকদিন আগে দেশে বিশ্বকাপ গেল, অথচ আমরা কি পারতাম না আমাদের ছেলেগুলোকে এভাবে কাজে লাগাতে, এতে তাদের যেমন কিছু কাজের অভিজ্ঞতা হোত সেই সাথে বিশ্বকাপের সাথে কিছু করার একটা স্মৃতি থাকত। অনেকদিন পড়ে লিখছি তাই হাপিয়ে উঠেছি, তো আজকে এখানেই শেষ করলাম, চাকরী জীবনের জন্য সবার দোয়া চাইছি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।