আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যান আর মানবজটে স্থবির রাজধানী

ঢাকায় এত গাড়ি! গাড়ির জন্য রাস্তা পার হওয়া যায় না। তার পরও প্রতিটি স্টপেজে শত শত মানুষ অপেক্ষা গাড়ির জন্য। নির্দিষ্ট গাড়িটি এলেই হুড়োহুড়ি করে উঠতে চান সবাই। কেউ পারেন, কেউ পারেন না।
সুযোগ না পেয়ে অনেক সময় বাধ্য হয়ে হেঁটেই পৌঁছাতে হয় গন্তব্যে, বিশেষ করে রমজান মাস আসার পর এই দৃশ্য নগর ঢাকার সর্বত্র।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ এই যানজট আর মানবজটের অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যমতে, বর্তমানে প্রতিবছর ৩৭ হাজার গাড়ি ঢাকার পরিবহনব্যবস্থায় যুক্ত হচ্ছে, যার ৮০ শতাংশ হচ্ছে প্রাইভেট কার বা ব্যক্তিগত গাড়ি। বর্তমানে ঢাকার রাস্তায় চলছে এক লাখ ৮৫ হাজার ৬১৯টি প্রাইভেট কার। এ ছাড়া মাইক্রোবাস রয়েছে ৫৩ হাজার ২৪৬টি। অথচ সাধারণ মানুষ চলাচলের উপযোগী বাসের সংখ্যা মাত্র ১৯ হাজার ৯১৪টি।

গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ঢাকার রাস্তায় ৪১২টি নতুন বাস নামানো হয়েছে। এর বিপরীতে প্রাইভেট কার নেমেছে তিন হাজার পাঁচটি এবং মাইক্রোবাস ৪১২টি।
বিশেষজ্ঞরা জানান, একটি শহরের আয়তনের তুলনায় যে পরিমাণ রাস্তা থাকা প্রয়োজন, ঢাকা শহরে তার তিন ভাগের এক ভাগ রাস্তাও নেই।
বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট পরিচালিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘ঢাকা শহরে প্রাইভেট কার ব্যবহার যানজটের অন্যতম কারণ। ঢাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ শহর।

এখানে প্রাইভেট কার বেড়ে যাওয়ায় রাস্তায় পার্কিং-সুবিধা দিতে গিয়ে নাগরিকের চলাচলের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ’
গাড়ি স্বল্পতার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক মাহবুব-উন-নবী প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ঢাকায় প্রতিবছর ছয় লাখ করে মানুষ বাড়ছে। তাই ঢাকায় যানজটের মূল সমস্যা হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধি। জনসংখ্যার চাপে যানজটের সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। জনসংখ্যা যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তাহলে রাস্তা এক তলা-দুই তলা করেও কোনো লাভ হবে না।

তিনি বলেন, প্রাইভেট কারের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া কোনো বড় শহরের যানজট নিরসন করা সম্ভব নয়। যানজট নিরসনের জন্য পৃথিবীর প্রায় সব বড় শহরেই প্রাইভেট কার চলাচল অত্যন্ত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে এটা যানজট নিরসনের স্থায়ী সমাধান নয়।
ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের গবেষক মারুফ রহমান যাত্রীদের সেবার মান সম্পর্কে বলেন, অল্প জায়গায় বেশি যাত্রী পরিবহন করা যায় এমন ধরনের বাহনকে এখন প্রাধান্য দিতে হবে। বাসে তুলনামূলক অনেক কম জায়গায় বেশি মানুষ পরিবহন করা যায়।

সুতরাং যাত্রী অনুপাতে যথেষ্ট পরিমাণে বাস নিশ্চিত করতে হবে, যেন গাদাগাদি করে কাউকে যাতায়াত করতে না হয়। তিনি বলেন, বাসের পাশাপাশি রেল, নৌ-যান, ফুটপাত, সাইকেল ও রিকশাসহ একটি সমন্বিত গণযাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। তা না হলে কখনো যাত্রীসেবার মান বাড়ানো সম্ভব হবে না।

নারীদের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি
গণপরিবহনে যাতায়াতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় নারীদের। বাসে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ছয় থেকে ১১টি আসন বরাদ্দ থাকে।

অথচ বর্তমানে পরিবহনে যাত্রীর সংখ্যা নারী ও পুরুষ প্রায় সমান। অনেক সময় সংরক্ষিত আসনগুলোয় পুরুষ যাত্রীরা বসে থাকেন। তা ছাড়া গাড়িচালক ও তাঁর সহযোগীরা (হেলপার, কন্ডাক্টর) প্রায় সময়ই নারী যাত্রীদের গাড়িতে তুলতে চান না।
ভুক্তভোগী কয়েকজন নারী যাত্রী জানান, পুরুষ যাত্রীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ও ধাক্কাধাক্কি করে গাড়িতে উঠতে হয়। প্রচণ্ড ভিড় ও চাপের মধ্যে দাঁড়িয়ে গন্তব্যস্থলে যেতে হয়।

হঠাত্ গাড়ি থামালে (ব্রেক করলে) হুমড়ি খেয়ে পড়া আর বখাটেদের বাজে মন্তব্য তো আছেই। এভাবে প্রতিদিন নাকাল হন রাজধানীর সাধারণ নারীযাত্রীরা।
এ প্রসঙ্গে কয়েকজন বাসচালক বললেন, নারী যাত্রীদের বাসে তুলতে ও নামাতে বেশি সময় লাগে। তাঁদের কারণে দাঁড়ানো যাত্রী কম তোলা যায়। তাই নারী যাত্রীদের গাড়িতে ওঠাতে তাঁদের আগ্রহ কম।

বাসে সিট থাকলেও তাই বলা হয়, ‘লেডিস সিট খালি নাই, উঠানো যাইব না। ’
তার পরও অনেক নারী যাত্রী উপায় না পেয়ে হয়তো জোরজবরদস্তি করে উঠে পড়েন গাড়িতে। এরপর মহিলা সিটে বসা পুরুষ যাত্রীদের সঙ্গে চলে বাগবিতণ্ডা।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।