আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই রিতা-মিতা বাঁচতে চায়.............

অত্যন্ত করুণ অবস্থায় অনাহারে দিন কাটছে মিরপুরের কথিত 'ভূতের বাড়ির' বাসিন্দা ডা. আমিনুন্নাহার রিতা ও ইঞ্জিনিয়ার নুরুন্নাহার মিতার। অর্থাভাবে গত ৪০ দিন শুধু পানি খেয়ে আছেন তারা! মিতার চেয়ে রিতার অবস্থা আরও করুণ। যেকোনো মুহূর্তে নিভে যেতে পারে ডাক্তার রিতার জীবন প্রদীপ। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ না থাকায় দুই বোনের খোঁজখবর রাখার কেউ নেই। দুই বোন জানিয়েছেন, তাদের এই বাড়িতে ইচ্ছা করেই বন্দী রাখা হয়েছে।

আত্মীয়-পরিজনবিহীন অসহায় দুই বোন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সাহায্যের আকুতি জানিয়ে বলেন, 'এই বন্দীজীবন থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই। বাংলাদেশের যেকোনো গ্রামে গিয়ে কিংবা মানুষের বাসায় কাজ করে হলেও এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। ' গতকাল মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ দুই বোনের সরেজমিনে খোঁজ নিতে গিয়ে কথা হয় ভূতের বাড়ির আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে। তারা জানান, বহুদিন ধরে দুই বোনকে ঘর থেকে বের হতে দেখা যায়নি। সন্দেহ হওয়ায় রিতা-মিতার সুস্থতা যাচাই করতে তাদের ঘরের বাইরের পাচিল টপকে বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই প্রতিবেদক ও আলোকচিত্র প্রতিবেদক তাদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন।

দীর্ঘক্ষণ দরজা খোলার অনুরোধের পর ঘর থেকে শ্লথগতিতে বের হয়ে আসেন ছোট বোন মিতা। চাবি দিয়ে খোলেন ঘরের দরজা। দরজা খুলে দুর্বল মিতা ক্ষীণ কণ্ঠে প্রতিবেদককে ভেতরে ঢুকতে বলেন। আঙিনার কাঁটাযুক্ত আগাছা পেরিয়ে ঘরে প্রবেশ করতেই তীব্র দুর্গন্ধ নাকে লাগে। বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন ঘরটি ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন।

অন্য সময় ঘরে মোমবাতি জ্বললেও গতকাল তাও ছিল না। দেয়াল হাতড়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, অগোছালো ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বালিশ-কাঁথা থালা-বাসন হাঁড়ি-চামচ ইত্যাদি। পুরো ঘর শুকনো পাতা, ময়লা ও আবর্জনায় পরিপূর্ণ ছিল। ঘুরে বেড়াচ্ছিল ইঁদুর ও তেলাপোকা। দেয়ালে ঝুলছিল মাকড়সার বড় জাল।

লক্ষ্য করে দেখা গেল, চাদর দিয়ে ঘরটিকে দুই ভাগ করেছেন দুই বোন। প্রথমভাগে বালতিতে টয়লেট সারছেন। দ্বিতীয়ভাগে কাপড় বিছিয়ে শোয়ার ব্যবস্থা করেছেন। চাদরের অপরপ্রান্তে দেখা হয় কঙ্কালসার রিতার সঙ্গে। অন্ধকার ঘরে রিতার নিথর দেহ ভয়ের উদ্রেক করে।

মিতা জানান, এক সপ্তাহ ধরে রিতা কথা বলা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। পুরোপুরি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন। কয়দিন ধরে চোখের ইশারায় কথা বলছেন রিতা। কেমন আছেন জানতে চাইলে মিতা বলেন, 'খুব খারাপ। টানা ৪০ দিন না খেয়ে আছি আমরা।

টাকা নেই। খাবার না খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। দুর্বল দেহে ঘরের বাইরে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। যোগাযোগ না থাকায় আমাদের সাহায্য করতেও কেউ আসছে না। ' মিতা বলেন, বাড়িটি তাদের মায়ের।

ঘরের সামনের ফার্নিচারের দোকানের মাসিক ভাড়ায় তাদের সংসার চললেও বহুদিন ধরে দোকানমালিক তাদের ভাড়া দিচ্ছেন না। ' আত্মীয়স্বজনদের ব্যাপারে জানতে চাইলে মিতা বলেন, 'তাদের মা-বাবা কানাডায় অকল্যান্ডে আটকে পড়েছেন। ' অথচ মিতা আলাপচারিতার একপর্যায়ে বলেন, ১৯৮২ সালে তাদের বাবা এবং ১৯৯৬ সালে মা মারা যান। মা-বাবার সঙ্গে আধ্যা@ি@@@ক উপায়ে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হয়। মিতা জানান, তারা পাঁচ বোন।

এর মধ্যে তিন বোন রিনা, হেনা ও আসমাকে ছোটবেলায় অপহরণ করা হয়েছে। এ কথায় পরিষ্কার হয় মানসিকভাবে সুস্থ নন তিনি। মিতা আরও জানান, ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময়েই হাদিসের প্রতি তার ও রিতার আগ্রহ তৈরি হয়। মিতা জানান, তারা সবার সঙ্গে মিশতে চান। কিন্তু লোকজন প্রথম কয়েক দিন আগ্রহ নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বললেও পরে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন।

মিতা বলেন, বড় বোনের কারণে এখনো আমি বন্দী রয়েছি। রিতা এই বাড়ি থেকে বের হয়ে অন্যত্র যেতে চায় না। আর বোনকে রেখে আমিও অন্যত্র যাওয়ার কথা ভাবতে পারি না। ' বোনের চিকিৎসা নিয়ে উদ্বিগ্ন মিতা বলেন, 'আমরা বাঁচতে চাই। আমরা চিকিৎসা চাই।

আমাদের বাঁচান। এই বন্দীজীবন থেকে মুক্ত হতে চাই। ' মিতা সাজগোজের ব্যাপরে শৌখিন হওয়ায় ঘরের ভেতর বিদেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু তিনি এখন আর সাজগোজের প্রতি প্রসাধনী আগ্রহ বোধ করেন না। এর আগে মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান এই দুই বোনের অভিভাবক হয়ে তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন।

এলিনা খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে রিতা-মিতাকে সাহায্য করতে তাদের বাড়িতে গেলেও সে সময় তারা সাহায্য নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। গতকালের ঘটনা জানার পর এলিনা খান দুই বোনকে সাহায্যের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান। রিতা-মিতা সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের মানসিক চিকিৎসা করেন দেশের পরিচিতি এক মনোবিজ্ঞানী। এই মনোবিজ্ঞানী তার নাম প্রকাশ না করে বলেন, রিতা-মিতার ঘটনায় আধ্যাতিকতার কিছু নেই। তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন।

সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ছেড়ে দেওয়ার পর পুনরায় এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রিতা-মিতার ক্ষেত্রেই তাই ঘটেছে। এখন অভিভাবকের দায়িত্ব নিয়ে তাদের চিকিৎসার জন্য কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হবে। ১৯৯৬ সালে রিতা-মিতার মা মারা যাওয়ার পর লাশ দাফনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের আস্বাভাবিক জীবনযাপনের বিষয়টি জনসমক্ষে আসে। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত তারা পুরোপুরি লোকজন এড়িয়ে চলেছেন।

২০০৬ সালে চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হলেও ২০০৮ সালে তাদের আচরণ আগের অবস্থায় চলে যায়। সুত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।