আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঁধে ভাঙন, ডুবেছে চিংড়িঘের ও ফসলি জমি কক্সবাজার সদরে ইউপি নির্বাচন স্থগিত পানিবন্দী উপকূলের মানুষ

একটি পৃথিবী ৭০০ কোটি মানুষ, তবুও আমি একা বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকা থেকে মৌসুমি নিম্নচাপটি সামান্য উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে সরে গিয়ে ঘনীভূত হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত নয়টায় রায়মঙ্গল নদীর পাশ দিয়ে সুন্দরবন ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করেছে। এর প্রভাবে ঝড় ও স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ারে উপকূলীয় অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কক্সবাজার সদর উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আজ শনিবার নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এদিকে বরগুনা, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ভোলাসহ উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে ফসলি জমি ডুবে গেছে।

পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। ডুবে গেছে শত শত চিংড়িঘের। আমাদের আঞ্চলিক অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর: কক্সবাজার: সদর উপজেলার ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ, ইসলামপুর, পোকখালী, জালালাবাদ ও চৌফলদন্ডি ইউপি নির্বাচন গতকাল শুক্রবার স্থগিত করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমির আবদুল্লাহ মো. মনজুরুল করিম জানান, শত শত ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। এই অবস্থায় নির্বাচন পরিচালনা কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ।

তাই নির্বাচন কমিশন সচিবালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল ইসলাম জানান, এই ছয়টি ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করা হলেও আগামী মঙ্গলবার সদর উপজেলার ঝিলংজা, খুরুশকুল, পিএমখালী ও ভারুয়াখালী ইউপিতে নির্বাচন হবে। স্থগিত করা ছয় ইউপির ভোট গ্রহণের তারিখ শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। টেকনাফ (কক্সবাজার): টেকনাফ উপজেলার অন্তত ৪২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

ঝড়ে অন্তত ২০টি ঘর ভেঙে পড়ে ১৫ জন আহত হয়েছে। গতকাল জোয়ারের পানি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের ওপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে। টেকনাফের ইউএনও আ ন ম নাজিম উদ্দিন জানান, টেকনাফের অধিকাংশ এলাকা ডুবে গেছে। ত্রাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরগুনা: জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত নয়টি বাঁধ ভেঙে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

ডুবে গেছে অন্তত ২০০টি চিংড়িঘের। ঝড়ের ফলে গত বুধবার সকালে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার রাত প্রায় নয়টা থেকেই প্রবল ঝোড়ো হাওয়া ও বর্ষণ শুরু হয়। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। পাউবোর বরগুনা জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবদুস সবুর খান জানান, তাঁরা নয়টি স্থানে বাঁধ ভেঙে যাওয়া এবং বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধ হুমকির মুখে থাকার খবর পেয়েছেন।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার গাজী মাহমুদ, গর্জনবুনিয়া ও নিশানবাড়িয়া গ্রাম প্রায় পুরোপুরি পানিতে ডুবে গেছে। বরগুনা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, ‘জলাবদ্ধতা আরও দুই দিন থাকলে আউশ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। ’ আমতলী (বরগুনা): আমতলী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৫০টিরও বেশি কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১২০টি পানের বরজ। পশ্চিম ঘটখালী ও তেঁতুলবাড়িয়ায় ভেঙে যাওয়া বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে গতকাল ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এ ছাড়া গতকাল দুপুরের পর আমতলী-বরগুনা ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে পানিতে ডুবে গেলে যান চলাচলে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। জোয়ারের পানিতে আমতলী পৌর শহরের আমুয়ারচর এলাকাও প্লাবিত হয়েছে। পশ্চিম ঘটখালীর বাসিন্দা ইসমাইল আকন জানান, তাঁদের বাড়ির আঙিনায় দুই থেকে আড়াই ফুট পানি জমেছে। পটুয়াখালী: পটুয়াখালী পৌর শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে কলাপাড়ার সুলতানগঞ্জ গ্রামে একটি স্লুইসগেট ভেঙে গেছে।

এ ছাড়া কয়েকটি স্থানে পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙে শত শত মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গতকাল পটুয়াখালীর অভ্যন্তরীণ ২২টি রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে। পটুয়াখালী-কুয়াকাটা সড়কের তিনটি ফেরিঘাট ও দুমকির লেবুখালী ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে ডুবে যাওয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পটুয়াখালী নদীবন্দরের উপপরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পটুয়াখালী নদীবন্দরে ২ নম্বর নৌ সংকেত দেখানো হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছিদ্দিকুর রহমান জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।

দশমিনা উপজেলার চরঘূর্ণি ও আউলিয়াপুর গ্রামে বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর তীরের দেড় কিলোমিটার বাঁধ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভোলা: ভোলার তিনটি উপজেলার ছয়টি স্থানে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার অন্তত পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার গুড়া মিয়ার হাট এলাকার ফরাজী বাড়ির সামনে ও কাচিয়া-ইলিশা ইউনিয়নের সীমান্তে বাঁধ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর চেয়ারম্যানহাট, হেলাল কলোনি, সৈয়দপুর গুপ্ত বাজার, আলীম উদ্দিন, বোরহানউদ্দিন উপজেলার দক্ষিণ বাটামারা ও বাংলাবাজার এলাকায় বাঁধ ভেঙে গেছে।

সদর উপজেলার রামদাসপুর, গণেশপুর, পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের মুরাদ সফিউল্যাহ, গাজীপুর, ইলিশা, নাদের মিয়া হাট; দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর, সৈয়দপুর, মদনপুর সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে। তজুমদ্দিন উপজেলার চর জহিরুদ্দিন, মনপুরার কলাতলীর চর, চরফ্যাশনের ঢালচর, কুুকরিমুকরিও সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়ে মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন স্থানে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা চলছে। উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাঈদ আলী জানান, চর জহিরুদ্দিন, কলাতলী, মনপুরা ও ঢালচরে বন্য প্রাণী অসহায় হয়ে পড়েছে। বাগেরহাট: বাগেরহাট শহরসহ বাঁধসংলগ্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

তবে মংলা বন্দরে জাহাজে মালামাল ওঠানো-নামানোর কাজ স্বাভাবিকভাবে চলছে। বিভিন্ন স্থানের বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় গতকাল থেকে এসব স্থানের সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। শরণখোলার ইউএনও খন্দকার জহিরুল ইসলাম জানান, শরণখোলার রাজেশ্বর গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বাঁধের একাধিক স্থান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সাতক্ষীরা: জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার কয়েকটি এলাকার বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দেড় থেকে দুই ফুট বেড়েছে। কয়েকটি কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, শ্যামনগরের গাবুরার চকবারা খেয়াঘাট, নেবুবনিয়া ও মধ্যম খোলসেবুনিয়া এলাকায় বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। স্থানীয় লোকজন বাঁধ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। পদ্মপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদুল আলম জানান, পূর্ব পাতাখালী এলাকায় এক কিলোমিটার বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

পশ্চিম পাতাখালীতে প্রায় ৬০০ ফুট ও কামালকাটিতে প্রায় এক কিলোমিটার বাঁধেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। মুন্সিগঞ্জ ইউপির চেয়ারম্যান আবুল কাসেম মোড়ল জানান, সিংহড়তলী পাউবোর বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মহেশখালী (কক্সবাজার): কক্সবাজারের মহেশখালীতে বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার দুই দিনে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে অন্তত ২০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে অন্তত ২৫টি চিংড়িঘের।

ধলঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ জানান, প্রায় ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মাতারবাড়ির ইউপির চেয়ারম্যান এনামুল হক চৌধুরী জানান, তাঁর এলাকায় অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মহেশখালীর ইউএনও এ টি এম কাউসার হোসেন বলেন, বেশ কয়েকটি গ্রামে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সংস্কারের অভাবে ধলঘাটা ও মাতারবাড়ির প্রায় ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থান ভেঙে গেছে। বাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।