আমি বাংলা গান শুনি না অনেক দিন....অনেক অনেক বছর বললেই ভাল বলা হয়। আমি আর এখন রবিন্দ্রনাথ পড়িনা, শুনিনা....অনেক বছর পরিয়ে গেল। তাই বলে কোন দিন শুনিনি বা পড়িনি তা নয়। ১১ বছর বয়সে দেশে ফিরে ফুফুর সাথে থাকতে গেলাম যখন আমার বাংলার প্রফেসর ফুফুর কারনে বুঝি না বুঝি রবিন্দ্রনাথ পড়ে শেষ করতে হলো সেই ১১ বছর বয়সে। শুধু রবিন্দ্রনাথ নয় পড়তে হয়েছে বঙ্কিম, শরৎ, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ ও সুনীল।
শেষ করতে হয়েছে শেক্সপিয়র। পড়েছি "দ্যা ইনফিবিয়ান ম্যান" সহ প্রচুর রাশান বই এর ইংরেজি ভার্শন। এগুলো শেষ করে যখন সারা তখন মাত্র আমি ১৩তে। আর এত পড়বার পরেও আমি ১৪তে গিয়ে বাংলায় বরাবর ফেল মারা শুরু করলাম। সে কথা আগেও বলেছি।
তবে দুঃখ এত ছোট বেলায় এসব পড়বার কারনে এখন আবার সব ভুলে গেছি।
বাড়িতে বোনরা রবিঠাকুরের গান গাইত আর আমি নাচতাম। বড় হলাম যখন রবিঠাকুরের গান বা চমৎকার বাংলা গান যেগুলো তখন বাজতো শুনিনি তা নয়।
সুমনের গান শুনতে কাজের শেষে দৌড়াতে দৌড়াতে ১০ মিনিট দেরিতে যাদুঘরে পৌছাতেই সিড়িতে আসাদুজ্জামান নুর আমাকে দেখে বললেন দেরি করে ফেললে তো! আমিও আফসোসে ভাবি দেরি করে ফেললাম ।
আমি এখন আর সুমনের গান শুনিনা।
সুমনের গান শুনলেই এই কথাটা মনে আসে, "গান যদি হও আমার মেয়ের ঘুমিয়ে পরা মুখ.....তাকিয়ে থাকি সেটাই আমার বেঁচে থাকার সুখ"। সুমনের গান না শোনার কারনে আমি আর আফসোস করিনা এখন।
আবৃত্বি করি না এই গানটার সাথে সাথে, "তুমি সন্ধ্যার মেঘ মালা...." আমার এসব শুনতে আর ইচ্ছে করেনা।
সেদিন বন্ধু শীলার ফেসবুকে দেখলাম ও নাচচ্ছে এই গানটার সাথে, "আমি শুনেছি সেদিন তুমি সাগরের ঢেউয়ে ভেসে নীল জল দ্বিগন্ত ছুয়ে এসেছো..." আমি ওর পাতা বন্ধ করে দিয়ে অন্য পাতায় যাই। আমার আর ইচ্ছে করে না গানটা শুনতে।
আমি "ওয়ান ম্যান শো"র গন্ধ নিতে পারিনা, গভীর রাতে ঢাকার তিনচাকার ভ্যানে শুয়ে সারা শহর বেড়িয়ে আকাশ দেখতে মন চায় না আর, আমার এখন হাজি বিড়িয়ানি খেতে ইচ্ছে করেনা সে সব দিনের মতন, পূর্ণিমা দেখতে ভাল লাগে না আর এখন।
খোলা আকাশে ধুলো বিহীন বাতাসে আমি এখন শুধু প্রাণ ভরে বিশুদ্ধ নিশ্বাস নিতে চাই। তবু কি পারা যায় অনেক সময়? যে অশুদ্ধ ধুলো একবার ভেতরে ঢুকে বুকের ভেতর যে ক্ষত বানিয়ে গেছে তা কি আর এত সহজে সারে? বিশুদ্ধ বাতাস আজ প্রানে যে নিরাপদ অনুভুতি দেয় তাতে নতুন ক্ষত তৈরী হয়না বা পুরোনো ক্ষত আর বারে না তবে পুরোনো ক্ষত যে ধংস করে দিয়ে গেছে তা তো রয়েই যায়।
আমি বাংলা গান শুনিনা, শুনতে পারিনা, বাংলা গান আমাকে মন খারাপের দিস্তা এনে দেয়, এনে দেয় কুয়াশা, আর সেই সব দিস্তার ভাজে ভাজে জমে থাকা কালো কালো দিনরাত্রি গুলো আমাকে খনন করতে থাকে। সেই খনন থেকে বেড়িয়ে আসতে আমার ১০ বছর লেগেছে।
আমি আর চাই না আমার মেঘ পিয়ন মন খারাপের দিস্তা নিয়ে আসুক আমার কাছে।
আমার মেঘ পিয়ন আমাকে এখন হাসি আর ভাললাগা এনে দেয়, বাঁচার আশা এনে দেয়, ভালবাসা এনে দেয় দারুন ভালবেসে। এনে দেয় আরাম চেয়ার আর মায়ায় ভড়া এক চিলতে গালিচা। এনে দেয় শীতের ভোরের মিষ্টি আলো। আর এর জন্য আমাকে একাই যেতে হয়েছে যুদ্ধে।
আমি আমার জন্য যুদ্ধ করে আমাকে এনে দিয়েছি আরাম চেয়ার, গালিচা।
হাসান সাইদের মতন মানুষ দেশে সর্বত্র! এরা সর্বোচ্চো শিক্ষা নিয়ে পাপহীন ভাব চোখে মুখে মেখে সবার সামনেই চলে বেড়ায় আর কেড়ে নেয় অনেকের জীবন থেকেই রবিন্দ্রনাথ, সুমন, সুনীল, সুকান্ত, পূর্ণেন্দু, বিশুদ্ধ বাতাস, নাক, কান, কপাল, আংগুল, ঢাকার রাতের ভ্যান, ওয়ান ম্যন শো, গুচি রাশ, সকালের মিষ্টি রোদ, অরিত্র........আরো অনেক কিছু.....! এদের শাস্তি দরকার। আর কতকাল এরা এমন করে ক্ষত তৈরি করবে........আপনারা এর প্রতোরোধ করুন, রুমানাদের এনে দিন বিশুদ্ধ বাতাস। এনে দিন রোদ, অরিত্র। এনে দিন মেঘ পিয়নের ব্যাগ ভড়া শান্তুির দিস্তা।
মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভেতর ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।