আমার মন খারাপের পরেও, আমি আছিরে তোর পাশে... "পাগলা বাবা দরবারে তোর ফেলছি চোখের জল
আমার বাবা আমার কাছে আসবে কবে বল
বল বলরে আসবে কবে বল।
জন্মের পরে দেখি নাইরে আমার বাবারে এক নজরে
জন্মই যদি দিলো মোরে রাখলো কেন জনম দুঃখী করে
খোদা নাকি দীন দুনিয়ার দুঃখেরই সম্বল
আমার বাবা আমার কাছে আসবে কবে বল। “"
গানটা আমার খুব প্রিয়। সেই ছোটবেলা থেকেই। যদিও এইটুকুই পারি।
ছোটবেলাতেই বাবা-কে হারানো এই আমি বুঝতে শেখার পর থেকে বুকের ভেতর বাবা-র অভাব বোধ করতে থাকি। সেই অভাব তীব্র হোত যখন বন্ধুদের তাদের বাবা-র সাথে আব্দার-আহ্লাদ করতে দেখতাম। ঠিক মনে নেই গানটা প্রথম কোথায় শুনি বা শিখি। তবে এটা মনে আছে গানটা আমি যখনই গাইতাম আমার দুচোখে বন্যা হয়ে যেত। বুকের গভীরে বাবা-র জন্যে লালিত জায়গাটা ভিজে চুপসে যেত।
“"ও তোতা পাখিরে
শেকল খুলে উড়িয়ে দেবো মা-কে যদি এনে দাও
আমার মা-কে যদি এনে দাও।
ঘুমিয়ে ছিলাম মায়ের কোলে
কখন যে মা গেল চলে
সবাই বলে ওই আকাশে লুকিয়ে আছে
খুঁজে নাও। “"
আরেকটি প্রিয় গান। না, মা-কে হারানোর মত অভাগা এখনও হইনি। মা আছেন তার মমতার ছায়া নিয়ে আমার পাশে।
তবে চন্ডাল মেজাজের এই আমি মাঝে মাঝে আমার মা-কে রাগিয়ে দেই। একদিন হয়তোবা আমাকে শাস্তি দেবার জন্যেই মা এক সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গার আগেই আমাকে ছেড়ে চলে যান আমার বোনের বাসায়। সেদিনই টেলিভিশন এর কোন এক চ্যানেলে নির্মলা মিশ্রের কন্ঠে এই গান আমাকে আবার প্লাবিত করে চোখের জলে। আজকাল আমার মা-এর খুব ভালো লাগে হয়তো প্রায়ই আমাকে শাস্তি দিতে বা আমাকে বোঝাতে যে কোন প্রয়োজন না থাকলেও মা পাশে থাকার মানেটা কি। মা জানেন তার এই সর্বকনিষ্ঠ কন্যাটির চন্ডাল রাগ সম্পর্কে, যা কিনা ঝড়ের পূর্বাভাস বয়ে নিয়ে এলেও একটা শুকনা পাতাও ওড়ানোর ক্ষমতা রাখেনা।
তারপরেও মা প্রায়ই আমাকে একলা, ভীষন একলা করে দিয়ে চলে যান। মা আমার আশে পাশে যখন থাকেন তখন আমি প্রায়ই একটা গান জোরেশোরে গাই.....মা কে শোনাবার উদ্দেশ্যে......
“"তুমি যেদিন থাকবেনা মা
সেদিন আমার হবে কি?
সুখে থাকি দুঃখে থাকি
কাহার আসবে যাবে কি?”"
আমি জানিনা মা আমার সুরহীন কন্ঠের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে গাওয়া গান শোনেন কিনা; শুনলেও বোঝেন কিনা যা আমি বোঝাতে চাই।
ভীষণ ভীষণ প্রিয় আরেকটা গান........
“এমনি বরষা ছিলো সেদিন
শিয়রে প্রদীপ ছিলো মলিন
তব হাতে ছিলো অলস বীণ
মনে কি পড়ে প্রিয়?”
বৃষ্টি আমার প্রিয়। সত্যিকার অর্থেই প্রিয়। কোন জরুরী কাজের মুহূর্তেও যদি দেখি সে ঝড়ছে আমি ভালো লাগা নিয়েই তার থামার অপেক্ষা করি।
যেন আমার পাগল প্রেমিক দুষ্টুমি করছে আমাকে তার কাছে আটকে রাখবার জন্যে। আর আমিও তাকে প্রশ্রয় দিয়ে যাই যাই করছি। হ্যাঁ....বৃষ্টির সাথে একটা সময় থেকে আমার প্রেমটাই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে গেছে। ভীষন ভালো লাগায় ভিজেছিলাম তার হাত ধরে ঝমঝম বৃষ্টিতে। দুজনের দুটি আলাদা পথ তৈরী হবার দিনটিতেও ভিজেছিলাম তারই হাত ধরে।
সেদিন বৃষ্টি ছিলো ঝিরিঝিরি হাওয়ার মত। আর তার মাতলামো চলছিলো আমার হৃদয়ে। তাই গানটি যখনই আমি শুনি আমার বুকের ভেতর তোলপাড় করে।
“"আমি শুধানু তোমায় বল দেখি
কোনদিন মোরে ভুলিবে কি?
আঁখিপাতে বারি তুলিবে কি
আমার তরে প্রিয়?
মোর হাতখানি ধরে কহিলে হায়
মন দিয়ে মন ভোলা কি যায়?
কাঁদিবে আকাশ মোর ব্যথায়
বাদল ঝড়ে প্রিয়;
হায় তুমি নাই বলে মোর সাথে
তাই কি বিরহ বরষাতে?
এত বারিধারা আজি রাতে
অঝোরে ঝরে প্রিয়। ”"
বৃষ্টি হলেই এই গান আমার হৃদয়ে বাজতে থাকে।
গানটার প্রতিটা লাইন....প্রতিটা শব্দ যেন আমাকে ছুঁয়ে যায়; আমাকে টালমাটাল করে দিয়ে যায়। আমি হারাই আমার সত্তা আমার হারিয়ে যাওয়া কিছু সময়ে। অস্থির হয়ে আমি কামনা করি আমার সেই সর্বস্ব হরন করা মানুষটি আমাকে বলুক “মন দিয়ে মন ভোলা কি যায়?” ভীষন ভালো লাগা বর্ষা আমাকে কাঁদায় অঝোরে। যে বর্ষায় হুটোপুটি করেছি উঠোন জুড়ে সেই শৈশবে। কৈশরে যে বর্ষায় দাপিয়ে বেড়িয়েছি বাড়ির ছাদ দুরন্তপনায়।
রিনিক ঝিনিক অনুভূতিতে বারান্দার গ্রিল ধরে যে বর্ষার ছাটে ভিজেছি ভরা তারুন্যে। সেই বর্ষা আমাকে বিষাদে ডোবায় এই যৌবনবেলায়। আমার মনের অলিন্দে ঘুরে বেড়ায় গানটির দুটি লাইন “হায় তুমি নাই বলে মোর সাথে, তাই কি বিরহ বরষাতে?”
“"হঠাৎ একটা রোদ হয়ে যাও
আমার গা ছুঁয়ে যাও
আমার কান্না জমা কান্না কান্না লাগে
রোদ হয়ে যাও। "“
কৃষ্ণকলি'র কন্ঠে এই গানটা শুনি আমি যখন আমার সত্যিই তাকে দরকার হয়, শুধুই তাকে। আমার মন যখনই মেঘাচ্ছন্ন হয়, আমিও শিল্পীর সঙ্গে মনে মনে বলি “একটা মন খারাপ এর মনে রোদ হয়ে যাও দিনে রাতে।
“
“"বিকেলের সোনা যেমন ঝিলের জলে
প্রনয়ের রং ছড়িয়ে ছন্দ তোলে;
তেমনই চাওয়া ছিলো তোমার কাছে
সাগর তলের তেমন কোন পান্না হীরা-ও না। “"
আমার মধ্যেও কথাগুলো অভিমানের ঝড় তোলে যখন আমার ছোট্র কিছু চাওয়া পূরন করতেও ভীষন অনীহা তার। সত্যি কি কোনদিন এর বাইরে কিছু চেয়েছি আমি?! তবু তার অসহ্য নির্লিপ্ততায় আমারও তখন তাকে বলতে ইচ্ছে করে.....
“"তুমি বেশ বদলে গেছো
পুরনো সৈকতে আর পানসী ভিড়াওনা;
জানিনা কোন সাগরের ঝিনুক থেকে
একটি বারও পলক ফেলোনা। “"
তাকে আমার মনে করিয়ে দিতে ইচ্ছে করে এভাবেই .......
“"যে ঘাটে নোঙর ফেলে নিজের হাতে
দুচোখে স্বপ্ন নিয়ে দিন কাটাতে;
সে ঘাটের রঙমহলায় খিল দিয়ে আজ
পোষ মানানো পাখির ডাকেও একটু তাকাওনা। “"
জরা আর খরায় পীড়িত আমার মনে পড়ে প্রায়ই.........
“"আমার একটা নদী ছিলো
নদীর জল ছিলোনা কূল ছিলোনা
ছিলো শুধু ঢেউ।
“"
বুকের গভীরে বড় প্রিয় সেই নদী লাবন্যের পুষ্টিহীনতায় আজ খরস্রোতা।
জীবনের রঙ্গমঞ্চে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় এমন কিছু সময়ও আসে যখন নিজেই নিজের কাছে একটা প্রশ্নবোধক যতি চিহ্ণ হয়ে উঠি। কিছু গানের কথা দ্বিখন্ডিত এই আমাকেই যেন বিশ্লেষন করে...........
“"জল-ও ডাকে আগুন-ও টানে
আমি পরি মধ্যিখানে;
দুই দিকে দুই খন্ড হয়ে
যাই আবার যাইনা। “"
খন্ড খন্ড হয়ে যাই যখন এই গানটা শুনি...........
“"তেরে বিনা জিন্দেগীসে কই শিকবাতো নেহি
তেরে বিনা জিন্দেগীভি লেকিন জিন্দেগীতো নেহি
কাশ এ্যায়সা হো তেরে কদমোসে চুনকে মনজিল চলে
অর কাহি দূর কাহি
তুম আগার সাথ হো মনজিল-ও কি কমি তো নেহি
জি-মে আতাহে তেরে দামানমে সার ঝুকাকে হাম
রোতে র্যাসহে রোতে র্যা হে
তেরিভি আঁখোমে আসুওকি নমি তো নেহি। "“
হিন্দী গানের প্রতি অনেকেরই এ্যালার্জি আছে।
কিন্তু আমার আসলে পৃথিবীর কোন ভাষার প্রতিই এ্যালার্জি নেই। এই গানটা যখন শুনি তখন আর অন্য কোন গান আমি শুনতে পারিনা। আমার ভেতরে ভাঙ্গচূড় চলতেই থাকে।
এতো ভালোবাসি গান শুনতে। অথচ এখন আমি কোন গান শুনতে পারছিনা।
না, আমার কানে কোন সমস্যা হয়নি। সমস্যা হয়েছে আমার মনে। আর এই হতচ্ছাড়া মন সবকিছুর গভীরে এমনভাবে ডুব মারে যে মরতে বসে। পারছিনা বই পড়তে। একই সমস্যা।
বই-এর চরিত্রগুলো বড্ড প্রভাব ফেলে আমার উপর। সময়টা অস্থির যাচ্ছে। সামিনা-র গানটার মতই সবার মাঝে থেকেও আমি ভীষণ একা..............ভীষণ।
“"সময় যেন কাটেনা
বড় একা একা লাগে
এই মুখর জনারন্যে”"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।