নাজমুল ইসলাম মকবুল
খাল কেটে কুমির আনা এবং
আসুন যা করার নিজেরা করি
নাজমুল ইসলাম মকবুল
গত ১৪ জুন দেশরতœ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলীয় নেত্রীকে খাল কেটে কুমির আনতে বারন করেন এবং ৮জুন জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রীকে আহবান জানিয়ে বলেন আসুন যা করার নিজেরা করি। বক্তব্যের লাইনগুলোতে যেন প্রবল আন্তরিকতার অমৃত উপচে পড়ছে। এতো সুন্দর সুমধুর মোলায়েম ভাষায় আহবান জানানোর পরেও বিপরিত দিক থেকে সাড়া না পাওয়ায় অবাকই হতে হয়। আমরা যা করার তা ঠিকই করি। কিন্তু যা বলি তা অনেক সময় করি না বা করার সুযোগ হয়না অথবা করতে ভুলে যাই।
যা বলি তা করতে গেলে অনেক সময় নিজের স্বার্থে প্রচন্ড ধাক্কা লাগে কিংবা ডান বাম উপর নিচ সঙ্গী সাথী পড়শী প্রতিবেশী দুরবিদেশী বন্ধু স্বজন শুভাকাঙ্খী শুভানুধ্যায়ীদের তরফ থেকে বাধার প্রাচীর নাজিল হয়। তখন এসব আপনজনদের বাধার প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে নাগরিকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রতিশ্র“তির সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হয়না। কিন্তু তাদের তরফ থেকে মহামুল্যবান পরামর্শ নিয়ে যা নিজেরা করি তার দাগ খতিয়ান হাত নকশা পরিমাপ ইত্যাদি আম পাবলিকের কারো নিকট মধুর, কারো নিকট অম্ল মধুর, কারো নিকট টক আবার কারো নিকট তেতো মনে হয়। যে যাই ভাবুক আমরা কিন্তু যা করার নিজেরাই করি। নিজেরা অনেক কিছুই করি।
সকল কিছুর ফিরিস্তি দিতে গেলে অনবরত লেখা যাবে তারপরও শেষ হবেনা। কারন নিজেরা যা করার তা অনবরত করতেই থাকবো আর দিন দিন লেখার পরিধিও বাড়তে থাকবে। আমরা যা করি তার মাশুল দিতে হয় ভবিষ্যতে। তাই অতিতের কাজও বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের সামনে ভাসতে থাকে আয়নার মতো। আমরা নিজেরা যা করি তা ভেবে চিন্তেই করি।
নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্যই করি। এক সময়ে যেসব আলবদর রাজাকার স্বাধীনতা বিরোধী মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সাথে আমাদের ছিলো গলায় গলায় ভাব, তাদের নিয়ে একসাথে খুশগল্প করা উঠা বসা আয়োজন আপ্যায়ন দহরম মহরম আন্দোলন সংগ্রাম মিছিল মিটিং হরতাল অবরোধ অসহযোগ করে নিজেরাই খাল কেটে কুমির আনলাম। সেসব দহরম মহরমের ছবি আজও বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। চ্যানেলেও দেখানো হয়। সেসময় তারা হয়তো অপরাধী ছিলোনা তাই তাদের সাথে উঠাবসা করতে লজ্জা করেনি এখন মনে হচ্ছে আসলেই ওরা অপরাধী তাই তাদের আলতো করে জেলে ঢুকিয়ে দিলাম।
খাল কেটে কুমির আনার জন্য হরতাল অবরোধ ভাংচোর অসহযোগ করে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার তি করে সম্পদ ধ্বংস করেও জনগনকে বললাম এই তি মানুষের ভোটাধিকার আদায়ে যে লাভ হয়েছে তার তুলনায় নগণ্য। এখন আবার নিজেরাই বলছি খাল কেটে কুমির আনবেননা। কথায় বলে একি অঙ্গে কতো রূপ। সু কারচুপি ও স্থুল কারচুপির দাওয়াই বিতরণ করে শেষ করেছি। ভবিষ্যতে হয়তো রু কারচুপি ও তীè কারচুপির শিরাপও প্রস্তুতের অপোয় আছি।
তাই কাদের দিয়ে এ শিরাপ প্রস্তুত করাবো তার কোন কুল কিনারা হয়তো পাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
আমরা লাভের গুড় ভনের জন্য অনেক সময় আইনও পরিবর্তন করি। লাভের জন্য বাড়াতে বাড়াতে নিজেদের আকাশছুয়া বেতনের বন্দোবস্ত করি। নিজেদের জন্য বিনা শুল্কে কোটি কোটি টাকা মুল্যের গাড়ি আমদানি করি। আবার সময় সুযোগমতো বিক্রয়ও করে দেই।
নিজের সরকারী বাসভবন পাবলিকের টাকায় মনের মতো করে সাজাই অপরূপ সাজে। রাজউকসহ সরকারীভাবে বিভিন্ন সংস্থার প্লট ও ফ্যাটের মালিক হই মতার জোরে। রাস্তা ঘাটে চলাচলের সময় আম পাবলিকের চলাচল বন্ধ করে দিয়ে নিজের গাড়ি বহর নিয়ে হুইসেল বাজিয়ে বীর দর্পে খুশিতে আটখানা হয়ে চলাচল করি এবং গাড়ির বহর যত লম্বা হয় ততই মনে ফুর্তি লাগে। বিদেশে যাওয়ার সময় প্রমোদ ভ্রমনের মতো অনেক রথি মহারথীদের সাথে করে নেই। কারণ খরছাপাতিতো আর আমার নিজের পকেট থেকে যাচ্ছেনা।
টাকা গেলে যাবে আম পাবলিকের। আমরা আম পাবলিকদের ভাবি আধানাগরিক। আমরা উঁচুতলার রথি মহারথীরা প্রথম শ্রেণীর পূর্ণ নাগরিক। তাই রাষ্ট্রিয় সুযোগ সুবিধে ওই আধানাগরিকদের জন্য নয়। প্রথম শ্রেণীভুক্তদের জন্য।
তাই আমাদের পাসপোর্টের রং রূপও ভিন্ন। যেশে বিদ্যুৎ যে সচরাচর আসে তা আমরা টের পাই না, কারণ আমাদের সুরম্য বাসভবন বা উঁচুতলার অফিস পাড়ায় এধরনের লুকুচুরি খেলা চলেনা। কদাচিত হলে বিকল্প ব্যবস্থাও আছে। তাই আমাদের শরির ঘেমে কাপড় চোপড়ে উদ্ভট গন্ধ হয়না। সব সময় দামী পারফিউমের মৌ মৌ গন্ধ আমাদের মধ্যে বিরাজ করে।
আমরা চিকিৎসার জন্য হাওয়ার গাড়ি চড়ে সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে উন্নত দেশগুলোতে পাড়ি জমাই এবং সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে বহাল তবিয়তে আবার বীরের বেশে ফিরে আসি, তাই দেশে আধা নাগরিকদের চিকিৎসা সেবার হাল হকিকত দেখার আমাদের প্রয়োজন নেই। আমরা খাবার কেনার সময় সাধারন ক্রেতাদের যা নাগালের বাইরে সেসব দামী দামী খাবারই পছন্দ করি তাই আমাদের খাবার জন্য আনা মাছে বিষাক্ত ফরমালিন, ফলে বিষাক্ত কার্বাইড, দুধে খালের পানিসহ ভেজালের লেশমাত্র থাকেনা। আপনাদের ইনকাম কম, পয়সাকড়ি কম তাই ওসব খাদ্যের সাথে ভেজাল মিশ্রন শুধু আপনাদেরই জন্য ফ্রি। ভেজাল খেতে খেতে আপনাদের পেট ভেজাল সহনীয় হয়ে উঠেছে। ভেজালমুক্ত খাবারে আপনাদের পেট খারাপ করতে পারে।
তাই ভেজাল খাবার চালিয়ে যান অনায়াসে। এতে আমাদের চিন্তা ভাবনা করার সময় নেই। লাইনের এসব নিম্নমানের গাড়িতে উঠার প্রয়োজন আমাদের হয়না তাই গাড়ি ভাড়া পরিশোধও করতে হয়না। আপনাদের ট্যাক্সের টাকা দিয়েই আমরা অত্যাধুনিক গাড়ি বহর নিয়ে চলি। আপনাদেরই মাথায় লবন রেখে খাই।
তাই সিএনজির মুল্যও বাড়িয়ে দিলাম। আপনারা অতিরিক্ত গাড়িভাড়া দেন তাতে আমাদের কিছু যায় আসেনা। আপনারা যানজটে আটকে থাকুন। আমাদের তাতে আনন্দ আরও বাড়ে, কারণ আমরাতো রাস্তায় বেরোবার পুর্বেই আপনাদেরই দেওয়া বেতনে নিয়োজিত বিশেষ বাহিণীর সদস্যরা রাস্তা ফকফকা করেই আমাদের বের করে সসম্মানে এসকর্ট করে নিয়ে যায়। তাই যানজটের পেরেশানি, অহেতুক হর্ণ বাজিয়ে কান ঝালাফালা করা, দুনম্বরী লাইসেন্সেধারী ড্রাইভারের ছড়াছড়িতে সড়ক দুর্ঘটনা, ট্রাফিকদের চাঁদা সংগ্রহ ইত্যাদি দেখার কি দরকার।
আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে উল্টো শ্বশুর বাড়ী দেখিয়ে দেবে আমাদেরই বাহিণী। তবে আপনারা মামলা মোকদ্দমায় হেনস্তা হয়ে পকেট খালি করেন এতে আমাদেরই লাভ। আমাদের বিরুদ্ধে লেখলে, প্রতিবাদ করলে, মানববন্ধন, মিছিল, মিটিং করলে আমাদের গল্লা বাহিণী দিয়ে এক্কেবারে হাড্ডি গুড্ডি ভেঙ্গে উচিত শিা দিয়েই গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখবো। ন্যায়নীতিতে বার বার বিশ্বসেরার খেতাব অর্জন করে গ্রীনিচ বুক অফ ওয়াল্ড রেকর্ডে নাম লেখাবো। যাকে যে সময় ইচ্ছা ধরে নিয়ে আচ্ছামতো তুলোধুনো করার সু-সুবন্দোবস্তও আমাদের আছে।
প্রয়োজনমতো যতো ইচ্ছা রিমান্ডে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল অস্ত্র ব্যবহার করে নাকে মুখে ফেনা আনতেও আমরা কার্পণ্য করিনা। আমরা কারসাজির মাধ্যমে কৌশলে শেয়ার মার্কেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আনন্দে লাফাই কিন্তু আধানাগরিকেরা কপাল চাপড়িয়ে কাঁদে আর হাহুতাশ করে। একটি লোক আত্মহত্যাও করেছে। কিন্তু আমাদের পাষান হৃদয়তো গলেনা। আমরা এর বিচার করিনা।
কারণ যারা বড় বড় দান মেরেছে তারা আমাদের বগলের নিচে সব সময় ঘুর ঘুর করে আর আমাদের চলার পথের রসদ যোগায়। দেশে ব্যাপকহারে ঘুষ দুর্নীতির অবাধ সুযোগ করে দিয়ে আমলাদেরকে ফুরফুরে মেজাজে রেখে মতাকে পাকাপোক্ত রাখাটাও আমাদের অন্যতম জরুরী কাজ। আমরা আমাদের অতি আদরের প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্রকে বিনা ফিতে আধানাগরিকদের বুকের উপর দিয়ে ভারি যানবাহন চালিয়ে যাবার অনুমতি দিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলি। আমাদের পনের গোস্টিতো আর কোনদিন অভাবে পড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই অভাবী আধানাগরিকদের লাভের গুড় পিপড়ায় খেলে আমাদের কিছু যায় আসেনা।
আমাদের এক্কেবারে আপনজনরা সীমান্তে আধানাগরিকদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করলেও আমরা বলি ওরা আমাদের নাগরিকনা। আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে তারা ফারাক্কা টিপাইসহ বিভিন্নস্থানে বাঁধ দিয়ে বাংলার সবুজ ভুখন্ডকে ধুধু মরুভুমি বানালেও এমনকি পাদুয়ায় জমি দখল নেয়ার পরে প্রায় দেড় কিলোমিটার অভ্যন্তরে পিয়াইন নদী দখল নেয়ার কুমতলবে পিয়াইন নদীও তাদের ভুখন্ড বলে অযৌক্তিক দাবী করলেও আমাদের দুস্তি অটুট থাকে। গুলিতে পানিতে ভাতে মাছে মারার পরও গলায় গলায় ভাব থাকা বন্ধুকে আমাদের নৌ বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে কিছুটা হলেও ঋন পরিশোধ করে হালকা হওয়া দরকার নয় কি। তাই শেষবারের মতো আবারও বলি আসুন যা করার নিজেরাই করি!
লেখক: সভাপতি, সিলেট লেখক ফোরাম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।