'পার্বতীর ঠোঁটের মতো রং'_কচি আমপাতার মরচে রং দেখে বলেছেন কবি কালিদাস। তবে আমগাছ নাকি পুরুষ প্রজাতির। দেখলে নাকি পুরুষ পুরুষ মনে হয়। আদিকালে নাকি বয়স্ক কুমারীদের আইবুড়ো নাম ঘোচানোর জন্যই আমগাছের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হতো। আমকে সংস্কৃতিতে বলে আম্র, আবার রসালও বলে।
আবার রসাল বলতে শুধু আমকেই নয়, এর বৃক্ষকেও বোঝায়। আমের ইতিহাস অনেক কাল আগের। খ্রিস্টপূর্ব কাল থেকেই নাকি আমাদের জনপদে আমপ্রিয় বাঙালির সন্ধান পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয়, আম প্রায় সাড়ে ছয় হাজার বছরের পুরনো।
রামায়ণ ও মহাভারতে আম্রকানন এবং আম্রকুঞ্জ শব্দ রয়েছে।
দেবী সরস্বতীর পূজার উপকরণ হিসেবে আমের মুকুলের ব্যবহার এবং কোনো শুভ অনুষ্ঠানে আমপাতার ব্যবহার অনেককাল আগের। এগুলোকে মঙ্গলকারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারতের সাঁচির বৌদ্ধ ভাস্কর্যেও দেখা যায় আমগাছের ছবি। মহামতী গৌতম বুদ্ধ অনেকবার বসেছেন আমগাছের ছায়ায়। করেছেন ধ্যানও।
সে কারণেই আমপাতার ব্যবহার রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। মহাকবি কালিদাস 'মেঘদূত' কাব্যে 'আম্রকুট' নামে একটি পর্বতের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। আম্রমুকুলকে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রণয় দেবতা মন্মথের পঞ্চশরের একটি শর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ব্যাকরণবিদ পাণিনির রচনায় আম্রগুপ্ত নামের এক ব্যক্তি এবং আম্রপুর নামের একটি নগরীর কথা রয়েছে। মোটের ওপর এ জনপদের প্রাচীন এবং মধ্যযুগের শিল্প-সাহিত্যে আম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
হিন্দুস্তানের সর্বোৎকৃষ্ট ফল হিসেবে আমের কথা বলেছেন মোগল সম্রাট বাবর।
আমের জন্মস্থান নিয়ে তর্কের শেষ নেই। বৈজ্ঞানিক 'ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা' নামের এ ফল ভারতীয় অঞ্চলের কোথায় প্রথম দেখা গেছে, এ নিয়ে রয়েছে নানা মুনির নানা মত। তবে এ জনপদই আমের আদিবাস, এ সম্পর্কে আমবিজ্ঞানীরা একমত। বাংলায় আম।
ইংরেজিতে ম্যাঙ্গো। মালয় এবং জাভা ভাষায় ম্যাঙ্গা। চীনা ভাষায় ম্যাং-কাও।
ইতিহাসে পাওয়া যায়, ৩২৭ খ্রিস্টপূব্দার্বে সিন্ধু উপত্যকায় এসেছিলেন মহাবীর আলেকজান্ডার। তখন নাকি আম দেখে এবং খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি।
তখনই আম ছড়িয়ে পড়ে মালয় উপদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ এবং মাদাগাস্কারে। আফ্রিকায় আম চাষ হচ্ছে ১৩৩১ সাল থেকে। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে পোঁছেছে ১৬ শতকে। ১৬৯০ সালে নাকি ইংল্যান্ডে কাচের ঘরে আম চাষ হয়েছিল। ইয়েমেনে পেঁৗছে সতের শতকের দ্বিতীয়ার্ধে।
ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে উনিশ শতকে। ইতালিতে আম চাষের কথা জানা গেছে ১৮৬৫ সালে।
আঠারো শতকের শুরুতে আমেরিকা মহাদেশে আম নিয়ে গেছে পর্তুগিজরা। ১৭৭৪ সালে স্পেনীয় ব্যবসায়ীদের বগলদাবা হয়ে আম যায় মেক্সিকো। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাটিতে প্রথম আমগাছ হয় ১৮৬৫ সালে।
এভাবে আমাদের আম ছড়িয়ে গেল সবখানে।
[সূত্র : আমের ইতিহাস-ভূগোল, শেখ সাদী] ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।