স্কুলে থাকতে স্যার এর মাইর খায় নাই এমন আদম সন্তান বঙ্গদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কত রঙ্গের ঢঙ্গের মাইর যে উনারা জানতেন এখন চিন্তা করলে উনাদের সৃষ্টিশীলতায় অবাক হই!
আমার স্কুল জীবনে মাইর খাওয়া শুরু হয় শহীদ স্যার এর “স্পেশাল মাইর” খাওয়ার মধ্য দিয়ে। শুধু পড়া না পারলেই না, কোন পিচ্চি ক্লাসে কথা বললেও স্যার “স্পেশাল মাইর” দিতেন। এটা প্রয়োগ করা হত কপালে। অনামিকা আর মধ্যমা আঙ্গুলের নখ দিয়ে কপালে প্রচণ্ড জোড়ে টোকা দাওয়াটাই ছিল শহীদ স্যারের “স্পেশাল মাইর”।
খাওয়ার পর মাথা ঝিন ঝিন করত।
ক্লাস টু-তে আমার জন্য গৃহশিক্ষক রাখা হয়। নাম মহসীন স্যার। উনার মাইর দেওয়ার টেকনিক অনেকটা কনভেনশনাল হলেও নতুনত্বের ছোঁয়া ছিল। পড়া না পারলে জুলফির কাছে চুল জোড়ে টান দিয়ে থপাস করে থাবড়া মারতেন।
থাবড়া খাইতে খুব বেশি খারাপ লাগতো না কিন্তু জুলফির চুলে টান খাইলে ইহকাল পরকাল চক্ষের সামনে ভাইসা উঠত। স্যার আরেকটা শাস্তি দিতেন, সেটা হল আঙ্গুলের ফাঁকে কলম রেখে আঙ্গুল চাপ দাওয়া। আমার মনে হইত আঙ্গুল ভাইঙ্গা যাইব কিন্তু ভাঙ্গত না। ভাঙলেও মনে হয় এর চেয়ে কম কষ্ট পাইতাম না।
এরপর ক্লাস থ্রি তে স্কুল চেঞ্জ করলাম, স্যার চেঞ্জ হইল, স্যারদের মারার স্টাইলও চেঞ্জ হইল।
ওই স্কুলে সমাজ বিজ্ঞান নিত খালেদ স্যার। স্যার দেখতে যেমন ভয়ানক তেমন মাইর দাওয়ার কায়দাও অভিনব। স্যার প্রতিদিন পড়া ধরতেন, কেউ পড়া না পারলে শাস্তি দিতেন। প্রতিদিন নতুন নতুন কায়দার শাস্তি। একদিন স্যার ঘোষণা দিলেন, যে আজকে পড়া পারবে না তাকে বাম হাত চাটতে হবে।
ভাগ্যের অসীম কৃপায় সেদিন আমাকে বাম হাত চাটতে হয় নাই কিন্তু যারা পড়া পারে নাই তাদের বাঁ হাত চাটা দেখে আমার ছোট মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল।
প্রাইমারি শেষ করে হাই স্কুলে উঠলাম। এখানে ধর্ম স্যার সবগুলা ছিল কসাই। অন্য সাবজেক্ট পড়ি না পড়ি ধর্ম ঠিক পড়তাম। কিন্তু পড়লেও পারতাম না।
আরবি ব্যাকরন, মুখস্ত কি আর থাকে? একদিন না পারলেই কেল্লা ফতে। বেত্রাঘাত কত প্রকার, কি কি, প্র্যাক্টিকাল নলেজ পাইসিলাম উনাদের কাছে। কেউ পড়া না পারলে ৩ মিনিট ধরে স্যারেরা তার উপর বেত্রাঘাত করতেন। আবার বলতেন স্যার মারলে বেহেস্তে যায় মানুষ। হক স্যার এর কথা না বললেই নয়।
স্যার ছিল থুরথুরা বুড়া, গাল ভাঙ্গা, মুখে সাদা দাঁড়ি। যখন কাউকে মারা শুরু করতেন তখন হয়ে উঠতেন টগবগে যুবা। তখন হিন্দু ছাত্রদের দেখে হিংসা লাগতো, মনে হত ওরা কত্ত সুখি!
ক্লাস এইটে বিজ্ঞান নিতেন কালাম স্যার। স্যার এমনিতে ভালো পড়াতেন শাস্তিও কম দিতেন। একদিন স্যারের কি ভীমরতি উঠল, ক্লাসে বললেন যে পড়া পারবে না তারে চরম শাস্তি দিবেন।
শাস্তি হইল বগলের সামনের মাংসপিণ্ড ধরে জোড়ে চাপ দাওয়া। পড়া ধরা শেষ, যারা পারে নাই তারা দা৺ড়ায় আছে। স্যার এইবার শুরু করলেন শাস্তি পর্ব। আমিও দাঁড়ায় আছি, পড়া পারি নাই। স্যার দাঁড়ানো ছেলের সামনে গিয়ে বদল চাপ দিচ্ছে আর ছেলেটা চিৎকার দিয়ে উঠছে।
আমি ভাবলাম তেমন ব্যথা লাগে না, পোলাপাইন ওভাররিয়াক্ট করতাছে। কিন্তু যখন আমার উপর প্রয়োগ করল আমার মনে হইল আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যাইতাছি।
আমাদের সবারই ছেলেবেলার সুন্দর স্মৃতির সাথে এমন বেদনাদায়ক কিছু স্মৃতি মিশে আছে। যেগুলো না থাকলে হয়ত ছেলেবেলাটা পারফেক্ট হত। আমি আবার আমার সেই ছোটবেলায় ফিরে যেতে চাই যদি না সেখানে কোন শিক্ষক রূপি কসাই থাকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।