আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চে গুয়েভারা একটি বিপ্লবের নাম, রুপকথার নাম- জন্মদিনে চে কে লাল সালাম

আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না ! চে গুয়েভারা সম্পর্কে ফিদেল ক্যাস্ট্রো একবার মন্তব্য করেছিলেন : ‘চে একজন ওইরকম ব্যক্তি যাকে দর্শনমাত্রই মানুষ পছন্দ করবে তার সহজতা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, নিরপেক্ষতা, কমরেডসুলভ গুণাবলী এবং মৌলিকতার জন্য"চে এর পূর্ণ নাম এর্নেস্তো "চে" গুয়েভারা..একাধারে চে ছিলেন একজন আর্জেন্টিনীয় মার্ক্সবাদী, বিপ্লবী, চিকিত্সক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, গেরিলা নেতা, কূটনীতিবিদ, সামরিক তত্ত্ববিদ এবং কিউবার বিপ্লবের প্রধান ব্যক্তিত্ব... রুপকথার জন্ম: ১৯২৮ সালের ১৪জুন এর্নেস্তো গুয়েভারা রোসারিও, আর্জেন্টিনায় জন্ম গ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তার চরিত্রে অস্থির চপলতা দেখে তার বাবা বুঝতে পেরেছিলেন যে আইরিস বিদ্রোহের রক্ত তার এই ছেলের ধমনীতে বহমান। খুব শৈশব থেকেই সমাজের বঞ্চিত, অসহায়, দরিদ্রদের প্রতি এক ধরনের মমত্ববোধ তাঁর ভিতর তৈরি হতে থাকে। একটি সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারার পরিবারে বেড়ে ওঠার করনে খুব অল্প বয়সেই তিনি রাজনীতি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান লাভ করেন। তার বাবা ছিলেন স্পেনের গৃহযুদ্ধে রিপাবলিকানদের একজন গোড়া সমর্থক,সেই সংঘর্ষের সৈনিকদের তিনি প্রায়ই বাড়িতে থাকতে দিতেন।

হাপানিতে সারা জীবন ভোগা সত্ত্বেও তিনি দারুন মল্যবিদ ছিলেন। তার খেলধুলার পছন্দ তালিকায় ছিল সাঁতার, ফুটবল,গলফ, শুটিং। চে গুয়েভারা সাইক্লিংয়ের একজন অক্লান্ত খেলোয়ার ছিলেন। তিনি রাগবি ইউনিয়নের একজন অতি আগ্রহী সদস্য ছিলেন এবং বুয়েনস এয়ারস বিশ্ববিদ্যালয় রাগবি দলের হয়ে খেলেছেনও। রাগবি খেলার ক্ষিপ্রতার জন্য তাকে ফিউজার নামে ডাকা হত।

তার বিদ্যালয়ের সহপাঠীরা তাকে ডাকত চানচো বলে, কারণ তিনি অনিয়মিত স্নান করতেন এবং সপ্তাহে একবার মাত্র পোশাক পাল্টাতেন। বয়সন্ধি থেকে শুরু করে সারাটা জীবন তিনি কবিতার প্রতি আসক্ত ছিলেন বিশেষ করে পেবলো নেরুদা,জন কিটস, এন্টনিও মারকাদো, ফেদেরিকো গারসিয়া লরকা, গ্যাব্রিয়ল মিনস্ট্রাল এবং ওয়াল্ট হুয়িটম্যান, তিনি ভালো কবিতা আবৃত্তি করতে পারতেন। ১৯৫১ সালে ২২ বছর বয়সী চে.. মোটর সাইকেল অভিযান: চে গুয়েভারা ১৯৪৮ সালে বুয়েনস এয়ারস বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিত্সা বিষয়ে লেখাপড়ার জন্য ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে লেখাপড়ায় এক বছর বিরতি দিয়ে আলবার্টো গ্রানাডো নমক এক বন্ধুকে সাথে করে মোটর সাইকেলে দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমনে বেরিয়ে পড়েন যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পেরুর সান পেবলোর লেপার কলোনিতে (কুষ্ট রোগী দের জন্য বিশেষ কলোনি) স্বেচ্ছা সেবক হিসেবে কয়েক সপ্তাহ কাজ করা| মাচু পিচ্চুর যাওয়ার পথে তিনি প্রতন্ত অঞ্চলের দরিদ্র কৃষকদের চরম দারিদ্র দেখে মর্মাহত হন| এ কৃষকরা ধনি মহাজনদের অধিনে থেকে ছোট ছোট জমিতে কাজ করত| তাঁর ভ্রমণের পরবর্তি সময়ে তিনি লেপার কলোনিতে বসবাসকারী মানুষের মাঝের ভাতৃত্ব ও সহচার্য দেখে অভিভূত হন| এই অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর ডায়েরীতে(The Motorcycle Diaries,) তিনি লিখেছেন, ‘মানব সত্ত্বার ঐক্য ও সংহতির সর্বোচ্চ রুপটি এসকল একাকী ও বেপরোয়া মানুষদের মাঝে জেগে উঠেছে’। তার এই দিনলিপি নিউয়র্ক টাইমস এর বেস্ট সেলার এবং পরে একই নামে "The Motorcycle Diaries,"চলচিত্র বের হয় যা পুরস্কৃত হয়েছিল।

চে এর সেই মোটর সাইকেল.. বিপ্লব এবং বিপ্লবীর মৃত্যু: বিপ্লবের পরিকল্পনায় কাস্ত্রের প্রথম পদক্ষেপ ছিল মেক্সিকো হতে কিউবায় আক্রমণ চালান। ১৯৫৬ সালের ২৫শে নভেম্বর তারা কিউবার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। পৌছানোর সাথে সাথেই বাতিস্তার সেনাবাহীনি কর্তৃক আক্রন্ত হন। তার ৮২ জন সহচরী মারা যান অথবা কারাবন্দী হয়, মাত্র ২২জন এ যাত্রায় বেঁচে যায়। গুয়েভারা লিখেছিলেন সেটা ছিল সেই রক্তক্ষয়ী মুখামুখি সংঘর্ষের সময় যখন তিনি তার চিকিত্সা সামগ্রীর সাথে একজন কমরেডের ফেলে যাওয়া এক বাক্স গোলাবারুদ নিয়েছিলেন, যা তাকে পরিশেষে চিকিত্সক থেকে বিপ্লবীতে পরিনত করে।

১৯৬৫ সালে গুয়েভারা আফ্রিকায় যাবার সিদ্ধান্ত নেন এবং কঙ্গোয় চলমান যুদ্ধে তার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান কাজে লাগাবার প্রস্তাব দেন। প্রায় ১০০ জন আফ্রো-কিউবান তাদের সাথে যোগ দেন। এখানে তিনি কঙ্গোর গৃহযুদ্ধে অংশ নেয়া লুমুম্বা ব্যাটেলিয়ন সংগঠনের দায়িত্ব নেন । ১৯৬৬ সালের শেষের দিকে অথবা ১৯৬৭ এর শুরুর দিকে জমবিক স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিনিধির সাথে ডার এস্ সালাম নামক স্থানে দেখা হয়। সেখানে গুয়েভারা তাদের বিপ্লবী কর্মকান্ডে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন তার পর প্রমানিত হয় যে তিনি বলিভিয়ায় গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করছেন।

কাস্ত্রোর আদেশে তিনি মন্টেন ড্রাই ফরেষ্ট নামক দুর্গম এলাকায় প্রশিক্ষন চালান যেখানে বলিভিয়ার স্থানীয় সমাজতান্ত্রিকরা তাকে সাহায্য করেছিল। বলিভিয়ার সেনাবাহিনীর ভাষ্যমতে তারা গুয়েভারাকে ৭ অক্টোবর গ্রেফতার করে এবং তার মৃত্যু হয় ৯ অক্টোবর ১৯৬৭ সাল বেলা ১.১০ টায়। ম ধারণা করা হয় ১৯৬৭ সালের এই দিনটিতে লা হিগুয়েরা নামক স্থানে নিরস্ত্র অবস্থায় নয়টি গুলি করে হত্যা করা হয় বন্দী চে গুয়েভারাকে। তবে আরেকটি মতামত হচ্ছে এই দিন যুদ্ধে বন্দী হলেও তাকে এবং তার সহযোদ্ধাদের হত্যা করা হয় কিছুদিন পর। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন প্রতিবেদনে পরবর্তীতে এইসব দাবির সপক্ষে কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়।

এ সম্পর্কে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা সে সময় লিখেছিল, ‘একজন মানুষের সঙ্গে সঙ্গে একটি রূপকথাও চিরতরে বিশ্রামে চলে গেল। ’ গেরিলেরো হেরোইকো" চে গুয়েভারা লা কব্রে মেমোরিয়াল সার্ভিসে. প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী আলবের্তো কোর্দার তোলা ছবি ৫ মার্চ, ১৯৬০ চে এর একটি কবিতা চলো যাই অগ্নিময় প্রত্যুষে বালুকাময় আঁকা বাঁকা নির্জন পথ পেরিয়ে তোমার ভালোবাসার সবুজ স্বপ্নময় দেশের মুক্তির জন্য। চলো যাই জমাট বাঁধা অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতে আমাদের ললাটে অসংখ্য বিদ্রোহের তারা জ্বলছে শপথের বহ্নিতে না হয় আমরা মরবো অথবা জিতবো যখন প্রথম বুলেটের শব্দে দেশ জেগে ওঠে কারুময় ঘুম থেকে আচমকা কোন এক বালিকার মতোন তখনো অবিচলিত থেকো, হে যোদ্ধা আমরা তোমার পাশেই আছি... থাকবো। ... যখন তুমি জোর প্রচার করো: জমি-সংস্কার, ন্যায়, রুটি-রুজি আর স্বাধীনতার তখন আমরাও তোমার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করি: আমরাও আছি; আমাদের মুক্তির লক্ষ্যবানে যখন বিপক্ষের বন্যপশুরা হতাহত হয়: তখনো আমরা তোমার সাথে থাকি, আমাদের হৃদয় গর্বে স্ফীত হয়: আমরা সেখানে আছি। বিপক্ষের সজ্জিত সৈন্যের নেকড়ে আক্রমণে আমাদের প্রস্তাবিত সঙ্কল্পের ভিত কখনো টলবে না।

আমরা চাই: একটি রাইফেল, কিছু বুলেট আর লাঠিসোঁটা। তবু যদি বিপক্ষের রাইফেলগুলো ভীষণ গর্জে ওঠে এবং ইতিহাসের বিক্ষুব্ধ তরঙ্গে যদি আমরা লীন হয়ে যাই তখন কেবল আমাদের এইটুকুই চাওয়া: কিউবার অশ্রু য্যানো যুদ্ধেমৃত সৈনিকের এক একটি কাফন হয়। যদিও ..মহান চে কাজ করেছেন সমাজতন্ত্রের জন্য আর পুঁজিবাদই তাকেঁ সার্থকভাবে ব্যবহার করেছে। চে আজ এক মহৎ প্রেরণা নন, রোমন্টিক পণ্য। তারপরও অসম্ভবের স্বপ্ন দেখা মহান বিপ্লবী চে এর জন্মদিনে রইলো বিপ্লবী লাল সালাম.. ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।