আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা । সময়টা অসম্ভব অদ্ভুত ছিলো । চার্লস ডিকেন্সের ‘ A Tale of Two Cities ‘ উপন্যাসের ভাষায় স্পষ্টতই মিলে যায় “ It was the best of times , it was the worst of times , it was the age of wisdom , it was the age of foolishness , it was the epoch of belief , it was the epoch of incredulity , it was the season of light , it was the season of darkness , it was the spring of hope , it was the winter of despair . “ একইসাথে সেটা সাধারণ , রাজনীতির মারপ্যাচ না বুঝতে পারা আম-পাবলিকের জন্য আশার নতুন গান নিয়ে এসেছিলো । অন্যদিকে যারা একটু রাজনীতি , ইতিহাস সচেতন তারা ঘরপোড়া গরুর মত সিঁদুরে মেধের আভাস পেয়ে শংকিত হয়েছিলো । সাধারণ আম-পাবলিকে ভেবেছিলো সেইবারে অজস্র ‘ নয় ‘ কে ‘ হয় ‘ করে দেওয়া হবে ।
কোন এক ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতাবলে যেই জরাজীর্ণতার মাঝে তাদের জীবন ডুবে আছে তার থেকে তারা মুক্তি পেয়ে বাতাসে অনেকক্ষণ ধরে নিশ্বাস নেবে । সারা দেশে ‘ আইনের শাসন ‘ প্রতিষ্ঠা হবে । যারা জ্ঞানে পরিপূর্ণ দেড় কেজি ওজনের মাথাটা বিদ্বৎ সমাজের অংশ হবার কারনে দেড় লাখে বিকিয়ে দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন যত্রতত্র তাদের জন্য সময়টি নিঃসন্দেহে বসন্তের আগমনের পুর্বেই প্রি-ম্যাচিউর বসন্ত ছিলো । তারা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে যাচ্ছিলেন বিদ্যমান শাসকরা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কতটা ‘ স্থিতিশীল ‘ করেছে । তাদের লেখনীর প্রতিটি লাইনই ছিলো তথাকথিত বিদ্বৎ সমাজের মনের কথা আর সেই মনের কথাগুলো অজস্র মানুষের উচ্ছেদের সুবন্দোবস্ত করে দিচ্ছিলো ।
আর্বানাইজড সিটিতে কোন কোলাহল ছিলোনা । সবকিছুই চলছিলো অকল্পনীয় সুশৃংখলভাবে । রাস্তায় নামলে খোলা চোখে কোন অরাজকতা চোখে পড়তোনা । দেখে মনে হতো অদেখা স্বর্গ বুঝি ঈশ্বরের কৃপায় উপর থেকে এই ধূলি-কাঁদার মর্ত্যেই পাপিষ্ঠদের জন্য এসে হাজির হয়েছে যেন তার ফজিলত বেহায়ারা বোঝে । পাবলিকে আমোদে চোখ বুঁজে ।
জলপাই শাসনের গুণকীর্তণ করতে করতে তাদের মগজ স্থায়ীভাবে ড্যামেজড হয় । ঝকমকে , কৃত্রিম উজ্জ্বল্যের শহরে খালি চোখে কোন নোংরা , আবর্জনা চোখে পড়তোনা বলে তাকেই গোটা দেশের পরিস্থিতি ধরে নিয়ে নিজেদের একক , অন্তঃসারশূন্য অন্তঃর্দৃষ্টিকে সামগ্রিক ভাবার ধারাবাহিক স্টুপিডিটিও মতলববাজ শহুরে পাবলিকে করে এসেছিলো । তাদের আসন্ন নির্বিঘ্ন , আরাম-আয়েশের জীবনের পালে বাতাস আরো বেশী লেগেছিলো ডঃ ঈউনূসের নোবেল পদক লাভে । নোবেল পদক লাভের ৫ মাস পরেও তাকে নিয়ে আত্মসম্মানহীন , হীনমন্য বাঙ্গালির আমোদ-প্রমোদ কমেনি । পত্রিকার পাতায় কলামের পর কলাম চলে ।
কিন্তু অস্বচ্ছ , সীমিত দৃষ্টির অসারতাকে প্রমাণ করে দিতে ক্ষুদ্র ঋণের বোঝা সইতে না পেরে সবিতা রানীরা ঘরের আড়াতে আত্মহত্যা করে সেই সময়ের কদর্যতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় । সো কলড ইম্প্রেসিভ সোসাইটির ব্যালেন্স যেন নষ্ট না হয় সেই কারনে ঘটনাটির প্রচার হয় অত্যন্ত কম । তাতে কলকে মেলেনা বিশেষ । সময়ে সময়ে ঘটনা-পরিক্রমার অবশ্যম্ভাবীতার কারনে সবিতা রানীরা ঠিকই চোখের সামনে চলে আসে । সেই অদ্ভুত সময়ের কথা বারবার মনে করিয়ে দেয় ।
“ It was the best of times , it was the worst of times . “
বিঃদ্রঃ কুড়িগ্রামের সবিতা রানী গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণের কিস্তির টাকা শোধ করতে না পেরে গ্রামীণ ব্যাংকের মাঠকর্মীদের নিরন্তর চাপ সহ্য করতে না পেরে অবশেষে ২০০৭ সালের ১৩ মার্চ ঘরের আড়ায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে । কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে কৃষিব্যবস্থায় সাম্রাজ্যবাদ-আধা সামন্তবাদ ব্যবস্থা বহাল রেখে যেসব আরবান স্কাউন্ড্রেলরা দেশে ‘ গণতন্ত্র ‘ প্রতিষ্ঠার কথা বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে তাদের মুখে ঝামা ঘষে দিতে বারবারই সবিতা রানীরা চলে আসে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।