আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাণী-ফুল

বাংলাদেশে যে দু-তিন রকম কাঠবিড়ালি দেখা যায়, আমি তাদের বলি প্যারাট্রুপার কাঠবিড়ালি। এদেরই একটি হচ্ছে অতি দুর্লভ- গভীর বনের নিভৃতচারী নিশাচর প্রাণী; নাম হজসনের কাঠবিড়ালি। ইংরেজি নাম Hodgson’s Giant flying squirrel. শ্রীমঙ্গলের পাশের কমলগঞ্জের এক খাসিয়া বালক একটি শিকার করে ১৯৯৭ সালে, মৃত প্রাণীটির মাপ ও ওজন আমি নিয়েছিলাম (বাংলা মাপ ও ওজন), নাকের ডগা থেকে পিঠের ওপর দিয়ে লেজের গোড়া পর্যন্ত আমার এক হাত (৪৪ সেমি) ও লেজ এক হাত এক বিঘত চার আঙুল (৫০ সেমি)। ওটার সামনের দুপা ও পেছনের দুপায়ের সঙ্গে পাতলা চামড়ার যে গ্লাইডার বা ঝিল্লি ছিল- যেটি মেলে দিয়ে ওরা ছত্রীসেনা বা প্যারাসুট সৈনিকদের মতো নিচের দিকে নামে, সেটি টেনেটুনে দেখি বেশ শক্ত। প্রাণীটির বাংলা ওজন ৩ পোয়া।

চামড়ার পাখা মেলে দিয়ে মোহনীয় ভঙ্গিতে ওরা উঁচু গাছ থেকে নিচু গাছে নামে- ওপরে যেতে পারে না। ডানে-বাঁয়েও যেতে পারে না। নামার দৃশ্যটি অতীবও মনোহর। দৃষ্টিনন্দন। জীবনে দেখেছি মাত্র একবার।

ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল সেদিন, মায়ের নামার পরপরই নেমেছিল দুটি বাচ্চাও- এই বুঝি পড়ে যায়! এই ছানাই প্রথম দেখেছিলাম ১৯৯৩ সালের ১৪ অক্টোবরে সিলেট শহরের একটি বাড়িতে। সঙ্গে ছিলেন দাদাভাই রোকনুজ্জামান খান। দ্বিতীয়বারে ৩টি পিচ্চি ছানাকে (বয়স অনুমান দেড় মাস, ধরা পড়েছিল চোখ ফুটি ফুটি অবস্থায়) দেখি শ্রীমঙ্গলের সিতেশ বাবুর মিনি চিড়িয়াখানায়। তারিখটা ছিল ২৪ মে, ২০০৪। রাজকান্দির এক খাসিয়া পানপুঞ্জি থেকে সংগ্রহ করা হয় ছানা তিনটিকে।

কী সুন্দর যে দেখতে! মিষ্টি মিষ্টি চেহারা। দুষ্টু দুষ্টু চাহনি। ভারি চঞ্চল। হাতের তালুতে রাখি, পিচ্চি গ্লাইডার মেলেই লাফিয়ে নামে বিছানার ওপরে। সে এক মহামজাদার খেলা! দেখার মতো দৃশ্য! ওই পানপুঞ্জিতে গিয়েছিলাম আমি ও তানভীর।

বাসাটি তখনও জায়গামতো, অক্ষত। পানপুঞ্জির বয়সী মোটা মোটা দু-তিনটি পানগাছের ঘন সন্নিবেশিত পাতা-ডগার সংযোগস্থলে মুনিয়া পাখির মতো গোলগাল বাসা। বাসা নামানো হয়। অতি নরম। বাঁশের পাতা চিরেছে বাবুই পাখির মতো।

মাকড়সার জাল আর ঘাসফুলও আছে। খাসিয়ারা জানাল- পানের পাতার রস প্রিয় পানীয় ওদের, খায় পানের ডগাও। এ ছাড়া খাবার অন্য কাঠবিড়ালিদের মতো। বাসাটি আমি সংগ্রহ করে এনেছিলাম। ওই ৩টি ছানার ১টি মারা যায়।

বাকি ২টি ছিল যথেষ্ট যতেœ। বক্সে নরম তুলো-ঘাসের নরম গদিতে ঘুমাত ওরা দিনভর। জাগত রাতে। খেত মূলত আঙ্গুর ফল। বড় ছানাটির মাপ নিই।

শরীর প্রায় ৭ সেমি, লেজ প্রায় ৯ সেমি। ওজন প্রায় ১০০ গ্রাম। ছোট ছোট দাঁত, সুযোগ পেলেই মিষ্টি কামড় দেয়- গ্লাইড করে। দিনে ৩টি লেজের ভেতর মাথা গুঁজে পাশাপাশি ঘুমাত গোলগাল উলের বল হয়ে। এক নজরে বাচ্চাগুলো ছিল কালো, কানের ভেতরটা ও নাকের ডগা, পায়ের পাতা গোলাপি, পেট সাদা।

চোখ কুঁচফল কালো। তবে তলার দিকটা সাদাটে। বয়সী উড়ুক্কুর রং এক নজরে খয়েরি-বাদামি। গ্লাইডারের ওপরের দিকটা হালকা খয়েরি, ভেতরের ভাঁজের দিকটা সাদা। পিঠ ও লেজ গাঢ় বাদামি।

কান খয়েরি। চোখ কালো। তলপেট পোড়া ইটের মতো। বৃষ্টিতে ভিজলে এরা রোদে অথবা উড়ে উড়ে (গ্লাইড করে) শরীর শুকায়। উপজাতিদের কাছে শুনেছি- এরা ছানা পিঠে নিয়ে গ্লাইড করতে পারে- ছানা লুকোতে জানে গ্লাইডের তলায় কাশফুলের প্রসঙ্গ এলেই আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে রূপসী বাংলার মায়াবী চিত্র।

জলামাঠের ধারে, নদীর পাড়ে, বালুচরে এমনকি মাঝে মাঝে নাগরিক জীবনেও কাশফুল দুচোখে স্বপ্ন আঁকে। তাছাড়া পাহাড়েও এক জাতের কাশ হয়। রাজধানী ঢাকার কোলাহল ছাড়িয়ে কয়েক পা বাড়ালেই কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে। ছয় ঋতুর মধ্যে শরৎকাল শুভ্রতার প্রতীক। কারণ শরতে ফোটে শুভ্র কাশ আর শিউলি।

তখন আকাশে ছোপ ছোপ মেঘ, দূরবাহী, উড়ে যায় অজানায়। নিচে নদীতীরে কাশবন। তখন আশ্বিনের মিষ্টি বাতাস। দোল খায় অবিরত। নদী সরে যাচ্ছে দূরে আরও দূরে।

যেখানে এখন মাঝ নদী। এমন শাশ্বত দৃশ্য একান্তই বাংলার। সাদা মেঘের ভেলার সঙ্গে কাশফুলের সাদা ঢেউ শরতের বৈশিষ্ট্য। সাধারণত জলার ধারেই এরা স্বচ্ছন্দে বাড়ে ও বেঁচে থাকতে পারে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই আমাদের দেশে কাশফুল ছিল।

পৃথিবীর কোনও প্রান্তেও যদি কাশফুল ফোটে, তার সৌন্দর্য কিন্তু আমাদের তাড়িত করে না। কারণ এরা আমাদের প্রকৃতির আত্মজ। এ ফুলে লুকিয়ে আছে আমাদের আপন গন্ধ। কাশফুল সঠিকভাবে চেনা প্রয়োজন। কুশ এবং কাইচ্চা দেখতে প্রায় কাশফুলের মতোই।

আখের ফুলও অনেকটা একই রকম। কাশফুল অপোকৃত লম্বাটে। জাতকে কুশ ও কাশ সম্পর্কে অনেক চমকপ্রদ গল্প রয়েছে। তবে সেখানে কুশকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কারণ তার ভেষজ গুণ অনেক।

আবার কাশ ও কাইচ্চা চরাঞ্চলে বেড়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। প্রান্তিক মানুষ কাশকে জ্বালানি হিসাবেও কাজে লাগায়। ঝরাপালকের কবি জীবনানন্দ দাশ কাশফুলের সৌন্দর্য দেখেছেন ভিন্ন সুষমায়- ‘রাঙা রোদ, শালিধান, ঘাস, কাশ, মরালেরা বার-বার রাখিতেছে ঢেকে আমাদের রুক্ষ প্রশ্ন, কান্ত ক্ষূধা, স্ফুট মৃত্যু-আমাদের বিস্মিত নীরব..’ শরতে খুব সহজেই কাশফুল চেনা যায়। গাছ ধান গাছের মতো, তবে আরও অনেক উঁচু। পাতার কিনারা ধারাল।

বেশ কষ্টসহিষ্ণু। শীতে অনেকটাই নি®প্রাণ থাকে। নদীতে পালতোলা নৌকা, আকাশে পালতোলা মেঘ। আকাশের নীল রং, নদীর জলও নীল। সেই পটভূমিতে সাদা কাশফুল শাখা-প্রশাখা মেলে নদীর কূলে-কূলে অনেক দূর পর্যন্ত গিয়ে হারিয়ে যায়।

কাশফুলের বৈজ্ঞানিক নাম- Saccharum  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।