আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজম চৌধুরীর এন্টার্কটিকা অভিযানের ডায়েরী।(২য়-পর্ব)

আজম চৌধুরীর এন্টার্কটিকা অভিযানের ডায়েরী। (১ম-পর্ব) সাউথ অর্কনী দ্বীপে যাওয়ার পথে আমরা অনেক দৈত্যাকার আইসবার্গকে দেখলাম যারা আমাদের জাহাজের পাশ দিয়ে ভেসে যাচ্ছিল। এদের কোন কোনটির সাইজ ফুটবল স্টেডিয়ামের থেকেও বড়। যখন আমি কুপার বে থেকে ফিরছিলাম আমাদের বোট জোডিয়াকে করে,তখনই দুর্ভাগ্যবশত বোটের ভিতর পিছলে পড়ে পিঠে ব্যথা পাই। আমাদের জাহাজের ডাক্তার আমাকে ২দিন সম্পুর্ন বেডরেস্টের নির্দেশ দেন।

স্পস্টই আমি হতাশাই মুষড়ে পড়ি। এটা আমার জন্য মানা কস্টকর যে,অভিযানের এমন গুরুত্বপুর্ন ২টি দিন আমাকে বিছানায় থাকতে হবে। আর বিক্ষুদ্ধ সাগরে জাহাজ রোলিং করছিলো পাগলের মতো,আমার পিঠের ব্যথাও তার সাথে পাল্লা দিয়ে মারাত্বক আকার ধারন করছিলো। সবচেয়ে খারাপ হলো যে,আমি দাড়াতে পর্যন্ত ব্যর্থ হচ্ছিলাম। তদুপরি এই এন্টার্কটিকায় গ্রীস্মে সূর্য কখনো অস্ত যায় না,ফলে এখানে এখন অন্ধকার বলে কিছু নেই।

তাই ঘুমোতেও পারছিলাম না। একিই দিন আরেকটি জোডিয়াকে অন্য একজন কানাডিয়ান তার বোটে পিছলে পড়ে সোল্ডারের হাড় স্থানচ্যুত হয়। আর আরেক ইসরাইলী ফটোগ্রাফার তার পায়ের গোড়ালীতে এমনই চোট পান যে,অভিযানের বাকী সময়টুকু তাকে জাহাজেই থাকতে হয়। ডিসেপসন আইল্যান্ড এন্টার্কটিকা পেনিনসুলার উত্তরাংশে অবস্থিত। আমাদের যাত্রাপথে ক্রমেই বিশাল বিশাল আইসবার্গ নজরে আসছিলো।

কোন কোনটি আকারে বিশাল ও খুবই সুনীল। তারমধ্যে ছকবদ্ধ সাজানো আইসবার্গগুলো থেকে ২কিঃমিঃ থেকে বড় একটি আইসবার্গ হঠাত ভেঙ্গে এন্টার্কটিকার মুল ভূখন্ড পৃথক হয়ে পড়ে। এটি আমাকে আজও বিস্ময় জাগায় যে,কিছু লোক ভাবে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলে কিছু নেই। তারা এসব দৃশ্য দেখেনি। আর তারা এও জানেনা যে,এন্টার্কটিকার এসব সুবিশাল আইসবার্গ পৃথিবীর ৭৫% স্বাদু পানির ধারক।

আমরা এসব কে আজ ধীরে ধীরে হারাচ্ছি। ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। ডিসেপসন আইল্যান্ড এ আমাদের অভিযাত্রি প্রধান জানালেন যে আবহাওয়া ভালো নয় এবং তা ক্রমশ আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে,ফলে এ অবস্থায় আমাদের উপকুলে যাওয়া উচিত হবে না। কিন্তু আমি উপকুলে নামতে আগ্রহী হলাম,কারন ২দিন বিছানায় থাকাতে আমি সবার থেকে বেশী উদগ্রীব হলাম। কিছুক্ষন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমাদের দলনেতা জাহাজের ক্যাপ্টেনের কাছে গেলেন,কারন যত কিছুই বলি না কেনো এসব ব্যাপারে তিনিই হলেন অভিজ্ঞ।

কিছুক্ষনপর আমাদের দলনেতা যুগপত ভালো ও মন্দ দুটি খবরই আনলেন। ভালো খবর হলো,তিনি আমাদের নামার জন্য সবুজ সংকেত দিলেন। আর খারাপ খবর হলো,আমাদের এই ল্যান্ডিংটা হলো অনেকটা পাথুরে জলাভূমিতে নামার ন্যায়। কারন পাথুরে উপকুল হওয়াতে আমাদের জোডিয়াক পুরোপুরি তীরে ভীরতে পারবেনা,তাই আমাদের কোমর সমান বরফ শীতল জলে নেমে পড়তে হবে। তথাপি আমরা যখন ডিসেপসন আইল্যান্ডে নামলাম ,আবহাওয়া ছিলো খুবই ঠান্ডা ও প্রবল ঝড়ো বাতাসের সাথে বরফ পড়ছিলো।

বাতাস এতোই জোরে বইছিলো যে আমাদের কোন কিছু না ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ভীষন কস্টকর বলে মনে হচ্ছিল। (চলবে….) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।