জলপাই-বাদামি রঙের পিঠ-বর্মের বা খোলের ওপরে যেন ময়ূরের পাখনা বা প্রজাপতির ডানার ‘চোখ’ বসানোÑ চমৎকার কারুকাজ! সুচালো ধরনের নাকটির রঙ শ্যাওলা-সবুজ। চোখ কালো। পা কালচে-ধূসর। মাথার তালু জলপাই রঙের। পিঠ-বর্মে যেন বিচিত্র রঙের ধ্রুপদী চিত্র আঁকা।
পিঠের খোলটি দেখতে প্রায় গোলাকারÑ লম্বা-চওড়া, তাই প্রায় সমান সমান। এখানে যে ছবিটি ছাপা হলো সেটি আমি পাই গেল নভেম্বরের ২২ তারিখে, বাগেরহাটের ফকিরহাটের এক বাজারে। কাছিম বিক্রেতা এটির চার পা ছিদ্র করে শক্ত রশিতে বেঁধে রেখেছিলÑ চিৎ অবস্থায়। কেননা, উপুড় থাকলে এরা দৌড়ে পালাতে চায়। দাম জিজ্ঞেস করলাম।
বিক্রেতা দাম হাঁকাল ৪৫০ টাকা কেজি।
এটির মাপ ছিল লম্বায় ১ ফুটেরও বেশি। ওজন ৪ কেজি। আমার প্রবল আগ্রহে বিক্রেতা জানাল, তার ঠাকুরদা ফকিরহাটের উত্তরের হাওর থেকে (প্রবহমান ছোট চিত্রা নদীটি থেকে) একবার ৭০ কেজি ওজনের একটি কাছিম ধরেছিল ১৯৬৯ সালেÑ এই গঙ্গা কাছিমই। হ্যাঁ, মূল বাসভূমি এদের নদী-খাল-হাওর-জলাভূমি।
এদের ওজন ১শ কেজি পর্যন্তও হতে পারেÑ যদি টিকে থাকতে পারে। সেটা আজ আর সম্ভব হয় না। ওই বাজারে রোজই বিভিন্ন প্রজাতির কাছিম বিক্রি হয়। গঙ্গা কাছিমের মাংসের স্বাদ নাকি অনেকটা খাসির মাংসের মতো। তাই ভোক্তারা এদের আরেক নাম রেখেছে জলখাসি।
৭০-১০০ কেজি ওজনের একটি জলখাসির মাংসের স্বাদ লোভনীয় হওয়ারই কথা। বৃহত্তর খুলনা জেলার বহু হাটেই কাছিম বিক্রি হয় হেমন্ত-শীতকালে। আগে অনেক বেশি মিলত। পেশাদার-নেশাদার কাছিম শিকারিরা লোহার দ- বসানো বাঁনা বা কাঠি দিয়ে ঠুকে ঠুকে কাছিমের খোঁজ করত। আজো করে।
গঙ্গা কাছিমের আরেক নাম খালুয়া কাছিম। ইংরেজি নাম Ganges shoftshell Turtle. বৈজ্ঞানিক নাম Trionyx gangeticus. দক্ষ সাঁতারু, তুখোড় ডাইভার। মাটির ওপর দিয়ে দ্রুত দৌড়াতে পারে। শীতে রোদ পোহায়। জেলেদের জালে আটকা পড়ে।
বড়শি গেলে। পিঠের খোলও নরম ধরনের। তাই টেঁটা-বল্লমেও সজোর আঘাতে গেঁথে ফেলা যায়। মূল খাদ্য এদের ছোট ছোট মাছ, জলজ উদ্ভিদ, গুল্ম শ্যাওলা। অন্য জলজ প্রাণীর বা অন্য প্রাণীর মরদেহও পচে গেলে খায়।
নদী-খালের বন্ধু এরা, বন্ধু মানুষের। নির্বিচার শিকার, অবাধে বিক্রি ও অন্যান্য কারণে এরা বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে একদিন।
চামেলি নামটা আমাদের মোটামুটি পরিচিত হলেও ফুল ততটা চেনা নয়। এর প্রধান কারণ দু®প্রাপ্যতা। জানামতে ঢাকায় বলধা গার্ডেন, চামেরি হাউস বা সিরডাপ অফিস এবং গাজীপুরের শালনায় অবস্থিত শালনা অরচ্যাড নামক বাগান বাড়িসহ অল্প কয়েক জায়গায় চামেলি চোখে পড়ে।
তবে চামেরি হাউসের লতাটি বেশ পুরনো। বলে রাখা ভালো কেউ কেউ চামেরি হাউসকে ভুল করে চামেলি হাউস নামে ডাকেন। চামেলির বাংলা নাম জাঁতি। হিন্দি নাম চমেলি। জাঁতি নামটি রবীন্দ্রনাথ কবিতায় অসংখ্যবার ব্যবহার করেছেন।
‘গাঁথ যূথি, গাঁথ জাঁতি/ গাঁথ বকুল-মালিকা। ’ আবার ‘চলিলে সঙ্গে, হাসিলে অনুকূল/ তুলিনু যূথি, তুলিনু জাঁতি, তুলিনু চাঁপা ফুল। ’ নজরুলও তার প্রশংসা করতে ছাড়েননি। ‘বনে মোর ফুটেছে হেনা চামেলি/ যূথী বেলি। ’
চামেলি কাষ্ঠল লতার হালকা গড়নের চিরসবুজ গাছ।
পাতা বিপ্রতীপভাবে ছোট কাশফুলের ন্যায়, রঙ সাদা, পাপড়ি সংখ্যা ৫ বা ততোধিক, সুগন্ধি। আকারে জুঁইর চেয়ে বড়। দলনল ২ সেমি লম্বা। প্রধান প্রস্ফুটনকাল গ্রীষ্ম হলেও বর্ষায় পর্যাপ্ত ফুল থাকে। গাছ ছেঁটে ঝোপও বানানো যায়।
বলধা গার্ডেনের গাছটি সাইকি অংশে। তার পাশেই আছে শারদ মল্লিকা। বংশবৃদ্ধি কলমে। গন্ধসার তৈরির জন্য বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করা হয়। বৈজ্ঞানিক নাম Jasminum grandiflorum।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।