আমি এবং আরণ্যক ছাইরংয়া বধ্যভূমিতে দাড়িয়ে দেখছি শেষ সূর্যাস্ত “হতভাগা নদীগুলো নাব্যতা ফিরে পাক, তিমিরের সারাবেলা, অপেক্ষায় ঋজু উদ্ভিদগুলো শুষ্কতা ভুলে খুঁজে পাক নিরেট সজীবতা” এরকম জীবন্ত কিছু অভিপ্রায় মুঠোয় ভরে তির্যক রেখা ধরে পাশাপাশি হাঁটছি আমি এবং আরন্যক, ওর বিপ্রতীপ মুখায়ব জুড়ে নেই তিক্ষ্ণ বৈপরিত্য, নতমুখে তীব্র গ্লানীর প্রলেপ মেখে নিয়ে আমার কাছে এসেছিল কয়েক লাইন কবিতা ধার চাইতে; আমি বিজয়ের আনন্দে কয়েকবার বাঁকা হাসিতে রক্তাক্ত করতে চেয়েছিলাম ওর তিতকুটে মুখায়ব, প্রহরব্যপি আমার স্নায়ুতে বিষ ঢেলে যে আনন্দ পায়, তাকে কবিতার মতো ঔষধি করূনা করাটা একেবারেই রীতিবিরুদ্ধ মনে হলো; কিন্তু উপেক্ষা করতে পারিনা সেন্টিমেন্ট নামক আতলামী, তার এলোমেলো চুল, রং ঝলসানো জিন্স ও শার্ট জুড়ে রাশি রাশি ধুলোর আস্তরন, কেন জানি মায়া পড়ে যায়, যেমন টেবিলের সাথে চেয়ার কিংবা চেয়ারের সাথে শরীর। ওর কাঁধে হাত রেখে বলি “ বিকৃতির গাঢ়তায় চোখ রেখে এভাবে কতটা সময় করবি নান্দনিকতার অনুসন্ধান ?” অদ্ভুত মুঢ়তায় ওর চঞ্চল ঠোঁটজোড়া নড়ে ওঠে- “বিকৃতিটা ঠিক কখন থেকে শিল্প হয় সেটা ঠিক বলতে পারবনা । তবে ধ্বংসের ভেতর যে গোলাপী রংয়ের আমন্ত্রন আছে সে ব্যপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত,কথাগুলো আমার মুখে অসমিচীন কেননা এতসব উচ্চমার্গীয় কথাবার্তা সব জ্ঞানপাপীদের জন্য, নইলে যে বাহারী মুখোশটা অভিনয় ভুলে খুবলে খাবে মুখশ্রী, তখন আচমকা ভেঙ্গে পড়ার শব্দে আমারই মতো কয়েকটা পাথুরে চোখে জমে উঠবে চিরস্থায়ী বরফকুচি”। কথাগুলো বেশ জটিল মনে হয়, রহস্যের অভয়ারন্যে হাতড়াতে গিয়ে ভেতরটা অকারনে পিছিয়ে পড়ে; এর চেয়ে বরং দু’চোখে ভরে আকাশটা দেখা যাক, যেটাতে আর যাই হোক এমনতর জটিলতা নেই, মাথা ছাড়িয়ে ক্রমান্বয়ে উপরে উঠছে শোবার ঘর,সুইমিংপুল,ছাদ তার ঠিক উপরে...তার উপরে...তার উপরে.... রুপোলী মেঘের স্রোতে টলটল করছে আধখানা বাঁকা চাঁদ, আমরা হাঁটতে থাকি ফেলে আসা দান্দ্বিক নৈ:শব্দের বিষন্ন ফুটপাতে, আরণ্যক আলতো করে আমার কাঁধে হাত রেখে বলে- “দ্যাখ চাঁদটা কেমন নি:শব্দে গলে যাচ্ছে, তারও সময় হয়েছে ফুরোবার”। আগপাছ না ভেবেই বলে উঠি “ এতটা অবাক হবার কিছু নেই, অপেক্ষায় আছি কৃষ্ণপক্ষের ,তারপর আরেকটি আনকোরা চাঁদের”। কি অদ্ভুত! ঠিক এই মুহূর্তে মনে হলো আমি ও আরণ্যক পরস্পর জায়গা বদল করেছি। ১১.০৬.২০১১ অফিস ( মহাখালী)
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।