তবু সে তো স্বপ্ন নয়, সব-চেয়ে সত্য মোর, সেই মৃত্যুঞ্জয়
আজ ও এসেছে ছ'মাস আগের রূপে। নিরাভরণ ছাত্রীর মত, সাধারণ সালোয়ার কামিজ, প্রসাধনীর কড়া সুবাসও নেই। যেন এই মাত্র কোন ক্লাস করে ক্লান্ত হয়ে এলো। বিয়ের উত্তেজনাও আস্তে আস্তে থিতিয়ে পড়ে, মানুষ বোধ হয় ফিরে যেতে চায় ধীর-স্থির রিলেক্সিং অভ্যস্ত আগেকার জীবনে। সম্পূর্ণ সম্ভব না, কোন কোন দিক দিয়ে।
অবশ্য সুন্দর ও সব সময়ই। বিধাতা সত্যি কত যত্ন নিয়ে কোন কোন মানুষকে বানান!
এখনো ফেবুতে ইশারায় কতজনের হা-হুতাশ। ও লক্ষ্মী মেয়ের মত সান্ত্বনা দেয় - "আল্লাহ পাক তোমার জন্য আরো ভালো কিছু রেখেছেন। " পড়ে আমার বেশ হাসিই পায়। ও মনের দিক দিয়ে সত্যি কি ছেলেমানুষ! ফেবুতে স্বামীর সাথে প্রেমালাপ করে।
হিন্দী সিরিয়ালের পছন্দের কথা সবাইকে জানায়, যা কখনো আমার দেখা হয় না। একবার জানি কার ওপরে বেশ রাগ করে কড়া কিছু লিখেছিল। এক আত্মীয়া আতংকিত হয়ে জানতে চেয়েছিলেন কি হয়েছে। ও বলে নি। আমার মাঝে মাঝে এমন ভয় হয়! এমনও তো হতে পারে কোন ছেলেকে ও অতীতে কোন সময় অজস্র বানান ভুলে ভরা এক চিঠি লিখেছিল, বা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ফান-পোজ দিয়ে ছবি তুলেছিল; এখন সে ব্ল্যাক মেইল করার ভয় দেখাচ্ছে।
আজকাল মেয়েদের খুব সাবধান থাকতে হয়, অনেক ছেলে এত বজ্জাত হয়!
_______________________
আজও আমার টেবিলে অনেক কাগজ।
-কি , সেই অঙ্কের ধাঁধার খেলা? সময় নষ্ট।
-এই প্রব্লেমটা সল্ভ করতে পারলে ১ লাখ ডলার পুরস্কার আছে।
ওর বড় চোখ আরো বড় হয়ে যায়।
- এক লাখ ডলার? একটা প্রব্লেমে?
আমি হাসলাম।
- আমেরিকার ক্লে ইন্সটিটিউট সাতটা প্রব্লেমের প্রতিটার সলিউশনের জন্য এক মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। রাশিয়ার পাগলা গণিতবিদ গ্রিগরি পেরেলমান এর মধ্যেই একটার সমাধান দিয়ে ফেলেছে, কিন্তু পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেছে। এই লোক তাকে দেয়া ফীল্ডস পদকও নেয় নি। তবে আমার এটা সেই মিলেমিয়াম প্রব্লেমের কোনটি নয়।
না, আমার বোঝা উচিত ছিল ও ফীল্ডস পদকের নাম শোনে নি।
একটু কনফিউজড চোখে তাকালো।
-অংকে তো কোন নোবেল নেই, তাই না?
- নোবেল তো প্রতি বছর দেয়া হয়। ফীল্ডস দেয়া হয় চার বছর পর পর, শুধু গণিতে। যদিও টাকা অনেক কম, এক দিক দিয়ে নোবেলের চেয়ে বড়।
ও যেন কি মনে করবার চেষ্টা করল।
তারপরে হঠাৎ খুঁজে পেল।
- আচ্ছা, বাংলাদেশের এক কেমিস্ট নাকি টেকনলজীর নোবেল প্রাইজ পেয়েছে - এক মিলিয়ন ডলার।
আমি একটু দ্বিধায় পড়ে গেলাম। কাগজে এভাবেই খবরটা ছাপা হয়েছিল বটে। আরসেনিক ফিল্টার উদ্ভাবনের জন্য একটা আঞ্চলিক পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল, তাতে প্রথম পুরস্কার পেয়েছিল এক বাংলাদেশী।
এটাকে নোবেলের তুলনীয় বলা কি ঠিক? তার ভাই চৌকষ বাক্যবাগিশ রাশিয়ার ডিগ্রীধারী অধ্যাপকটি মিডিয়াকে সেভাবেই বুঝিয়েছিল। রাশিয়া-ফেরতদের আমি কেন জানি খুব ভয় পাই। বিষয় পালটালাম।
- আচ্ছা, গ্রেটেস্ট কমন ফ্যাক্টরকে জানি কি বলে বাংলায়, অনেক আগে করেছি, ভুলে গেছি।
ওর মুখ খুব উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
এই জিনিসটি ও জানে। না, তাকে খুশি করতে না, আমি আসলেই ভুলে গেছিলাম।
- গসাগু।
- ঠিক, এখন মনে পড়ছে। আমি যা চেষ্টা করছি তার নাম বীল'স কঞ্জেকচার।
কাগজে তাকে বড় বড় করে লিখে দেখালামঃ
A^x + B^y = C^z
এই সমীকরণে সব রাশি যদি পজিটিভ পূর্ণ সংখ্যা হয় , আর x,y, z যদি ২ এর ওপরে হয়, তাহলে দেখাতে হবে যে A,B,C-এর এক মৌলিক সাধারণ উৎপাদক থাকবে।
আমি জানি ও অংক পছন্দ করে না।
- হুঁহ, এটা আবার একটা অংক হলো। গসাগু লোকে ক্লাস ফাইভে করে।
আমি একটা সত্যিকার দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
- যদি আবার ক্লাস ফাইভে ফিরে যেতে পারতাম।
ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে ফেলল। হঠাৎ উঠে পড়ল।
-যাই। কাজ আছে।
____________________
ও চলে যাওয়ার পরে আমি হঠাৎ ভাবতে শুরু করলাম - আমাদের তিন জনের মধ্যে কোন সাধারণ উৎপাদক নেই। ও সুন্দর, গৌর, লম্বা। বাকী দুজন নয়। আবার বাকী দুজন সরকারীভাবে 'মেধাবী', ও বেচারীর একাডেমিক ভাগ্য খুবই খারাপ। ও খুবই সরল, বাকি দুজন জটিল।
ও আর ওর স্বামী একই এলাকার, আমি অন্য জেলার। ও আর আমি একই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিলাম, ওর স্বামীর পাঠ অন্যখানে।
তবে আমরা তিনজনই ওর শুভাকাংক্ষী - গসাগু।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।