বিন লাদেনের মৃত্যু
অসত্য এবং অজানা
বিন লাদেনকে যারা হত্যা করেছে তারা নিজের ইচ্ছায় করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নির্দেশ তারা পালন করেছে। এই বিশেষ কাজের জন্য তাদের সতর্কভাবে নির্বাচিত করা হয় ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এও জানা আছে যে মার্কিন রাষ্ট্রপতি কোনোও একজন সৈনিকের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন।
পাকিস্তানের আবোতাবাদ শহরে মিশন শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর আমেরকিার সবথেকে সম্মানিত সামরিক আকাদেমি এবং গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ কেন্দ্রের সদর দপ্তর হোয়াইট হাউস থেকে আলকায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন-এর মৃত্যুসংবাদ সতর্কভাবে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়।
যুক্তিসঙ্গতভাবে তামাম দুনিয়ার মনোযোগ এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিষয়টির ওপরই আলোকপাত করেছিলো।
জনপরিসর থেকে বাকি খবর সরে পড়েছিলো।
মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে প্রেসিডেন্টের যন্ত্রণাবিধ্বস্ত বক্তৃতা দেখা গেছে। ধরা পড়েছে জনপ্রতিক্রিয়ার ফুটেজ।
এটি স্বাভাবিক যে বিস্ময়ের জটিলতা গোটা বিশ্ব জানে।
১৭ কোটি ১৮ লক্ষ মানুষের দেশ পাকিস্তান। পরমাণু অস্ত্র পাকিস্তানের আছে এবং চিরায়তভাবেই পাকিস্তান মার্কিন সহযোগী। এই পাকিস্তানেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো ১০ বছর ধরে বিধ্বংসী যুদ্ধ চালিয়েছে।
এ সন্দেহাতীত যে পাকিস্তানের মতো ইসলামিক দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সহযোগীদের আফগানিস্তানের মতো অন্য এক ইসলাম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত লড়াইয়ের সমঝোতায় আসতে পারে না। আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের জটিল, পাহাড়ী সিমানা রয়েছে যা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি নির্ধারণ করে দিয়েছিলো।
এই বিভাজনরেখার দু’পাশেই সাধারণ মানুষ বসবাস করেন।
এমনকি মার্কিন গণমাধ্যমও বুঝেছিলো যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রায় সবকিছুই গোপন করছিলেন।
পশ্চিমী সংবাদসংস্থাগুলি, এ এন এস এ, এ এফ পি, রয়টার্স এবং ই এফ ই বিভিন্ন সংবাপত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট এই ঘটনার প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া শুরু করেছে।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস দেখেছে হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া সরকারী বিবৃতির সঙ্গে বরিষ্ঠ গোয়েন্দা কর্তাদের বয়ানের পার্থক্য রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রের মতে বিন লাদেনের মৃত্যুর সময় লাদেন নিরস্ত্র ছিলো।
যদিও প্রথমদিকে তাঁরা নিশ্চিত ছিলেন লাদেন প্রতিরোধ করেছিলো। আগ্নেয়াস্ত্রের তুমুল লড়াই শেষে লাদেন মারা যায়। কিন্তু চূড়ান্তভাবে মার্কিন গোয়েন্দাকর্তারা স্বীকার করে নিয়েছেন লাদেনের হত্যার সময় সে নিরস্ত্রই ছিলো।
‘‘নতুন প্রাপ্ত বিশদ খবর থেকে বোঝা যাচ্ছে, লাদেনের আস্তানায় হানা পর্ব বিশৃঙ্খল ও রক্তাক্ত হলেও তা ছিলো পুরোপুরি একতরফা। বিন লাদেনের নিরাপত্তার দেখভাল করা কিছু মানুষকে দ্রুত সরিয়ে দেয় ২০ জনের বেশি নৌসেনাদের এক বাহিনী।
’’
‘‘... দ্য টাইমস এখন নিশ্চিতভাবেই বলছে লাদেনের আস্তানার চত্বরে অপারেশন শুরুর সময়ই শুধুমাত্র লাদেনেরে রক্ষীরা গুলি ছুঁড়েছিলো। ’’
‘‘বিন লদেনের বিশ্বস্ত সঙ্গী আবু আহমেদ আল কুয়েইতি লাদেনের বাড়ির লাগোয়া অতিথিশালার দরজার পিছন থেকে গুলি ছুঁড়েছিলো। ’’
‘‘কুয়েইতি এবং এক মহিলা অতিথিশালায় নিহত হওয়ার পর মার্কিন সেনাদের ওপর আর গুলি বর্ষণ হয়নি। ’’ পরিচয় প্রকাশ না করেও এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে খবরের কাগজ-এ তথ্য জানিয়েছে। ’’
‘‘মঙ্গলবার, সোমবারের সকালের ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জে কার্নি নিশ্চিতভাবেই বলেন, মার্কিন কম্যান্ডোবাহিনীকে গোটা অপারেশন চলাকালীন তুমুল গুলিবর্ষণের মোকাবিলা করতে হয়।
’’
‘‘সি আই এ অধিকর্তা লিওন ই পানেট্টা জানান, লাদেনের আস্তানার চত্বরে ঢুকে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সময় মার্কিন কম্যান্ডোবাহিনীকে গুলির মুখোমুখি হতে হয়। ’’
‘‘অন্যদিকে যদিও কাগজটি নিশ্চিত করেছে লাদেনকে গুলি করে মারার সময় লাদেন কোনোও অস্ত্র তুলে ধরেনি। শীর্ষ তলায় পৌঁছে কম্যান্ডোরা একটি ঘরে ঢুকে ওসামা বিন লাদেনকে দেখতে পায়। তার হাতে ছিলো একটি একে-৪৭ এবং একটি ম্যাকারভ পিস্তল। ’’
ওয়াশিংটন থেকে এক সংবাদসংস্থা জানাচ্ছে কেবল একজন ব্যক্তিই মার্কিন কম্যান্ডোদের ওপর গুলি চালিয়েছিলো।
‘‘রাতের অন্ধকারে বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টারে ৭৯ জন কম্যান্ডোকে আবোতাবাদে ওসামা বিন লাদেনের আস্তানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই আবোতাবাদ, ইসলামাবাদের উত্তরে। রাডার পর্যবেক্ষণ এড়াতে কপ্টারগুলিকে মাটির অনেক নিচ দিয়ে উডিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পাকিস্তানকে এই হানাদারির খবর আগাম দেওয়া হয়নি।
‘‘দু’টি হেলিকপ্টারে ২০ জনের বেশি মার্কিন নৌ সিল বাহিনীকে লাদেনের আস্তানায় পাঠানো হয়।
লাদেনের আস্তানা ১২-১৮ ফুট (৪-৬ মিটার) উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। পাঁচিলে তার কাঁটার জাল। মার্কিন অফিসারদের প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, একটি এম এইচ-৬০ ব্ল্যাকহক কপ্টার রাডার নজরদারি এড়িয়ে যেতে পারলেও যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য কপ্টারটিকে ব্যবহার করা যায়নি। ’’
‘‘কম্যান্ডোদের একটি দল কম্পাউন্ডের মূল বাড়ির পরেই ছোটো গেস্ট হাউসের দিকে ছোটে। বিন লাদেনের বিশ্বস্ত সহযোগী গুলি ছোঁড়ে।
সে এবং তার স্ত্রী নিহত হয়। এর আগে হোয়াইট হাউসের খবর ছিলো প্রায় ৪০ মিনিট ধরে গুলি বিনিময় হয়। কিন্তু এর পর প্রকাশিত খবরের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের আগের বয়ানের মিল নেই। জানা গেছে লাদেনের ওই বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাই ছিলো একমাত্র ব্যক্তি যে মার্কিন কম্যান্ডোদের ওপর গুলি ছুঁড়েছিলো। ’’
‘‘মার্কিন বিশেষবাহিনীর অন্য একটি দল মূল তিনতলা বাড়িতে ঢোকে।
তাদের সঙ্গে লাদেনের বিশ্বস্ত সহযোদ্ধার ভাইয়ের লড়াই হয়। ভাইয়ের এক হাত পিছনে ছিলো। এর ফলে মার্কিন সিল বাহিনীর মনে হচ্ছিল যে তার হাতে বন্দুক থাকতে পারে। এন বি সি নিউজ-এর খবর আদতে ভাইয়ের হাতে বন্দুক ছিলো না। সেও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।
’’
‘‘সিঁড়ি বেয়ে কম্যান্ডোবাহিনী ওপরে ওঠে। বিন লাদেনের ছেলে খালিদকে দেখতে পায়। খালিদ নিহত হয়...’’
‘‘সব থেকে ওপরের তলায় তারা বিন লাদেন এবং তার স্ত্রী-কে শোওয়ার ঘরে দেখতে পায়। লাদেনের স্ত্রী কম্যান্ডোদের দিকে ছুটে যায়। তার পায়ে গুলি লাগে।
বিন লাদেন আসত্মসমর্পণ করেনি। তার মাথায় গুলি লাগে। কিছু মিডিয়া জানিয়েছে, লাদেনের বুকেও গুলি করা হয়। এই হামলার খবরে প্রথমে জানা যায় বিন লাদেন ‘প্রতিরোধ’ করেছিলো। নিজের স্ত্রী-কে মানবী বর্ম হিসেবে ব্যবহার করেছিলো।
কিন্তু পরে হোয়াইট হাউস স্বীকার করেছে এই খবর ঠিক ছিলো না। ’’
‘‘এই ঘটনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হোয়াইট হাউস থেকে বলেন সিল বাহিনী বিল লাদেনকেও শনাক্ত করতে পেরেছিলো। টাইম পত্রিকা সি আই এ ডিরেক্টর লিওন পানেট্টার এক সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে জানিয়েছে, হামলার মিনিট পঁচিশের মধ্যেই লাদেন নিহত হয়। ’’
‘‘বিন লাদেনের ঘরে মার্কিন বাহিনী একটি একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল এবং একটি ৯ এম এম রাশিয়ান পিস্তল পায়। অন্যান্য অস্ত্রও বাড়ির চত্বরে পাওয়া যায়।
’’
‘‘বিশেষ বাহিনী বিন লাদেনের পোশাকের মধ্যে নগদ অর্থ এবং কিছু টেলিফোন নম্বর পেয়েছে...’’
‘‘গোয়েন্দা হানাদারি চালিয়ে নৌ সিল বাহিনী পাঁচটি কম্পিউটার, ১০টি হার্ড ড্রাইভ এবং ১০০-র বেশি তথ্য জমা রাখার যন্ত্র নিয়ে যায়।
‘‘মার্কিন বাহিনী ত্রুটিযুক্ত হেলিকপ্টারটিকে ধ্বংস করে দেয়। নারী এবং শিশুদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। ’’
‘‘হামালর প্রায় ৩৮ মিনিট পর মার্কিন হেলিকপ্টারগুলি বিন লাদেনের মরদেহ নিয়ে উড়ে চলে যায়। ’’
এ পি রাজনৈতিক এবং মানবিক আবেদন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।
‘‘তিনজন স্ত্রীর অন্যতমা ইয়েমেনে জন্ম আমাল আহমেদ আবদুলফতেহ-কে শনাক্ত করা গেছে। প্রশ্নকর্তাদের আমাল জানিয়েছে, ২০০৬ থেকে বিন লাদেনের লুকানো আস্তানায় সে ছিলো। এক পাকিস্তানী গোয়েন্দা অফিসারকে আমাল জানিয়েছে, শক্তপোক্ত বাড়িটির ওপরতলা ছেড়ে সে কখনও নড়েনি। গোয়েন্দাসংস্থার নীতি অনুসারে পরিচয় গোপন রাখার শর্তেই ওই অফিসার এ খবর দিয়েছেন। ওই অফিসার আরও জানিয়েছেন, আমাল গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের উৎস হতে পারে এ বিষয়ে যে কীভাবে সে এতোদিন ধরা না পড়ে আত্মগোপন করে থাকতে পারলো।
’’
‘‘আবোতাবাদে বিন লাদেনের আস্তানায় মার্কিন হানাদারির পর আমাল এবং বিন লাদেনের অন্য দুই স্ত্রীকে জেরা করার জন্য হেফাজতে নেয় পাকিস্তান। মার্কিন কম্যান্ডোরা চলে যাওয়ার পর পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল থেকে আট-ন’টি ছোটো ছেলেমেয়েকে আটক করেছে। ’’
‘‘হামলার সময় কী ঘটেছিলো তার অসম্পূর্ণ খতিয়ান মিলেছে মার্কিন অফিসারদের থেকে। এই মহিলাদের স্বীকারোক্তি গোটা অপারেশনের বিশদ খবর জানার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ’’
‘‘লাদেনের স্ত্রীদের বয়ান থেকে বোঝা যাবে কীভাবে সময় কাটতো লাদেনের, কীভাবে পুলিস-মিলিটারির চোখে ধুলো দিয়ে আত্মগোপন করেছিলো।
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে আড়াই ঘণ্টার দূরত্বে আবোতাবাদ শহরে সেনা আকাদেমির কাছেই ওই বড়বাড়িতে কীভাবে দিনের পর দিন কাটিয়েছিলো লাদেন। ’’
‘‘এক পাকিস্তানী অফিসার জানিয়েছে, হেফাজতে মহিলা বন্দীনের সন্ধান জানায়নি সি আই এ অফিসাররা। ’’
‘‘আলকায়েদা সর্বেসর্বার গোপন আস্তানার কাছেই নামকরা সেনা আকাদেমি, কাছেই পাকিস্তানের রাজধানী—এসব থেকেই ওয়াশিংটনের সন্দেহ, বিন লাদেন পাকিস্তানের নিরাপত্তাবাহিনীর কাছ থেকে নিরাপত্তাই পেয়েছে। ’’
ই এফ ই সংবাদ সংস্থা পাকিস্তানের বাসিন্দাদের মনোভাব সন্ধান করেছে।
‘‘ছেষট্টি শতাংশ পাকিস্তানী বিশ্বাস করেন না মার্কিন বিশেষবাহিনী আলকায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করেছে।
এই অংশের মানুষের মতে এই হত্যার পিছনে অন্য কারও হাত রয়েছে। ব্রিটিশ ডেমোস্কোপিক ইনস্টিউট ইউগভ এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ সমীক্ষায় এ তথ্যই উঠে এসেছে। ’’
‘‘গবেষকরা জানিয়েছে, তিনটি বড় শহর করাচি, ইসলামাবাদ এবং লাহোরের বাসিন্দা উচ্চশিক্ষিত, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যেই এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে এই সমীক্ষার বাইরে রাখা হয়েছিল, কারণ গ্রামের মানুষকে এই সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করলে সমীক্ষার ফল আরও বিস্ময়কর হতে পারতো। ’’
‘‘পঁচাত্তর শতাংশ মানুষ মনে করছেন বিন লাদেনকে ধরা ও হত্যা করার অভিযানে নেমে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বকে যেভাবে লঙ্ঘন করেছে আমেরিকা, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
’’
‘‘যতজন মানুষের ওপর সমীক্ষা চালানো হয়েছে তার তিন-চতুর্থাংশের কম মানুষ বিশ্বাস করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১আক্রমণ লাদেন অনুমোদন করেনি। কাজেই এর ফলে আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসন এবং ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধ বৈধ হয়ে যায় না। ’’
‘‘চুয়াত্তর শতাংশ মতদাতা মনে করছেন ওয়াশিংটন সরকার ইসলামকে সম্মান করে না। এই সরকার ইসলামিক বিশ্বের সঙ্গে যুদ্ধে নামে। মার্কিন অর্থনৈতিক ত্রাণ গ্রহণের পাকিস্তানী নীতির বিরুদ্ধে ৭০% মতদাতা।
’’
‘‘পাকিস্তানী সরকারের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির ওপর দ্রোণ আক্রমণকে মেনে নেওয়া বা আগে অনুমোদন দেওয়ারও বিরোধী ছিয়াশি শতাংশ মতদাতা। ’’
‘‘একষট্টি শতাংশ পাকিস্তানী তালিবানদের প্রতি সহানুভূতিশীল। এই অংশের মতদাতাদের মতে তালিবানরা সম্মানীয় দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। এর বিপরীতে ২১% পাকিস্তানী মতদাতা তালিবান-বিরোধী।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সও সমান আকর্ষণীয় তথ্য পেশ করেছে।
‘‘এক নিরাপত্তা অফিসার জানিয়েছেন, লাদেনের এক স্ত্রী পাকিস্তানী অফিসারদের বলেছে, আলকায়েদা নেতা এবং তার পরিবার ওই বাড়িতেই পাঁচ বছর ধরে ছিল যে আস্তানায় মার্কিনবাহিনীর হাতে লাদেন নিহত হয়।
‘‘ওই অফিসার লাদেনের তিন স্ত্রীর মধ্যে কনিষ্ঠতমা আসাল আহমেদ আবদুলফতেহকে চিহ্নিত করে রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মার্কিন হামলার সময় আসাল জখম হয়।
‘‘ওই নিরাপত্তা অফিসার আরও বলেছেন, জেরায় আসাল জানিয়েছে ওই আস্তানায় আমরা গত পাঁচ বছর ধরে ছিলাম। ’’
‘‘লাদেনের আস্তানা থেকে বিন লাদেনের মরদেহ মার্কিনবাহিনী নিয়ে যাওয়ার পর ওই বাড়ির চত্বর থেকে পাকিস্তানের নিরাপত্তাবাহিনী ১৫-১৬ জনকে হেফাজতে নিয়েছে বলে ওই নিরাপত্তা অফিসার জানান। আটকদের মধ্যে রয়েছে লাদেনের তিন স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েরাও।
’’
এ এন এস এ সংবাদ সংস্থার খবর, ৬ই মে উত্তর পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানে মার্কিন দ্রোণ বিমান হামলায় অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন। ওই দেশে রোজকার এই হত্যার ঘটনায় কেউ কি কিছু করতে যাচ্ছে?
যাইহোক, আমি নিজেকে একটি প্রশ্ন করবো।
আবোতাবাদে হত্যা এবং এরই সমান্তরালে গদ্দাফিকে খুনের চেষ্টা—এই দুই ঘটনার এ ধরনের সমাপতন কেন?
গদ্দাফির এক ছেলে সইফ আল আরব কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচীর সঙ্গেই যুক্ত ছিল না। ছোট ছেলে এবং দুই ছোট ছোট ভাইপোকে নিয়ে সে থাকতো।
ন্যাটোর বোমা হামলার কিছুক্ষণ আগে গদ্দাফি এবং তাঁর স্ত্রী সইফের বাড়ি যান। বাড়িটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। সইফ এবং তিনটি শিশু নিহত হয়। গদ্দাফি এবং তাঁর স্ত্রী কিছুক্ষণ আগে বেরিয়ে এসেছিলেন। এ এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা।
কিন্তু গোটা বিশ্বের কানে এখবর পৌঁছায়নি।
ওই ঘটনার সমাপতন এবং লাদেনের ওপর আক্রমণ যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার খুব ভালোভাবে জানতো এবং প্রতিটি খুঁটিনাটির ওপর নজর রাখছিল নিছকই কাকতালীয়?
ভ্যাটিকান সিটির এক কেব্ল জানিয়েছে— ত্রিপোলির পোপের প্রতিনিধি জিওভান্নি হন্নোসেনজো মার্টিনেল্লি ভ্যাটিকান ফিডেস এজেন্সিকে বলেছেন, ‘কারও রাজনৈতিক কার্যকলাপে হস্তক্ষেপ’ করার কোনও ইচ্ছা তাঁর নেই। কিন্তু তাঁর বক্তব্য সকলকে সতর্ক করে দেওয়া যে লিবিয়ায় বোমাবর্ষণ ‘অনৈতিক। ’
মার্টিনেল্লি জানান, ‘‘আমি অবাক হয়ে গেলাম যে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে আধ্যাত্মিক বিষয়েই আমার মনোযোগ দেওয়া উচিত, কথা বলা উচিত। ওই বোমাবর্ষণকে স্বীকৃতি দেয় রাষ্ট্রসঙ্ঘ।
কিন্তু এর মানে এই নয় যে, রাষ্ট্রসংঘ ন্যাটো বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বোমাবর্ষণ স্থির করার নৈতিক অধিকার আছে। ’’
‘‘আমার আরও বলা উচিত যে, পশ্চিমের দেশগুলির বা সাধারণভাবে মানবতার নাগরিক এবং নৈতিক বিবেচনা স্থির করে দেয় না বোমাবর্ষণকে। বোমাবর্ষণ সবসময়ই এক অনৈতিক কাজ। ’’
এ এন এস এ সংবাদ সংস্থার আর একটি কেব্ল চীন এবং রাশিয়ার অবস্থান জানিয়েছে।
চীন এবং রাশিয়ার সরকার জানিয়েছে, দু’দেশই লিবিয়ার ওপর যুদ্ধ নিয়ে ভালমতই ওয়াকিবহাল রয়েছে।
দু’দেশেই বলেছে, যুদ্ধবিরতির দাবিতে এই দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে।
চীনের বিদেশমন্ত্রী ইয়াং জেইচি বলেছেন, ‘‘আমাদের বক্তব্য হলো, এই মুহূর্তে যুদ্ধবিরতির ঘোষণাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। ’’
প্রকৃতই উদ্বেগজনক ঘটনাই ঘটে চলেছে।
ফিদেল কাস্ত্রো ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।