ঢাকা, জুন ০৬ - কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অগণিত মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে পপগুরু আজম খানের প্রতি। ওই সময় আবেগাক্রান্তও হয়ে পড়েন অনেকে। ফুলেল শ্রদ্ধার পর মরদেহ নেওয়া হয়েছে বায়তুল মোকাররমে।
ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে রোববার সকালে মারা যান বাংলাদেশে পপ সঙ্গীতের পথিকৃৎ আজম খান। এ মুক্তিযোদ্ধার বয়স হয়েছিলো ৬১ বছর।
ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের হিমঘর থেকে সোমবার সকালে আজম খানের মরদেহ নেওয়া হয় কমলাপুরে তার বাড়িতে। সেখানে স্থানীয়রা শেষ বিদায় জানায় তাদের অতিপরিচিত জনকে।
কমলাপুরে একটি জানাজার পর আজম খানের কফিন আনা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সঙ্গীতানুরাগী, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় প্রয়াত শিল্পীকে।
আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দল, ছাত্র সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন একে একে শ্রদ্ধা জানায় তার প্রতি।
শ্রদ্ধা জানানোর সারিতে ছিলেন পপ সঙ্গীতের অনেক অনুরাগী, যাদের চোখে ছিলো জল। ফুল দেওয়ার সময় কাঁদছিলেন অনেকে। সকাল পৌনে ১০টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত শ্রদ্ধা জানানোর এ পর্বের ব্যবস্থাপনায় ছিলো সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
আজম খানের বড় মেয়ে ইমা খান, ছেলে হৃদয় খান, ছোট ভাই লিয়াকত আলী খান খোকা ছিলেন কফিনের পাশে।
কফিনে ফুল দেওয়ার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, "আজম খান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
তার চলে যাওয়ায় সঙ্গীত অঙ্গনে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়। এ গুণী শিল্পীর কাছ থেকে জাতি যা পেয়েছে তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। "
বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, "মহান এ শিল্পী স্বাধীনতা উত্তর গণসঙ্গীতের মাধ্যমে সঙ্গীত অঙ্গনকে এক উচ্চ আসনে নিয়ে গেছেন। "
আজম খানের দীর্ঘদিনের বন্ধু ফকির আলমগীর বলেন, "খুবই সাধাসিধে জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন আজম খান। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর আমরা একত্রে গণসঙ্গীত গেয়েছি।
তাকে হারিয়ে আজ আমি একা হয়ে পড়েছি। "
সবার ভালবাসার ফুলে শ্রদ্ধা জানানোর পর্ব শেষে আজম খানের কফিন নেওয়া হয় বায়তুল মোকাররম মসজিদে। সেখানে জোহরের নামাজের পর জানাজা হবে। এরপর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শায়িত হবেন দেশের মানুষের মন জয় করে নেওয়া এ সঙ্গীতশিল্পী।
ব্যান্ড দল উচ্চারণ গড়ার মধ্য দিয়ে সঙ্গীতাঙ্গনে আত্মপ্রকাশকারী আজম খানের মুখগহ্বরের ২০১০ সালে ক্যান্সার ধরা পড়ে।
এ জন্য দুবার তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়েও চিকিৎসা করানো হয়।
তবে আজীবন খেয়ালি আজম খান গত নভেম্বরে সিঙ্গাপুরে শেষ বারের চিকিৎসা সম্পূর্ণ না করেই ফিরে আসেন। শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ায় শারীরিক অবস্থার উন্নতির কোনো আশা দিতে পারেননি চিকিৎসকরা।
নয় দিন আগে আজম খানের অবস্থার অবনতি ঘটে। সে দিন থেকেই স্কয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন বাংলাদেশে পপ সঙ্গীতের এই অগ্রপথিককে।
পরে নেওয়া হয় সিএমএইচে।
১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্র"য়ারি ঢাকার আজিমপুরে জন্ম নেওয়া মাহবুবুল হক খান সঙ্গীতাঙ্গনে পরিচিত হয়ে ওঠেন আজম খান নামে।
৬৯ এর গণঅভ্যূত্থানের সময় বামধারার সাংস্কৃতিক সংগঠন ক্রান্তির সঙ্গে যুক্ত হয়ে গণসঙ্গীত গাইতে দেশের নানা প্রান্তে ছুটেছিলেন আজম খান। ২১ বছর বয়সে অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধে নেমেছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর গঠন করেন ব্যান্ড দল 'উচ্চারণ'।
পপ সঙ্গীতকে দেশীয় মেজাজে পরিবেশন করে অচিরেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশনে আজম খানের প্রথম কনসার্ট প্রচারিত হয় ১৯৭২ সালে। ১৯৭৪-৭৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে 'রেললাইনের ওই বস্তিতে' গেয়ে স্থান করে নেন বাংলার মানুষের হৃদয়ে। মুক্তিযুদ্ধে সময় বিটলসের জর্জ হ্যারিসনের গাওয়া 'বাংলাদেশ' গানটিই এর প্রেরণা বলে মনে করা হয়।
বাংলাদেশে পপ সঙ্গীতের জনপ্রিয়তা আজম খানের হাত ধরেই।
দেশে এ জগতে কিংবদন্তী মনে করা হয় তাকে। আজম খানের কণ্ঠে 'ওরে সালেকা, ওরে মালেকা', 'আলাল ও দুলাল', 'অনামিকা', 'অভিমানী, 'আসি আসি বলে', 'একদিন তো চলে যাবো' গানগুলো এখনো ফেরে মানুষের মুখে মুখে।
আজম খানের জনপ্রিয়তা যে মাত্রার সে তুলনায় তার অ্যালবামের সংখ্যা কম, মাত্র ১৭টি। তার বন্ধুরা বলেন, অর্থ ও প্রচারের মোহে কোনোকালেই আচ্ছন্ন ছিলেন না তিনি।
সঙ্গীতের পাশাপাশি ক্রীড়ানুরাগী হিসেবেও নাম ছিলো তার।
প্রায় দশককাল আগে 'গডফাদার' নামে একটি চলচ্চিত্রেও নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।