অটোয়ার আবহাওয়া ক'দিন বেশ ভালো। বৃষ্টি পড়ছে না। গরম ও খুব বেশী না। যদিও তাপমাত্রা একটু বাড়লেই সবাই অস্থির হয়ে যায়। তবু গরমকাল খুব ভালো লাগে।
চাইলেই ঘর থেকে বের হয়ে যেখানে খুশি বেড়িয়ে পড়া যায়। রাশীক এর পরীক্ষা সামনে। রাইয়ানের ও স্কুল। তাই চাইলেই আমরা বেড়িয়ে পড়তে পারছি না। শনিবার সকালে ওদের বাবা বললো চলো মন্ট্রিয়ল যাই।
আসলেই বেশ কয়েকমাস মন্ট্রিয়ল যাওয়া হয়না। অটোয়া থেকে মাত্র দুই ঘন্টার ড্রাইভ। আমার কাছে বাংলাদেশের পর ওই শহরটা অনেক প্রিয়। শহরের মায়া থাকে। মন্ট্রিয়লে গেলে রাস্তা দিয়ে হাঁটলেও অনেক আপন লাগে।
বাংলাদেশ ছাড়ার পর এই শহরটায় অনেক বছর। ভালোলাগা আনন্দ। প্রিয় কিছু বন্ধুদের নিয়ে নানান সুখের স্মৃতি। আমাদের সংসার, রাশীকের জন্ম। আরো কত কিছু।
এই মন্ট্রিয়লের কথা এলেই আমার মন কেমন হয়ে যায়। নাসিমা সাসকাচুয়ানে যাবার আগে চাইলেই হুট করে চলে যেতাম। এখন অনেকে আছে। মাসুদ ভাই,মামুন ভাই আরো অনেক বন্ধুরা তবু হুট করে যাওয়াটা আর হয়না।
সারাদিন কেমন ঘোরের মাঝে চলে যায়।
সকালের শুর আজ প্রিয় শহর, প্রিয় কিছু স্মৃতিচারণ দিয়ে। বিকালে টুকটাক বাজারের জন্য Walmart এ যাবো বলে রওনা হই দুজনে। রাইয়ান তখন কেবল পার্ক থেকে খেলে ফিরেছে। দুই ভাইকে রেখে বের হই। গাড়ির গন্তব্য যেদিকে হবার কথা সেদিকে নয়।
ভাবলাম বুঝি একটু ঘুরে যাবে। চুপচাপ গান শুনছি। ফেরদৌস ওয়াহিদ এর......."কি নাম এ ডাকবো তোমায় নীল জোছনা। " ক'দিন ধরে এই গানটার সংক্রমণ হয়েছে। বারবার শুনি।
গাড়ি Orleans পার হয়ে Trim রোডের কাছে যেতেই বুঝি কোথায় যাচ্ছি।
Petrie Island পার্ক এ। দারুণ একটা বীচ আছে ওখানে। মনটা কেমন ভালো হয়ে যায়। ওকে বলি ইহাই ছিলো তোমার মনে? ও হাসে।
বলে মন্ট্রিয়ল যাওয়া হলোনা ভাবলাম এখানে ঘুরে যাই। রাশীকের পরীক্ষা না থাকলে আনা যেতো। রাইয়ান ভাই ছাড়া আজকাল কোথাও যেতে চায়না।
গাড়ি থেকে নেমে দুজনে হাঁটতে থাকি। ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করতে করতে ভাবি ভাগ্যিস এটা সাথেই রাখি।
একটা বেঞ্চে একটা বয়সী কাপল্ বসেছিলো। ছবি তুলতে ইচ্ছা করলো ওদের। দুর থেকে তাই ছবি তুললাম।
সূর্যটা এত সুন্দর ছিলো। গাছের পাতার ছায়ার খেলা দেখছিলাম।
আর হঠাৎ দেখি আমাদের ছায়াও তার সাথে.......ছোটবেলার মত ছায়ার পিছে পিছে আমরাও ঘুরলাম।
একটা গাছের কাছে দাঁড়িয়ে অনেক ছবি তুললাম। অদ্ভুত গাছটা । উপরের দিকে পাতাহীন হয়ে গেছে। একসাথে বেড়ে উঠা পাঁচটা গাছের তিনটা কেঁটে ফেলেছে।
ও হাঁটতে হাঁটতে বললো কি খুশি হয়েছো। বললাম খুব। আসলেই সকালটার মন খারাপ সারাদিন বয়ে বেড়াচ্ছিলাম। আরো কারন ছিলো। ভাইজান আমেরিকাতে এসেছিলো ৩ সপ্তাহের জন্য।
আজ সকালে চলে গেলো দেশে। গতবার আমাদের এখানে এসে ঘুরে গেছে। এবার আসতে পারেনি, তাই মনটা খুব খারাপ লাগছিলো। সব মিলিয়ে মনের মেঘ সরছিলো না। ওকে থ্যাঙ্কস জানালাম ।
এত্ত সুন্দর একটা জায়গায় আনবার জন্য। সূর্য্যের দিকে তাকিয়ে সব কষ্ট ভুলে গেলাম। পানিতে সূর্য্যের খেলা দেখলাম বসে।
ও বললো ব্লগে লেখা দিচ্ছে তো ? বললাম দিতে তো হবেই। আসলে অদ্ভুত একটা ব্যাপার ।
যা কিছু ভালোলাগা সব কিছু জানাতে ইচ্ছা করে ব্লগের প্রিয় মানুষগুলোকেও। আমাদের গল্পে কত জন যে থাকে এই ব্লগের। আমাকে যারা ভালোবাসে। আমার লেখা যারা পছন্দ করে। যাদের লেখা আমি পছন্দ করি।
গতবছর সামারেও এখানে এসেছি। প্রথমবার পিকনিকে এসেছিলাম। অনেকে সাথে ছিলো। আমরা সারাদিন মাছ ধরেছিলাম। বাসায় নিয়ে সেই মাছ ধুয়ে ,কেঁটে আবার রান্না করে খাওয়া।
দুজনে গল্প করছি আর হাঁটছি। দুজন চেনা মানুষের সাথে দেখা। দুইভাবী। উনাদের সাথে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন গল্প করে আবার সামনে হাঁটা। নানান গল্প, এরই ফাঁকে ছবি তোলা।
একটা মজার ছবি দেখে ও ডাকলো। বালুতে কে জেনো নাম লিখে রেখেছে। সারা পৃথিবীতে একই নিয়ম। ভালোবাসার মানুষের নাম লেখে সবাই বালিতে। জানে পানি এসে ভাসিয়ে নেবে ।
হয়তো এই যে দুটো নাম এর একসাথে ভেসে যাওয়া এতেও মনে হয় অনেক আনন্দ।
পাশেই লেখা "You r awesome"............
একটা জায়গায় পাথর নেমে গেছে দুরে নদীর ভেতর। ওখানে বসে থাকলা কিছুক্ষন। ছবি তুললাম অনেক। সূর্য্যটা তখন যাই যাই করছে।
একবার এখান থেকে ফিরে ডুবে যাওয়া সূর্য্যকে নিয়ে একটা কবিতা লিখেছিলাম,সূর্য্য তোমায় দিলাম মা।
দুর থেকে একটা স্পীডবোট ছুটে আসছিলো। সব কিছু ভালো লাগছিলো। আমাদের এই যে একা হওয়া সময়। বোঝাপড়া।
নানান সব গল্প ,সব কিছুতেই সবুজ পাতাদের দোলা।
অনেকগুলো সীগাল বসেছিলো পানিতে। রাইয়ান আসলে ঠিক ওদের পিছনে দৌড় দিতো। আমি আস্তে আস্তে ওদের পাশে গেলাম। ছবি তুললাম।
ব্যাগে ওদের দেবার মত কিছুই ছিলোনা। রাইয়ান পাখি দেখলেও খাবার দেবার জন্য অস্থির হয়ে যায়।
ফেরার সময় হয়ে গেলো। আমাদের ছেলেমানুষী বিকালের কাছে জমানো থাকলো অনেক আনন্দ। সূর্য্যটার দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম আবার দেখা হবে।
তবে নতুন দিনে। আজকের দিনের বিকালটা..জুন ৪'২০১১ স্মৃতিতে জমা হলো। ছবি আর কথার স্মৃতিতে।
একরাশ ভালোলাগা নিয়ে সন্ধ্যার ডুবে যাওয়া সূর্য্যের দিকে তাকিয়ে বাসায় ফিরলাম। সবার জন্য এক আকাশ শুভেচ্ছা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।