বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান বুধবার সন্ধ্যায় লন্ডনে দলের এক ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই আহ্বান জানান।
দেশকে এগিয়ে নিতে কী কী করণীয়, সেই সম্পর্কে নিজের ভাবনাও মেলে ধরেন খালেদার জিয়ার বড় ছেলে।
তারেক বলেন, “আমাদের গড়ে তুলবে হবে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে বহু দূরে। এই অগ্রযাত্রার গতি হতে হবে দ্রুত।
লক্ষ্য হতে হবে সুনির্দিষ্ট।
“অতীতমুখী নয়, আমাদের চেতনা ও দায়বদ্ধতা হতে হবে ভবিষ্যতে। গতানুগতিক ধারার রাষ্ট্র পরিচালনায় আবদ্ধ থাকলে কিন্তু ভবিষ্যৎ আমাদের খুব উজ্জ্বল নয়। আমাদের উৎসাহ দিতে হবে আধুনিকতাকে, বরণ করে নিতে হবে অভিনবত্বকে। ”
সামনের দিকে এগিয়ে যেতে রাজনৈতিক সংস্কৃতির ‘পরিবর্তনের’ ওপর জোর দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান।
লন্ডনের গুমান হোটেলের ওই ইফতার অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস, সাধারণ সম্পাদক কায়সার এম আহমেদসহ প্রবাসী বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী-সমর্থক যোগ দেন।
গত পাঁচ বছর ধরে লন্ডনে অবস্থানরত তারেকের দলের প্রকাশ্য কোনো অনুষ্ঠানে যোগদানের ঘটনা এটি তৃতীয়।
সম্প্রতি নিজের ভাবনা নিয়ে একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানের আগে লন্ডনে একটি সভায় দেয়া তারেকের বক্তব্য নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
এরপর মুদ্রাপাচারের একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়, যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করছে তার দল বিএনপি।
এক ডজনেরও বেশি মামলা মাথায় নিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেকের দেশে ফেরা নিয়েও বিএনপিকর্মীদের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, চিকিৎকের পরামর্শ নিয়ে ‘শিগগিরই’ দেশে ফিরবেন তারেক।
ইফতার অনুষ্ঠানে কৃষি, শিল্প ও শিক্ষাক্ষেত্রে নিজের ভাবনা তুলে ধরেন তারেক, যাকে দেশের ভষিষ্যৎ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে পরিচিত করিয়ে আসছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
তারেক কৃষি ক্ষেত্রে ভর্তুকির উপযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। কৃষিকাজে ব্যবহৃত প্রধান তিন উপাদান চারা ও বীজ, সার ও কীটনাশক, সরঞ্জামের আমদানি ও বিতরণ ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাসের পক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন তিনি।
তারেক বলেছেন, উৎপাদন মূল্যের সঙ্গে ১০-১৫ শতাংশ লাভ ধরে বিক্রয় মূল্যের বাজার ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।
স্বাধীন কৃষিবান্ধব মূল্য নির্ধারণ কমিশন গঠন করা প্রয়োজন।
কৃষির মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে মনোযোগ দিতে আগ্রহ জানিয়ে কৃষকদের জীবনমানের উন্নয়নের কথাও বলেছেন তিনি।
কৃষির প্রয়োজনীয় মূলধন কৃষকের কাছে সহজলভ্য করতে কৃষি ব্যাংকের কার্যকারিতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন তারেক। সেই সঙ্গে দেশে কৃষি বিষয়ক তথ্যভাণ্ডার তৈরি করতে চান তিনি।
শিক্ষা ক্ষেত্রে সৃজনশীলতার বিকাশে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি পুনর্মূল্যায়নের সময় এসেছে বলে মনে করেন তারেক।
বিষয়ভিত্তিক শিক্ষার পদ্ধতি এবং পাঠ্যসূচিতে নতুন নতুন বিষয় যোগ করার পক্ষপাতি তিনি।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী ও ব্যবহারিক জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে কারিগরি শিক্ষার প্রসারের ওপর জোর দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান।
শিক্ষার্থীদের ইংরেজির পাশাপাশি চীনা, ফরাসিসহ আরো ভাষা শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
তারেক বলেন, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার মাধ্যমে পাঁচ বছরের মধ্যে রেমিটেন্স বর্তমানের ১৪ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার গুরুত্ব স্বীকার করে এক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে চান খালেদা জিয়ার ছেলে।
“তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বহু কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। একে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের তরুণদের গুগল, মাইক্রোসফট, স্যামসং, ইন্টেল, সনি, এলজির মতো কোম্পানিতে কাজ করার মেধা ও যোগ্যতা আছে বলে আমি মনে করি। ”
দেশে কয়েকটি আইটি পার্ক স্থাপন করতে চান তারেক, যেখানে লোকাল ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো একসঙ্গে সফটঅয়্যার ও হার্ডঅয়্যার ডেভেলপ এবং প্রযুক্তিগত গবেষণা করবে।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে গতিশীল করতে আরেকটি সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করার পক্ষে তারেক।
ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে ব্যান্ডউইডথের দাম কমানোরও পক্ষপাতি তিনি।
তারেক বলেন, এসব উদ্যোগ গ্রহণ করলে দেশে এই মুহূর্তে থাকা ৩ কোটি কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা এক কোটির নিচে নেমে আসবে।
“কর্মজীবীর সংখ্যা সাড়ে ৫ কোটি থেকে আট কোটিতে উঠবে। দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকা মানুষের সংখ্যা ৩১ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নেমে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।