আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই মহাজনের ও এক দরবেশের গল্প

তোমারে যা দিয়েছিনু-সে তোমারি দান,গ্রহণ করেছ যত-ঋণী তত করেছ আমায় ডঃ জনসন বলেছেন, ‘Some men will learn more in a country stage ride than others in a tour of Europe.’ ঘোড়ার গাড়িতে একটা গ্রাম ঘুরে একজন মানুষ অনেক অনেক বেশি জানতে পারে সেই লোকটির চেয়ে, যে ইওরোপ ঘুরে এসেছে। চোখ চাই, দর্শন চাই। এ সম্পর্কিত একটি গল্প- সবার জন্য। । মরুভূমিতে দুই মহাজনের সাথে এক দরবেশের দেখা।

দরবেশ কোথা থেকে যেন একাই আসছিলেন। দরবেশ সেই মহাজনকে প্রথমেই প্রশ্ন করলেন,’তোমাদের উট হারিয়ে গেছে, তাইনা?’ ‘হ্যাঁ আপনি ঠিক ধরেছেন। ‘উটটার ডান চোখ কানা আর বাঁ পা-টা খোঁড়া!’ ‘হ্যাঁ,ঠিক বলেছেন। ‘ ‘তার সামনের একটা দাঁত নেই। ‘ ‘ঠিক, ঠিক।

‘ মহাজন দুজন ভাবতে শুরু করেছেন,উটটা তাহলে পাওয়া গেছে। দরবেশের প্রশ্ন শেষ হয়নি। তিনি বললেন,’তার পিঠের এক পাশে ঝুলছে শস্যদানার বস্তা, আর এক পাশে মধু। ‘ মহাজন দুজন লাফিয়ে উঠলেন, ’কোন সন্দেহ নেই। ঠিক দেখেছেন আপনি।

তা, দয়া করে উটটা যেখানে আছে, সেখানে আমাদের নিয়ে চলুন। ‘ দরবেশ হাসতে হাসতে বললেন, ‘তোমাদের উটের কথা এইমাত্র তোমাদের মুখেই শুনলুম, সেটাকে আমি চোখেও দেখিনি। ‘ মহাজন দুজন দরবেশের কথা শুনে খেপে গেল। ব্যাটা চোর। দরবেশের বেশে ঘুরচে।

‘খুব ভাল গল্প শোনালে। উটের পিঠে কিছু সোনাদানাও ছিল, সেগুলো কোথায় গেল?’ দরবেশ শান্ত গলায় বললেন,’ভাই আমি তো আগেই বলেছি, তোমাদের উটটাকে আমি দেখিইনি, তোমাদের মণিমুক্তার খবর দেব কি করে!’ মহাজন দুজন নিঃসন্দেহ হলেন, লোকটা দরবেশ নয় তস্কর। তাকে ধরে নিয়ে গেলেন খলিফের কাছে, নিয়ে গেলেন তল্লাসির জন্য। তল্লাস করে দেখা গেল দরবেশের কাছে কিছুই নেই। এমন কোন প্রমাণও নেই যে তাকে অপরাধী বলা যাবে।

মহাজন দুজন চিৎকার করতে লাগলেন, ‘লোকটা মায়া জানে। ঐন্দ্রজালিক! সেই অপরাধে এর শাস্তি হোক। ‘ ‘দরবেশ তখন এক কথায় সব চিৎকার থামিয়ে দিলেন, ‘মহামান্য,আমি দস্যু বা ঐন্দ্রজালিক কোনওটাই নই। আমার দেখার চোখ দুটো একটু অন্যরকম। এই মরুভুমিতে আমি একা থাকি।

চারদিকে শুধু বালি। দেখার কিছু নেই। তাই যা দেখি, একটু খুঁটিয়ে দেখি, আর সে কারণেই আমাকে এখানে ধরে আনা হয়েছে বিচারের জন্য। এইবার শুনুন ব্যাপারটা কি হয়েছে। ‘আমি যে পথে আসছিলাম, দেখছি সেই পথ ধরে কোন সময়ে একটা উট চলে গেছে।

বালিতে তখনও তার পায়ের ছাপ পড়ে আছে। আগে পিছে কোন মানুষের পায়ের ছাপ নেই। তার মানে ছাড়া উট। উটটা পালিয়ে এসেছে। এইবার দেখলুম কি, উটটার বাঁ দিকের একটা পায়ের ছাপ অস্পষ্ট, অর্থাৎ সেই পা-টা অকেজো! এইবার কেমন করে বুঝলুম, তার একটা চোখ কানা! উটটার পথের একপাশের ঝোপঝাড়ের পাতাই খেতে খেতে গেছে,আর একটা পাশের সব অক্ষত থেকে গেছে।

সামনের একটা দাঁত নেই কেন? সে যেখানে যেখানে পাতা চিবিয়েছে,সেই সেই জায়গায় মাঝে মাঝে পাতা লেগে আছে। ছিঁড়তে পারেনি! এইবার কি দেখেছি! তার চলার পথের একদিকে পিঁপড়ের ভির,মানে সেই দিকের পিঠে ছিল শস্যের দানা, আর একদিকে মাছি, অর্থাৎ সেইদিকে ছিল মধু!’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।