সকালমিয়া জমিনের ধান কাটিয়া দুপুর বেলা ভাত খাইতে আসিল বাড়িতে। গোসল সারিয়া বাড়া ভাত নিয়া অপেক্ষারত বোনের পাশে তাড়াতারি আসিয়া বসিল। ভাইযে কখন আসিয়া বসিয়াছে সেই খেয়ালও করিতে পারিলনা অন্যমনষ্ক মাহী। ভাইয়ের কথায় চমকিয়া উঠিয়া বলিল, ভাই আইছো??
হ, তোর কি হইছে ক’তো ? কি ভাবস এতু??
না, কিছু নাহ, হঠাৎ মায়ের কথা মনে পইড়া গেলো। মায়েরেতো দেখিনাই, তাই মায় আমার কেমুন আছিলো ভাবতেছি।
মায় বাঁচিয়া থাকিলে আমারে কতো আদর করিতো, বলিয়াই কান্দিতে থাকে।
সকালমিয়ার কলিজাটা যেনো হঠাত কাঁপিয়া উঠিল। সেই কখন মাহীর জন্মের সময় মা মারা গিয়াছে, তার একটু একটু মনে আছে কেবলি মায়ের চেহারাটা। যেইদিন মায়ের অসুখ হইলো তখন সে অল্প বয়সে কিছুই বুঝিয়া উঠিতে পারিলনা মায়ের কি হইলো। সবাই বলাবলি করিতে লাগিল মায়েরে নাকি গঞ্জের বড় হাসপাতালে নেওন লাগবো।
নাইলে মায়েরে নাকি বাঁচান যাইবোনা। সবাই ধরাধরি করিয়া একটা ভ্যানে করিয়া মায়েরে নিয়া যাওনের সময় মায়ের দিকে মুখ কালো করিয়া তাকিয়ে থাকতে দেখিয়া মায় তারে ইশারায় কাছে ডাকিয়া কইলো ”সকাল, বাবা আমার, তোর একটা বোন আইবো, আল্লাহয় পাঠাইবো। তুই তারে অনেক অনেক আদর দিবি। ক, আমারে ক তারে অনেক অনেক আদর দিবি?? সকাল শুধুই হা বলিয়াই মায়ের হাতখানা শক্তভাবে ধরিয়া রাখিল। সেকি সেই অল্প বযসে জানিত যে তার মা আর ফিরিয়া আসিবেনা? জানিলে কি আর যাইতে দিতো? হাতখানা ছাড়িত??
পরে বাবায় কইছিলো, মাহী হইবার সময় তার বাবার কাছে ডাক্তার জানিতে চাইছিলো মা আর বাচ্চা একজনকেই বাচাঁনো যাইবে, কারে বাঁচাবে? বাবায় ভাবিল মায় বাঁচিয়া থাকিলে আর একটা সন্তানতো খোদা চাইলে দিতেও পারে।
সেই ভাবিয়া কইলো মায়েরে বাচান। কিন্তু মায় নাকি চিৎকার করিয়া কয়, নাহ, আমার মাইয়ারে দুনিয়ায় আইসতে দ্যাও। তোমাদের পায়ে পরি। মায়ের জিদের কাছেই সবাই হার মানিল। অবশেষে মায় চলিয়া গেলো, মাহীরে দিয়া গেলো।
বাপও চইলা গেলো হের কিছুদিন পরেই।
এসব শুনিয়া মাহী কান্দে আর চোখের জল ফেলে নিরবে।
মাহী কয়, ভাই মায়ে কেমনে জানিতো যে মায়ের মাইয়া হইবো??
মায়েরা সব জানেরে। ওটাযে ”মা” তাই।
তাইলে আমি জানিনা ক্যান আমার কি হইবো?
আরে পাগলী তোর কি বিয়া হইছে?? যখন বিয়া হইবো, তোর পেটে যখন বাচ্চা আইবো তখন তুই ঠিকিই বুঝবি।
কতো কথা বলবি, কতো গান শুনাবি, কতো আদর করবি তোর পেটের বাচ্চারে। ঠিক যেমন মায় তোরে করিত।
মায়কি আমার লগে কথা কইতো??
হ, মায় মনে হয় জানিত, তুই দুনিয়া আইলে তোরে আদর করিতে পারিবেনা। তোর লগে কুতু কুতু পুতু পুতু আদর সোহাগ করিতে পারিবেনা, তাই পেটে থাকিতেই তোরে কতো আদর করিত তার হিসাব নাই, সারাক্ষন খালি তোর লগে কথা কইতো। কিন্তু মায় তোরে দুনিয়ায় আদর করিয়া যাইতে পারিলনা।
তুমি তাই বুঝি আমারে এতো আদর করো??
সকালমিয়া চুপ কইরা ভাত খাইতে থাকে।
ভাই, ও ভাই মায় দেখতে কেমুন আছিলো??
সকালমিয়া ভাত চাবানি বন্ধ করিয়া মুখ উপর করিয়া মাহীর দিকে চায়। তার চোখ দিয়া টপ টপ করিয়া চোখের জল গড়িয়ে পড়িতে থাকে। বাম হাতে চোখের জল মুচিয়া কয় ”মায় আছিলো একখান পরী, একেবারে তোর মতোরে”
মাহী আর থাকিতে পারিলনা, ভিতর রুমে যাইয়া চিল্লায়া কান্দিতে থাকে। খোদা মায়েরে এই রকম কইরা লইয়া গেলা ক্যান ??? তার বুক ফাটিয়া যাইতেছে কষ্টে,
তার বলতে নাপারা কস্টের কথাগুলো জেমসই বলে দিলো তার গানে
সকালমিয়া বইনরে কি বলিয়াযে শান্তনা দিবে কিছুই খুঁজিয়া পায়না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।