আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একই সুরে বাজে কেন বীনা !

তৃতীয় বিশ্বের নেতা হওয়ার জন্যে দুটি জিনিশ দরকার : বন্দুক ও কবর। কয়েকদিন আগে সংসদে রেলওয়ে প্রসঙ্গে প্রশ্নোত্তরকালে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন প্রশ্নকারী সাংসদদের ধৈর্য ধারণ করতে বলেন। সেই একই দিন বাণিজ্য সচিব মিডিয়া সাক্ষাৎকারে টিসিবির কার্যক্রম সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাব তিনি বললেন যে, রাতারাতি সবকিছু সম্ভব নয়। ধৈর্য ধরতে হবে। এসব কেতাবি কথা আবহমানকাল থেকে বলা হচ্ছে।

সান্ত¡না দেয়ার জন্য কিংবা নিজের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য এসব কথা বলা হয়ে থাকে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এক শিশু সন্ত্রাসীর গুলিতে মারা যাওয়ার পর তৎকালীন মার্শাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন যে, আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে। যাহোক আমরা এখন একটু বিশদ আলোচনা করবো। বাংলাদেশ রেলওয়ের অবস্থা করুণ। ভূতের মতো পেছনে হেঁটে চলেছে।

রেলওয়ে বিভাগ যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। শুনেছি যে রেলওয়ে বিভাগকে মন্ত্রণালয়ে উন্নীত করা হবে। নীতিগত সিদ্ধান্তও বোধহয় সরকারি পর্যায়ে নেয়া হয়েছে। তবে যতোক্ষণ পর্যন্ত একজন পৃথক মন্ত্রী নিয়োগ দেয়া না হয়েছে ততোক্ষণ অবস্থার তেমন হেরফের হবে না। আলোচ্য প্রসঙ্গ বলতে হয় যে, সেদিন সংসদে যোগাযোগমন্ত্রী রেলওয়ে বিভাগ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন।

তিনি বেশ রসিয়ে রসিয়ে কথা বলছিলেন, যেমন সবুরে মেওয়া ফলে ইত্যাদি ইত্যাদি। সংসদে উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয়েছে। এখানে রসিকতার কিছু নেই। সমস্যা হলো যে, মন্ত্রীরও সন্তোষজনক কিছু বলার নেই। কেননা রেলওয়ে বিভাগ একটি ব্যর্থ বিভাগ।

কোনো প্রকল্পের উল্লেখ করার কিছু নেই। পূর্ববর্তী বছরের টেনে আনা প্রকল্পের এবার বছর শেষে ১৫/২০ ভাগ কাজ হয়েছে। বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের সঙ্গে বিশ্বের অন্য দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের কিছু পার্থক্য। এখানে মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দায়বদ্ধ। সংসদের কাছে নয়।

অতএব ব্যর্থতা-সাফল্য নিয়ে এখানে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোনো মন্ত্রীর চিন্তাভাবনা করতে হয় না বা বিবেকের দংশনে ভুগতে হয় না। ভারতের নরসীমা রাও যখন প্রধানমন্ত্রী, তখন মাধব রাও সিন্ধিয়া সেই মন্ত্রিসভার বেসামরিক বিমান চলাচল এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। রাশিয়া থেকে লিজ নেয়া এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরের খুব কাছে দুর্ঘটনা কবলিত হয়। মাধব রাও সিন্ধিয়া সরাসরি অকুস্থলে গিয়ে দেখলেন যে, বিমানটি দাউ দাউ করে জ্বলছে। সকাল ৮/৯টায় দিকের ঘটনা।

তিনি আর সচিবালয়ে না গিয়ে বাসা থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। পরে নরসীমা রাওয়ের অনুরোধ সত্ত্বেও তা প্রত্যাহার করে নেননি। কেননা তার তো চাকরির দরকার ছিল না। এবার আসি বাণিজ্য সচিবের প্রসঙ্গে। ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি) একটি পুরাতন প্রতিষ্ঠান।

পাকিস্তান আমলে সঙ্গত কারণে এর পরিচয় ছিল টিসিপি। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের আমলে বেসরকারি পুঁজি এবং ব্যবসাকে দারুণভাবে উৎসাহিত করা হয়। বাঙালিরা সুযোগ পায়নি, তবে সেই সময় অবাঙালির ভেতর একটি বড় ধনিক এবং বণিক সম্প্রদায় গড়ে ওঠে। এতদসত্ত্বেও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ট্রেডিং করপোরেশন অফ পাকিস্তান (টিসিপি) প্রতিষ্ঠা করে। একপর্যায়ে এ কথাও শোনা গিয়েছিল যে, কেন্দ্রীয় বিজনেস ক্যাডার সার্ভিস করা হবে।

সম্ভবত এসব ধ্যান-ধারণায় পরোক্ষ ফল হিসেবে স্বাধীনতার পর ওহফবংঃৎরধষ গধহধমবসবহঃ ঝবৎারপব (ওগঝ) ক্যাডার করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকারখানা ঠিকমতো চালানো। পরে বোধহয় বিসিএস (প্রশাসন)-এর সঙ্গে একীভূত করা হয়। পাকি বাহিনী নয় মাস ধরে বাংলাদেশে ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। স্বাধীনতার পর ভোগ্যপণ্য এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, এমনকি গৃহনির্মাণ সামগ্রী যেমন টিন, সিমেন্ট এসবের ভা-ার ছিল শূন্য।

টিসিবির মাধ্যমে এসব সামগ্রী আমদানি করা হয়েছে। কিছু কিছু পণ্য ভোগ্যপণ্য সংস্থার অধীনে দোকানের মাধ্যমে এবং ব্যয়বহুল আইটেম যেমন সিমেন্ট স্থানীয় ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। দ্রব্যের অভাব হতো, কিন্তু তীব্র সংকটের সৃষ্টি হয়নি কখনো। অতএব টিসিবির অভিজ্ঞতার অভাব নেই। তবে তথাকথিত মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রবল চাপে টিসিবির কাজকর্ম সঙ্কুচিত হয়ে আসে।

বর্তমান সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনশীল পর্যায়ে রাখা। অথচ সরকার পেরে উঠেছে না। বাণিজ্যমন্ত্রী নরম-গরম সব রকম সুরে কথা বলেছেন। কিন্তু অর্জনের খাতায় শূন্য। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করলে পরিণতি খারাপ হয়।

যেমন বাজার থেকে মাল গায়েব। এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হলে পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের উন্নতি করতে হবে। টিসিবি এ ব্যাপারে শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে। একটা জিনিস লক্ষ করা গেছে যে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির ব্যাপারে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করে আসছে। একপর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব এবং দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

আমরা পত্রিকায় সেসব দেখেছি। যদি এসব নির্দেশনা ঠিকমতো এবং সময়মতো পালন করা হয়, তাহলে টিসিবি সক্রিয় হতে বাধ্য। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখনো শম্বুক গতিতে চলছে। তাই জনমনে প্রশ্ন উঠেছে যে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কার স্বার্থরক্ষায় বেশি আগ্রহী, জনসাধারণের না ব্যবসায়ীর? তথ্যপ্রযুক্তির কি অসামান্য অগ্রগতি সারা বিশ্বে। এখন অনলাইনে পণ্যের দাম জানা যায় ডিল চূড়ান্ত করা যায়।

দ্রুত যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে। অতএব বর্তমানে সেই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে যে, সরকারি সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব নিতে হলে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হবে। অতএব বাণিজ্য সচিব যেসব কথা বলতে চাচ্ছেন, তা টিসিবির ক্ষেত্রে খাটে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ে সরকার বেশ বেকায়দায় পড়েছে। এটা সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।

জ্ঞানের কথা, উপদেশ শুনতে শুনতে আমাদের কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। সেদিন যোগাযোগমন্ত্রী যখন রসিকতা করে জবাব দিচ্ছিলেন, তখন অনেক সংসদ সদস্য বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি। একজন সংসদ সদস্য তো পাল্টা কাটাকাটা জবাব দিলেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বারবার বলা হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে সেই মানসিকতা থাকতে হবে।

ডিজিটাল কথা বলতে হবে। এনালগ কথা যেমন ধৈর্য ধরুন, রাতারাতি হবে নাÑ এসব কথা বলা চলবে না। এসব হলো বস্তাপচা ঘ্যানঘ্যানানি। যে শুনবে, তার বিরক্তির উদ্রেক হবে। দুই. গত ১ জুন সংসদে একটি অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে।

মাঝে মাঝে আমাদের এই মহান সংসদে ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়েছে যা শুনতেও লজ্জা লেগেছে। সম্ভবত অতীতের এরকম ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়ে কিনা জানি না একজন সাংসদ বিরোধীদলীয় নেত্রী প্রসঙ্গে একটি কুৎসিত মন্তব্য ছুড়েছিলেন যেটা কেউ ভালোভাবে নেননি। এ ব্যাপারে স্পিকার অত্যন্ত দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে উপস্থিত সংসদ নেতা সকলে একে স্বাগত জানিয়েছেন। এটাই তো একটি সভ্য সচেতন সমাজের প্রত্যাশা রাজনীতি যারা করেন, তাদের কেউ কখনো ট্রেজারি বেঞ্চে আবার বিরোধী বেঞ্চে থাকবেন। কিন্তু আমরা জানি যে, তারা শ্রদ্ধার পাত্র।

তারা নিজেদের প্রতি পরস্পর শ্রদ্ধা দেখাবেন। তবেই না সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশের সৃষ্টি হবে। অনেক সময় একটা ভুল কথা বল। বিজয়ী দল অনেক সময় বলে বসে যে, বিজিত দল জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। জনগণ কাউকে প্রত্যাখ্যান করেন না।

আর সেরকম ইস্যুতে ভোট হয় না। যারা জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসেন, তারা অপরপক্ষ থেকে শতকরা মাত্র কয়েকটা বেশি ভোট পান। এসব কথা মনে রাখলে রাজনৈতিক পরিবেশ আরো উন্নত হবে। আর কয়েকদিন পর আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হবে। তারপর শুরু হবে বাজেট বক্তৃতা।

বাজেট বক্তৃতা মানে নিজ দলের বন্দনা এবং অপরপক্ষের কুৎসা করা। ভেতরে সারবস্তু কম থাকে। অনেক সময় এসব আলোচনার ফলে মূল বিষয় হারিয়ে যায়। এবার আমরা ডিজিটাল বাজেট বক্তৃতা প্রত্যাশা করি। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে যে, ২০১৫ সালে দরিদ্রের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা।

১৫ বছরের ভেতর ১১ বছর পার হয়ে গেলো। এবার বাজেট বক্তৃতায় আমরা আশা করি যে, এ বিষয়ে অগ্রগতির পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যাবে। অর্থাৎ এই লক্ষ্য থেকে আমরা কতোদূর। আর সে দূরত্ব কি অতিক্রম করা যাবে আগামী ৪ বছরে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আর ১নং লক্ষ্য অর্জন করতে এই নিরাপত্তা কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে কিংবা বলা চলে ইতোমধ্যে রেখে আসছে। এছাড়া আরো কিছু বিষয় রয়েছে যেমন গ্যাস, বিদ্যুৎ। এটা ঠিক যে বাজেটে সরকারি দল প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিতে পারে না। কিন্তু বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করতে তো বাধা থাকার কথা নয়। আলোচনার সময় তো ভুলত্রুটি তুলে ধরা যেতে পারে।

এমনকি ব্যর্থতার কথাও তো বলা যায়। যেমন ঢাকা শহর এবং আশপাশের নদীরক্ষার জন্য অনেক কথা হয়েছে, সেমিনার হয়েছে। কিন্তু অর্জনটা উল্লেখযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে নৌমন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকারি দলের সাংসদরা এতোটা না বললেও আদের অসন্তোষ তো প্রকাশ করতে পারেন।

মোট কথা আমরা এবার ভিন্ন ধরনের বাজেট বক্তৃতা আশা করছি যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।