আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চরম ভয়ের একটা হরর মুভির রিভি্উ

© এই ব্লগের কোন লেখা আংশিক বা সম্পূর্ণ আকারে লেখকের অনুমতি ব্যতীত অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবে না। বেশ কয়েকদিন ধরে ভাবছিলাম মেলা দিন কোনো হরর মুভি দেখা হয়না। অনেক শখ করে ডাউনলোডও করেছিলাম একটা। আজকে দেখে ফেললাম। এই দেখার পিছনে মূলত কাজ করেছে আমার বাসার হরর মুভির জন্য আদর্শ পরিবেশ।

কারন ঐ সময় আমার বাসা পুরা খালি ছিলো। তাই লাইট-দরজা সব বন্ধ করে রাত ১১ টার দিকে ছাড়লাম একটা মুভি। ভাইরে ভাই, কি দেখলাম এইটা? ভয়ে গা ছমছম করতেছে। অনেক দিন পর একটা হরর মুভি দেখে ভীষন ভয় পাইলাম। আগে এই মুভি সম্পর্কে আপনাদের কিছু ধারনা দেই।

প্রথমত এটি একটি স্প্যানিশ ভাষার মুভি। নামটাও খুব আজব টাইপের। [Rec] (2007)। এটির দ্বিতীয় পার্টও রয়েছে যার নাম [Rec] 2,এই মুভিটি ২০০৯ সালে রিলিজ পেয়েছে। আজকে [Rec] দেখলাম,আশা করি কালকে ২য় টা দেখবো।

[Rec] মুভিটির আই.এম.ডি.বি প্রোফাইলে গিয়ে দেখি মুভিটির রেটিং বেশ হাই,৭.৭,এবং প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি ভোট দিয়েছে। সাধারনত হরর মুভির রেটিং এতো ভালো খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়। আর এই মুভিটি ইউরোপীয়ান বেশ কয়েকটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আ্যওয়ার্ডও পেয়েছে। বুঝলাম, এই মুভিটি বেশ ভালোই হবে। মুভির শুরুটা বেশ সাদামাটা।

তবে ১৫ মিনিট যেতে না যেতেই শুরু হলো আসল খেলা। যাকে বলে ভয় ও সাসপেন্স কি জিনিস,কতো প্রকার ও কি কি। কোনো হরর মুভির ওয়ান এন্ড ওনলি উদ্দেশ্য হলো অডিয়েন্সকে ভয় দেখানো এবং যতোটা পারা যায় সাসপেন্সের মধ্যে রাখা। আর এই হারামী মুভিটা আমাকে ভয় তো শুধু দেখায়ই না বরং মনের মধ্যে রীতিমতো আতংকের সৃষ্টি করাতে বাধ্য করেছে। যত সময় গড়ায় মুভিটার সাসপেন্স আর ভয়ের মাত্রা যেন পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে।

লাস্ট কবে এরকম ভয় পেয়েছিলাম মনে নাই। এবারে আপনাদের কাহিনীটা হালকা বলে নেই। কাহিনীর শুরুতে দেখা যায়,একজন ইয়ং মেয়ে এন্জেলা (TV reporter) একটি টিভি প্রোগ্রামের হোস্টিং করছে। সাথে রয়েছে তার ক্যামেরাম্যান পাবলো। প্রোগ্রামটির নাম "While you're asleep"।

এই প্রোগ্রামটি মূলত যারা রাতের বেলায়ও কাজ করে থাকে তাদের উপর নির্মিত, যেমন পুলিশ,নাইটগার্ড,ডাক্তার প্রভৃতি। এই মুভির শুরুতে দেখা যাবে এন্জেলা এবং পাবলো একটি স্থানীয় ফায়ার স্টেশনের ফায়ারম্যানদের রাতের জীবন সম্পর্কে কাভার করছে। ফায়ারম্যানরা রাতে কি করে,কি খায়,কোথায় খায়,কোথায় ঘুমায়,ইমার্জেন্সিতে কিভাবে প্রস্তুত হয়,কিভাবে তারা কাজে নেমে পড়ে এইসব আরকি। এমনসময় ফায়ার স্টেশনে এলার্ম বেজে উঠে। খবর আসে অদূরে একটি এপার্টমেন্ট থেকে একজন মহিলা তাদের সাহায্যের জন্য ফোন করেছে।

পাবলো আর এন্জেলা কিছু ফায়ারম্যানদের সাথেই ঐ ঘটনাস্থলে যায় স্টোরিটি কাভার করতে। তারা গিয়ে দেখে সেখানের সকল বাসিন্দা নিচে ভীড় করে আছে। ঘটনাস্থলে একটি পুলিশের গাড়িও আসে। বাসিন্দারা সবাই জানায়,উপরের তলায় একজন মহিলার চিৎকার শুনা যাচ্ছে। ফায়ারম্যান,পুলিশ,এন্জেলা ও পাবলো যায় উপরে কি হয়েছে দেখবার জন্য।

গিয়ে দেখে একজন বয়স্ক মহিলা,যার সারা গায়ে রক্ত মাখামাখি,প্রচন্ড ডি্স্ট্রেসড এবং আক্রমনাত্মক ভংগীতে দাড়িয়ে রয়েছে। এরপর ঐ মহিলা একজন পুলিশকে অতর্কিতে আক্রমন করে। সবাই ভয় পেয়ে নীচে দৌড়ে নেমে এসে দেখে দেখে পুলিশ ও মেডিকেল টিম এসে সারা বাড়ী সিল করে দিয়েছে। মেডিকেল টিমের ভাষ্য অনুযায়ী, এ এপার্টম্যান্টটিতে BNC (Bio-nuclear-chemical রিঅ্যাকশান) Protocol declaration করা হয়েছে যাতে করে বিল্ডিংয়ের কেউই বের হতে না পারে। এরপরই ঘটতে থাকে একের পর এক ভয়ংকর ও বিভীষিকাময় ঘটনা।

পুরা মুভিটি আমরা দেখতে পাবো পাবলোর সেই ক্যামেরা ফুটেজের মাধ্যমে। অর্থাৎ এটি একটি home camera/1st person footage দ্বারা নির্মিত মুভি,অনেকটা Paranormal Activity, Blair Witch Project আর Cloverfield এর মতো। সুতরাং ভয়ের মাত্রাটাও একটু যেনো বেশি। আর রিসেন্টলি আমি যেসব হরর মুভি দেখেছি, এটি তার মধ্যে বেশ উপরের সারিতেই রাখবো। মুভিটি ধারাবাহিকভাবে ভয় দেখানোর অত্যন্ত সফল চেস্টা করেছে।

মেলা দিন পর ভয় পাইলাম। মুভিটির experience,feeling, আর atmosphere ভয়ংকর লেভেলের ভয়ালো। মুভিটির ডায়ালগ খেতা পুড়ি,মুভিটির স্টোরিও তেমন কোনো মজবুত না,তারপরেও হরর মুভির শতভাগ cinematic experiences এর গ্যারান্টি দিবে এই মুভিটা। স্প্যানিশ ভাষার ছবি হলেও ভাষাগত জটিলতায় পড়তে হবে না,কারন হরর মুভির আসল ভাষা যে তার ভয় দেখানোতেই। যারা হরর মুভি দেখে ভয় পেতে চান নিঃসন্দেহে এই মুভিটা দেখতে পারেন।

ভয় আপনি পাবেনই। চাপা আতংক কাকে বলে আপনাকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিবে। আর মুভিটির রানিং টাইম বেশ ছোটো। মাত্র ৭৫ মিনিটের। কিন্তু প্রতিটা মুহূর্তই টান টান উত্তেজনা আর ভয়ে ঠাসা।

আর দেরী না করে এখুনি দেখে ফেলুন। আমার মতো লাইট-দরজা বন্ধ করে,পারলে একজন বন্ধুসহ রাতের বেলা মুভিটি দেখে ফেলুন। ভয় পাওয়ার মজাটাই আসল,দিনে দুপুরে হরর মুভি দেখাটা যেনো নিজের সাথে প্রতারণার শামিল। বি:দ্র: মুভিটা কিন্তু বেশ ভয়ের,দূর্বল হার্টের জন্য রেকমেন্ডেড নহে। মুভিটির মিডিয়াফায়ার ডাউনলোড লিংক (মাত্র ৩৫০ মেগাবাইট) : Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।