“আমি নিরালায় একা খুজেঁ ফিরি তারে, স্বপ্নবিলাসী, কল্পনাপ্রবণ আমার আমিরে.........” আমি কখনো ডাক্তার হবো চিন্তা করিনি। সবসময় বাবাকে দেখে স্বপ্ন দেখেছি কালো গাউন পরার, ন্যায় বিচার করার। সেইভাবে নিজেকে তৈ্রির চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিধাতা বোধহয় মুচকি হাসছিলেন। কালো গাউনের জায়গায় সাদা এপ্রোন গায়ে চড়াতে হলো।
আমি চিকিৎসাবিদ্যায় নিজের ইচ্ছায় আসিনি, এসেছি আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষের অপূর্ণ সাধকে পূর্ণ করতে। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে ভর্তি হওয়াটা সময়ের ব্যাপার, ঠিক তখনই জানতে পারলাম তাঁর মনের কথা।
আমার বাবা ছিলেন বিচারক, রাশভারী স্বভাবের। খুব ভয় পেতাম তাঁকে। তাই সবসময় আমাদের তিন ভাই-বোনের সব আবদার থাকতো মায়ের কাছে।
কখনো আবদার মেটাতে পারতেন, কখনো অসহায়ত্ব প্রকাশ করতেন। আমি যখন ঢাকা কলেজে পড়তাম, কম্পিউটার কেনার জন্য খুব করে বায়না করলাম। বাবা জানি কি কারণে কিনে দিলেন না। মা আশ্বাস দিলেন, ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর ব্যবস্থা করে দিবেন।
আমার কলেজে পড়ার সময় মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে।
ঢাকার সিএমএইচে অপারেশন করা হলো। ডাক্তার বলেছিলো দেশের বাইরে গিয়ে কেমো ও রেডিওথেরাপী দিতে। আমার ভর্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। উনার চাপে পড়ে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিতে হলো। কিন্তু আমার স্বপ্ন কালো গাউন পড়া।
শেষ পর্যন্ত আমার জেদের কাছেই হার মানলেন। যেদিন চিকিৎসার জন্য বাইরে যাবেন, বলেছিলেন, “যাই পড়ো খুব ভালো করে পড়ো। আমার ইচ্ছা রাখতে পারছো না বলে ভেবোনা, আমার দোয়া সবসময় তোমার সাথে আছে”। আমার কি হলো জানি না, ঢাবিতে ভর্তি হবার আগের দিন মেডিকেলে ভর্তি হয়ে গেলাম। সাদা এপ্রোন গায়ে উঠলো, খুব একটা খারাপ লাগলো না।
মা যখন দেশে ফিরলো, তখন কম্পিউটারের কথা মনে করিয়ে দিলাম। এবারও বাবার মন গললো না। একদিন মেডিকেল কলেজ থেকে বাসায় গিয়ে দেখি একটা কম্পিউটার আমার রুমে শোভা পাচ্ছে। অনেকদিন পর জানতে পারি মা তাঁর গয়না বিক্রি করে আমার ইচ্ছা পূর্ণ করেছেন। মাকে একবার এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম, উনি বলেছিলেন, “ তুমি আমার ইচ্ছা রেখেছো, আমি তোমার ইচ্ছা রাখবো না?”
মেডিকেল কলেজেই এক মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলাম আমি।
কিভাবে যেন মা বুঝতে পারলেন তা, অস্বীকার করতে পারলাম না। মা ক্যাম্পাসে আসলেন, লিসাকে দেখলেন, আমার জাদরেল বাবাকে রাজী করালেন। আমাদের দু’জন কে বলতেন, “তোমরা বড় ডাক্তার হয়ে গরীবদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিবে”।
ফাইনাল ইয়ারের সময় জানতে পারলাম, এত উন্নত মানের চিকিৎসা সত্ত্বেও মায়ের ক্যান্সার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। কোনো কিছু করার নেই আমাদের, শুধুমাত্র ক্ষন গননা করা ছাড়া।
ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে বাসায় আসলাম। একটি মাস। তারপর একদিন আমার সামনেই মা চলে গেলেন।
তিনদিন পর পরীক্ষার ফলাফল দিলো, আমি ডাক্তার হলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।