রফিকুল\\\\----
ভোলার দৌলতখান উপজেলার সবচেয়ে অবহেলিত ইউনিয়নের নাম মেদুয়া। মেঘনাপারের এ জনপদে মাধ্যমিক স্তরের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ফলে শিক্ষার হার একেবারেই শূন্যের কোটায়। শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ওই এলাকার কয়েকজন শিক্ষিত ও সচেতন যুবকের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ২০০০ সালে সেখানে একটি দাখিল মাদ্রাসা গড়ে তোলা হয়। মাদ্রাসাশিক্ষায় শিক্ষিত এসব যুবক ওই ইউনিয়নের মুন্সীরহাট এলাকায় মাধ্যমিক স্তরের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পর স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সাড়া পড়ে।
মাদ্রাসাটির তিন দিকেই ভোলা সদরের শিবপুর, দৌলতখানের চরপাতা ও মেদুয়া ইউনিয়ন হওয়ায় ওইসব এলাকার ছাত্র-ছাত্রীরা সেখানে এসে ভর্তি হয়।
মাদ্রাসার সহ-সুপার মোহাম্মদ আলী মামুন জানিয়েছেন, বর্তমানে তাঁদের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৩০৩ জন। তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাব্যবস্থায় রয়েছে প্রায় শতভাগ সাফল্য। দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ২০০৮ সালে ১৯ জনের মধ্যে ১৯ জন, ২০০৯ সালে ২০ জনে ১৮, ২০১০ সালে ১৭ জনে ১৬ এবং সর্বশেষ ২০১১ সালে ১৭ জনে ১৭ জনই পাস করার গৌরব অর্জন করেছে।
মাদ্রাসার প্রধান মাওলানা মাকসুদুর রহমান জানিয়েছেন, বিগত সিডর ও আইলায় এ মাদ্রাসাটি বিধ্বস্ত হয়ে একেবারেই দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
প্রশাসনের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকাগুলোর সঙ্গে মেদুয়া বায়তুন নুর দাখিল মাদ্রাসাটির নাম দেওয়া হলেও সরকারিভাবে এর অবকাঠামো উন্নয়ন ও মেরামতের জন্য কোনো আর্থিক সাহায্য পাওয়া যায়নি। ফলে গত দুই বছরে এ মাদ্রাসার তিন শতাধিক ছাত্রছাত্রী খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করছে। এত সমস্যায় জর্জরিত থাকলেও থেমে নেই পাঠদান। শিক্ষার্থীদের মনোবলেও নূ্যনতম ফাটল ধরেনি।
মেদুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিলন মিয়া জানান, আইলা-সিডরে বিধ্বস্ত মাদ্রাসাটির জন্য প্রশাসনের কাছে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে আবেদন করা হলেও অজানা কারণে কোনো সাহায্য মেলেনি।
এ ব্যাপারে দৌলতখান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার বিশ্বাস জানান, 'সিডরের পর আমি এখানে বদলি হয়ে এসেছি। তখন ক্ষতিগ্রস্ত মাদ্রাসাটিকে কেন সাহায্য করা হয়নি, তা আমার জানা নেই। তবে সম্প্রতি এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সাহায্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। '
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন ওই মাদ্রাসাটিতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রীষ্মের ছুটিতেও শিক্ষকরা খোলা আকাশের নিচে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করছেন। এ সময় সেখানে কথা হয় এবারের দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ছাত্রী সালমা বেগমের সঙ্গে।
সালমা জানায়, 'শত বাধা-বিপত্তির মধ্যেও শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা আমাদের শিক্ষাদান করায় এবার আমরা কৃতিত্বের সঙ্গে শতভাগ সফলতা অর্জন করতে পেরেছি। ' আঁখি আক্তার নামের আরেক শিক্ষার্থী জানায়, 'শিক্ষকরা যথেষ্ট দায়িত্ব নিয়ে আমাদের পড়ালেখা করিয়েছেন। তাঁরা আমাদের প্রতিষ্ঠানটির জীর্ণদশা বুঝতে দেননি। ' তাদের দাবি, জরাজীর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটির সাহায্যে সংশ্লিষ্ট সবাই যেন হাত বাড়িয়ে দেয়। মাদ্রাসাটির এমপিওভুক্তিসহ এর অবকাঠামোগত উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।