আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিজোফ্রেনিয়া-মানসিক রোগ

মানুষের মানসিক অসুস্খতা বা মানসিক ব্যাধি প্রকৃতি অনুসারে দুই জাতের হতে পারে। এদের কতক মৃদু মাত্রার আবার কতক তীব্র মাত্রার। সিজোফেন্সনিয়া একটি তীব্র মাত্রার জটিল মানসিক ব্যাধি ব্যাধি। এটিকে এক-দু লাইনে সংজ্ঞায়িত করতে মেডিকেল গবেষকরা পর্যন্ত হিমশিম খেয়ে যান। তাই সিজোফেন্সনিয়াকে সংজ্ঞায়িত করার ব্যাপারটিকে অনেকে কৌশলে এড়িয়ে চলেন।

এ তীব্র জটিল মানসিক অসুখটিতে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকলাপ যথেষ্ট বিঘিíত হয়, যাতে করে সিজোফেন্সনিকরা তাদের পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক জীবনে ও তাদের দৈনন্দিন ব্যক্তিজীবনে পর্যন্ত বিপর্যস্ত ও বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। এদের চিন্তা, চেতনা, অনুভূতি, কাজকর্ম বাস্তবতার সাথে কেমন যেন খাপছাড়া। সিজোফেন্সনিকরা নিজস্ব মনোজগত ভুবন তৈরি করে নেয়, যার মাঝে বাস্তবতার লেশমাত্র নেই। বাস্তবতার সাথে তাদের চিন্তা-চেতনা, আবেগ-অনুভূতি আর বোধশক্তির এত বেশি ফারাকের জন্যই এটিকে আমরা সাইকোসিস বলে থাকি। সাইকোটিক রোগীরা তারা নিজেরা যে অসুস্খ সেটি পর্যন্ত বুঝতে পারে না।

সিজোফেন্সনিয়া অনেক সময় এত ধীরে ধীরে বিকশিত হয় যে, পরিবারের সদস্য বা রোগী নিজেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বুঝতে পারেন না যে, তিনি এক ভয়াবহ মানসিক ব্যাধিতে অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে যাচ্ছেন। এ ধরনের সিজোফেন্সনিয়াকে আমরা বলি ইনসিডিয়াল সিজোফেন্সনিয়া। হঠাৎ করে যদি সিজোফেন্সনিয়া হয়ে যায় এবং উপসর্গগুলো স্পষ্ট থাকে তবে তাকে একিউট বা ক্রাইসিস সিজোফেন্সনিয়া বলে। একিউট বা হঠাৎ করে যে সিজোফেন্সনিয়া হয় তা সাধারণত তীব্রমাত্রাসম্পন্ন হয়ে থাকে। এতে হ্যালুসিনেশন বা অলীক প্রত্যক্ষণ, ডিলিউশন বা ভ্রান্ত বিশ্বাস, চিন্তন পদ্ধতিতে গণ্ডগোল ও নিজের সম্পর্কে অস্তিত্ববোধ বা নিজস্ব অনুভূতিবোধ বিকৃত হয়ে যেতে পারে।

সিজোফেন্সনিক রোগীদের লক্ষণ ও উপসর্গ কতক ক্ষেত্রে কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহের মাঝে স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে। এ সময় এদের আচরণজনিত নাটকীয় পরিবর্তন সম্পন্ন হয়ে থাকে। অনেকের আবার জীবনব্যাপী এ ধরনের ছোটখাটো নাটকীয় আচরণ বা অস্বাভাবিক আচরণ কয়েকবার হয়ে থাকে। পরপর দুটি এপিসোড বা অ্যাটাক হওয়ার মাঝখানে তারা আবার মোটামুটি স্বাভাবিক জীবন-যাপন করে থাকে। অনেকে আবার এ সময়ে সব বিষয়ে অনীহায় ভোগে, অবসন্ন বা বিষণí থাকে, স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারে না।

সিজোফেন্সনিয়ার উপসর্গ হ্যালুসিনেশন বা অলীক শ্রবণ সিজোফেন্সনিয়া রোগীদের অনুভূতি বা ইন্দ্রিয় স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি শাণিত ও তীক্ষîরূপ ধারণ করে। যেসব তথ্য পঞ্চইন্দ্রিয়ের সাহায্যে মস্তিষ্কে পৌঁছায়, মস্তিষ্কে এক্ষেত্রে সেসব তথ্যকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ-ব্যাখ্যা করতে পারে না। তাই এসব তথ্যের তাড়নায় ব্যক্তি যে সাড়া দেয় তা থাকে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অসংলগ্ন। সিজোফেন্সনিকরা এমন কথাবার্তা শুনতে পান যে, তাকে বলা হচ্ছে ‘তুমি এটা কর ওটা কর’। অথচ আশপাশে কেউ নেই বা আশপাশে কেউ থাকলেও তারা কিন্তু কিছুই শুনতে পাচ্ছে না।

এ অলীক বা গায়েবি আওয়াজকে বলা হয় ‘অডিটরি হ্যালুসিনেশন’। একজন সিজোফেন্সনিকের উদাহরণ দিচ্ছি­ তিনি বাসে করে কোথাও যাচ্ছিলেন পথের মাঝে চলন্ত বাসে তার কানে গায়েবি আওয়াজ আসতে শুরু করল এবং তা তার কানে বলল ‘তুই এক্ষণি বাস থেকে নেমে যা’। যেই শোনা সেই কাজ­তৎক্ষণাৎ সিজোফেন্সনিক রোগীটি চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে পড়ল। পরে সে যখন আবার সাইকিয়াট্রিস্টের সাথে দেখা করল তখন দেখা গেল তার ক্ষতবিক্ষত চেহারা অর্থাৎ সিজোফেন্সনিকরা কানে যা শোনে তা বিশ্বাস করে ও সাথে সাথে মানে। তবে কতক ক্ষেত্রে সিজোফেন্সনিকরা যে অডিটরি হ্যালুসিনেশনে ভোগে তাতে তারা আশ্বস্ত হওয়ার বা নিরপেক্ষ কোনো শব্দ শুনে থাকে।

কতক আবার চোখেও এমন জিনিস দেখে যা অন্যরা দেখে না। ডিলিউশন বা ভ্রান্ত বিশ্বাস সিজোফেন্সনিকদের অস্বাভাবিক বিশ্বাস থাকতে পারে। এতে তারা তাদের বিশ্বাসগুলোতে সব সময় অবিচল থাকে­বিশ্বাসগুলো ব্যক্তির সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও কালচারাল বা সংস্কৃতিগত এবং শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী, তথাপি রোগী এতে বিশ্বাস স্খাপন করে। বিস্তারিতঃ http://ptohelp.blogspot.se ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।