যতোবার আমি শান্তি খুঁজেছি, ঠিক ততোবার আমার মাথায় শুধু একটি চিন্তাই এসেছে। সেটা হচ্ছে একটা ড্রিল মেশিন দিয়ে মাথার খুলিটা ফুটো করে দেওয়ার চিন্তা।
গ্রীক পুরানে বর্ণিত অ্যাক্টিয়ন এর কাহিনীকে হতভাগ্যের নিদর্শন হিসেবে আখ্যায়িত করলে খুব একটা ভুল হবেনা। অ্যাক্টিয়ন কোন সফল গ্রীক নায়ক , কিংবা মহানায়ক হতে পারেন নি এই ক্ষেত্রে যে তাকে শেষ পর্যন্ত নির্মমভাবেই মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল।
অ্যাক্টিয়ন ছিল থিবিস রাজ পরিবারের সদস্য বা বংশধর।
অ্যাক্টিয়ন এর বাবা অ্যারিস্টাস এবং মা অটোনী, যিনি ছিলেন ক্যাডমাস এর কন্যা।
থিবিস রাজ পরিবার প্রারম্ভ থেকেই ছিল দুর্ভাগ্য পীড়িত। অ্যাক্টিয়ন এর ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি।
থিবিস পরিবারের রাজকুমার অ্যাক্টিয়ন ছিল এক দক্ষ শিকারি। তার শিকার চর্চা শুরু হয় তার গুরু ‘চেরন’ এর হাতে যাকে গ্রীক মিথ এ একজন মহাজ্ঞানী এবং সফল শিক্ষক হিসেবে ধরা যায়।
অ্যাক্টিয়ন এর মৃত্যুকে শুধুমাত্র অ্যাক্টিয়ন এর দুর্ভাগ্য বললে ভুল হবে, এটি বস্তুত অ্যাক্টিয়ন এর মা অটোনী এর দুর্ভাগ্যও বটে, কারন তাকে জীবনের অনেক দীর্ঘ সময় সইতে হয়েছিলো পুত্র হারানোর শোক, যেখানে অ্যাক্টিয়নকে মোটামুটি ভাবে নির্দোষ হিসেবেই ধরে নেয়া যায়।
গ্রীক দেবী আর্টেমিস ছিলেন একজন কুমারী যিনি শিকারের প্রধান দেবী। যেহেতু অ্যাক্টিয়ন নিজেও একজন শিকারি সুতরাং তিনি আর্টেমিস এর অনুসারী হবেন এটাই স্বাভাবিক। অ্যাক্টিয়ন আর্টেমিস এর অনুসারী ছিলেনও, কিন্তু এই শিকারই ডেকে এনেছিল তার দুর্ভাগ্য। অ্যাক্টিয়ন শিকার করতেন তার বিশ্বস্ত কুকুরের পাল নিয়ে, যা ছিল অত্যন্ত হিংস্র।
গার্গাফিয়া এর উপত্যকাটি ছিল পাইন গাছ এবং সাইপ্রেস জাতীয় গুল্মে ঘের, যেটি আসলে শিকারি দেবী আর্টেমিস এর পবিত্র বিচরণ ক্ষেত্র। এই উপত্যকার অনেক গভীরে ছিল এক গুহা, যেটি প্রকৃতি নিজ হাতেই সংরক্ষিত করেছিল লোক চক্ষুর আড়াল থেকে। গুহার অভ্যন্তরে কোন এক উৎস থেকে নেমে আসা জলধারা দিয়ে তৈরি হয়েছিলো এক জলাধার , যেটা ছিল আর্টেমিস এর খুব প্রিয়, কারন এখানেই এই কুমারী দেবী শিকার শেষে স্নান নিতেন তার কুমারী ভৃত্যদের সাথে।
অ্যাক্টিয়ন ছিলেন এই স্থানটি সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। কোন একদিন শিকারের নিমিত্তে অ্যাক্টিয়ন প্রবেশ করে এই উপত্যকাটিতে।
তৃষ্ণায় অস্থির হয়ে জলের সন্ধানে সে প্রবেশ করে আরও গভীরে, তার কুকুরের পাল ছিল তার সাথে। কিছুদুর অগ্রসর হয়েই তার চোখে পড়ে গুহার প্রবেশমুখ।
আর্টেমিস এবং তার কুমারী ভৃত্যরা তাদের পোশাক ছেড়ে স্নানের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। এমন অবস্থায় তার নগ্ন ভৃত্যরা গুহার মুখে অ্যাক্টিয়নকে দেখে ফেলে। তারা তারস্বরে চিৎকার করে এবং চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে কুমারী আর্টেমিসকে।
কিন্তু আর্টেমিস ছিলেন অনিন্দ্য সুন্দরী এবং সবার চেয়ে লম্বা। ফলে সহজেই অ্যাক্টিয়ন দেখে ফেলে নগ্ন কুমারী আর্টেমিসকে। হতবিহব্বল অ্যাক্টিয়ন পালাতে ভুলে যায়, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আর্টেমিস এর দিকে। দেবীর সৌন্দর্যের কাছে হার মেনে দাড়িয়ে থাকা যুবকটিকে অবশ্য পালাবার কথা বলবার মতো কেউই ছিল না তার পাশে, তাহলে হয়তো অ্যাক্টিয়ন এর এই পরিনতি হতো না। কিছুক্ষনের জন্য অ্যাক্টিয়ন আর্টেমিস এর সৌন্দর্যে অন্ধ হয়ে যায়।
দেবীকে এইরূপে দেখার সৌভাগ্য কয়জনের হয়?
কিন্তু আসলে তা সৌভাগ্য ছিল না। আর্টেমিস কোন রকম চিন্তা ভাবনা ছাড়াই অ্যাক্টিয়নকে শাস্তি দিতে চাইলেন। তিনি বিন্দুমাত্র বিলম্ব না করে অ্যাক্টিয়ন এর মুখে কিছু পানি ছিটিয়ে দিলেন, কারন আর্টেমিস এর ধনুক ছিল তার হাতের নাগালের বাইরে এবং বলে উঠলেন-
“এখন তুমি সবাইকেই বলতে পারো তুমি দেখেছো বিবসনা আর্টেমিসকে , যদি তোমার তা বলার সামর্থ্য থাকে। ”
তার ছিটিয়ে দেওয়া জল কাজ করলো অব্যর্থ এক অস্ত্র হিসেবে, জাদুর বলে সেই জল রূপান্তরিত করলো অ্যাক্টিয়নকে মানুষ থেকে একটি পুরুষ হরিণে। এবং তার চিত্ত ও হয়ে গেলো হরিনের মতোই, ভীত, সন্ত্রস্ত।
মুহূর্তের মধ্যেই সে পালাতে চাইলো সেই জলাশয় থেকে, কিন্তু অ্যাক্টিয়ন এর বিশ্বস্ত কুকুরের পাল তাকে তাড়া করলো। ভীত হরিন তার সমস্ত শক্তি দিয়েও পিছে ফেলতে পারলো না কুকুরের পালকে। হতভাগ্য শিকারির মৃত্যু তারই বিশ্বস্ত কুকুরের দ্বারা,তারা হত্যা করলো হরিণটিকে এবং ছিন্নভিন্ন করে দিলো তার দেহকে।
কুমারী আর্টেমিস এভাবেই শাস্তি দিলেন অ্যাক্টিয়নকে। এটির জন্য দায়ী আসলে সেই নারী সৌন্দর্য,যার জন্যে অ্যাক্টিয়নকে দিতে হল প্রান।
দেবী আর্টেমিস এর ভয়ংকর সৌন্দর্যই ডেকে এনেছিল মৃত্যুকে, হতভাগ্য অ্যাক্টিয়ন এর কাছে।
ছবিঃ ইন্টারনেট
তথ্যঃ ইন্টারনেট
http://'www.mythindex.com/greek-mythology/A/Actaeon.h
http://'www.users.'globalnet.co.uk/'~loxias/diana.htm'
http://'www.paleothea'.com/Myths/Actaeon.ht
http://'www.maicar.com/'GML/'Actaeon.ht
http://'www.online-mythology.com/'diana-actaeon
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।