আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ ২৫শে মে, জাতীয় কবি নজরুলের ১১২তম জন্মজয়ন্তী

ইতিহাসের পেছনে ছুটি তার ভেতরটা দেখবার আশায় বিপ্লব, সাম্য ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কবিতা, গদ্য, উপন্যাস, সঙ্গীত, গল্পসহ সাহিত্য-শিল্পের নানা শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণ। সাহিত্যের পাশাপাশি সঙ্গীতেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ভিন্ন এক মাত্রায়। অসামপ্রদায়িক এই কবি মাত্র ২৩ বছরের লেখক জীবনে বাঙালির চিন্তা-মনন ও অনুভূতির জগতে নানাভাবে নাড়া দিয়েছেন। ফ্যাসিবাদ, অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ধরেছিলেন কলম, গেয়েছিলেন সাম্যের গান।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১২তম জন্মজয়ন্তী আজ বুধবার। ১৮৯৯ সালের ২৫ মে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামের এক মুসলিম পরিবারে জন্মেছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল। দুই বাংলাতেই নজরুলের কবিতা ও গান সমানভাবে সমৃদ্ধ। কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তিনি বিদ্রোহী কবি পরিচয়ে ভূষিত হন। কবিতার মাধ্যমে তিনি নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন।

মানুষের প্রতি মানুষের অন্যায় আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বেছে নিয়েছেন কবিতাকে। কবি-সাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ, সাংবাদিক পরিচয়ের বাইরে রাজনীতিবিদ ও সৈনিক হিসেবে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সর্বদাই সোচ্চার ছিলেন নজরুল। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতোই তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে।

এ কারণেই তিনি বিদ্রোহী কবি। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা থেকে ফেরার পথে নজরুল দু'টি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্মের সৃষ্টি করেন। একটি হচ্ছে বিদ্রোহী কবিতা ও অপরটি ভাঙ্গার গান। এগুলো বাংলা কবিতা ও গানের ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল। এ বছর বিদ্রোহী কবিতার ৯০ বছর পূর্তি হচ্ছে।

১৯২২ সালে তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণা প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে বাংলা কাব্যের জগতে পালাবদল ঘটে। এই কাব্যগ্রন্থের প্রলয়োল্লাস, বিদ্রোহী কামাল পাশা, শাত-ইল-আরব, আগমনী, খেয়াপারের তরণী প্রভৃতি কবিতা বাংলা কাব্যে নতুন বাঁক সৃষ্টি করেছিল। সঙ্গীত রচনায় নজরুলের অসাধারণ প্রতিভার সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি প্রায় ৩ হাজার গান রচনা ও সুর করেছেন।

নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন ধ্রুপদী ধারার সঙ্গে। দুর্বোধ্য ও আভিজাত্য নিয়ে চলা রাগনির্ভর গানকে ভেঙেচুরে সাধারণের কাছে সহজবোধ্য ও শ্রুতিমধুর করেছেন। রাগ-রাগিণীকে নিয়ে দারুণভাবে খেলিয়েছেন গানে গানে। এক রাগের সঙ্গে অন্য রাগের মিলন ঘটিয়ে সঙ্গীতে এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেছেন। রাগ-রাগিণী নিয়ে এই ভাঙা-গড়ার খেলায় মীনাক্ষী, দোলনচাঁপার মতো নতুন অনেক রাগের সৃষ্টি করেছেন তিনি।

এক কথায় বাণী ও সুরের বৈচিত্র্যে সৃষ্ট নজরুল সঙ্গীত বাংলা সঙ্গীতের এক অপার বিস্ময়। বাল্য বয়সেই নজরুল লোকশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে লেটো দলে (বাংলার রাঢ় অঞ্চলের কবিতা, গান ও নৃত্যের মিশ্র আঙ্গিক চর্চার ভ্রাম্যমাণ নাট্যদল) যোগ দেন। এই লেটো দলেই তার সাহিত্যচর্চার শুরু হয়। এই দলের বিভিন্ন নাটকের জন্য তিনি গান ও কবিতা রচনা করেন। নজরুলের পড়ালেখার হাতেখড়ি হয় মক্তবে।

তীব্র দারিদ্র্যের কারণে মাত্র ১০ বছর বয়সেই পরিবারের ভার বহন করতে হয়েছে নিজেকে। রুটির দোকানে কাজ করা থেকে শুরু মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবেও কাজ করেছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এই কবি তৎকালীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সোচ্চার ভূমিকা রাখার কারণে অসংখ্যবার জেলও খেটেছেন। জেলে বসে লিখেছেন রাজবন্দির জবানবন্দি।

এসব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধার্মিক মুসলিম সমাজ ও অবহেলিত জনগণের সঙ্গে তাঁর বিশেষ সম্পর্ক থাকলেও নিজেকে কখনোই সামপ্রদায়িকতার মোড়কে বন্দি করেননি। তাঁর সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালোবাসা, মুক্তি ও বিদ্রোহী। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি কলম ধরেছেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, সঙ্গীত, নাটক লিখলেও মূলত কবি হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। তাঁকে দেয়া হয় জাতীয় কবির মর্যাদা। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুলকে ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে দেয়া হয় একুশে পদক। কবির জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে।

১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।