আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চার কারখানার রপ্তানির অর্থ দেশে আনার উদ্যোগ

সাভারের রানা প্লাজার চার পোশাক কারখানার পাওনা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার তৎপরতা শুরু করেছে পোশাকশিল্প মালিকদের সমিতি বিজিএমইএ। এ জন্য কারখানাগুলোর কার্যাদেশের বিপরীতে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার বা জিএসপি (জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স) সনদ চেয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোতে (ইপিবি) আবেদন করেছে সমিতি। জিএসপি সনদের মাধ্যমে শুল্ক ছাড় পেয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্য ইউরোপের দেশে দেশে রপ্তানি হয়।
জানা যায়, ফ্যান্টম অ্যাপারেল, ফ্যান্টম ট্যাক, নিউ ওয়েভ ট্যাক ও নিউ ওয়েভ বটমস ভবনধসের আগে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে ১৫ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। এই পুরো টাকা দেশে প্রত্যাবাসন করতে এখন জিএসপি সনদ দরকার।


বিজিএমইএ এই জিএসপি সনদ পাওয়া এবং তা আমদানিকারকের কাছে পাঠানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। সমিতির সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম গত সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে ইপিবির কাছে চিঠিও দেন।
ইপিবি জানায়, সাভারের রানা প্লাজার ফ্যান্টম অ্যাপারেল ও ফ্যান্টম ট্যাক ইউরোপীয় ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রায় ১২ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্যের কার্যাদেশ পায়। গত ২৪ এপ্রিল ভবনধসের আগেই কার্যাদেশের বিপরীতে দুটি চালানে জাহাজীকরণ সম্পন্ন করে প্রতিষ্ঠান দুটি। বাকি তিনটি চালান জাহাজীকরণের অপেক্ষায় রয়েছে।

ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠান দুটির চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম গ্রেপ্তার হয়েছেন। অন্যদিকে নিউ ওয়েভ বটমস ও নিউ ওয়েভ স্টাইল ভবনধসের আগেই ইউরোপে প্রায় তিন লাখ মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। কারখানা দুটির চেয়ারম্যান বজলুস সামাদ আদনান ও পরিচালক মাহমুদুর রহমানও বর্তমানে কারাগারে আছেন।
জিএসপি-সুবিধা পাওয়ার জন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সনদ ইস্যু করে ইপিবি। এই সনদ দাখিল করে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নে সর্বোচ্চ সাড়ে ১২ শতাংশ কর ছাড় পেয়ে থাকে।

এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে বাংলাদেশের পোশাক অন্য দেশের চেয়ে মূল্য প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যায়।
জানতে চাইলে শহিদউল্লাহ আজিম গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, যদি জিএসপি-সুবিধার সনদ দেওয়া না হয়, তাহলে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ হারাবে দেশ। তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজার প্রতিষ্ঠানগুলো যে পণ্য রপ্তানি করেছে, তার অনুকূলে জিএসপি সনদ ইস্যু করার আবেদন করেছি আমরা। এটি না হলে বিদেশি ক্রেতারা অর্থ পরিশোধ করবে না। ’
শহিদউল্লাহ আজিম আরও বলেন, ‘কারখানাগুলোর মালিকেরা জেলে আছেন।

এদিকে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে। তাই এই টাকাগুলো এলে কিছুটা সহযোগিতা হবে। ’
তবে ইপিবির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সাভারের ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে জিএসপি সনদ ইস্যু করার ক্ষেত্রে কিছুটা দোটানায় পড়েছে সরকারি এই সংস্থা। ইপিবির পক্ষ থেকে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও আইনজ্ঞদের মতামত নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তাঁরা।
অবশ্য ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান চারটির অনুকূলে জিএসপি সনদ ইস্যুর জন্য বিজিএমইএ আমাদের কাছে লিখিত আবেদন করেছে।

বিষয়টি আমাদের বিবেচনাধীন রয়েছে। সনদ ইস্যুর ক্ষেত্রে আমাদের দিক থেকে আইনগত কোনো বাধা নেই। ’
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, নিউ ওয়েভ বটমস বছরে এক লাখ ডজন প্যান্ট ও শার্ট তৈরি করত। এ ছাড়া নিউ ওয়েভ স্টাইল বছরে ৬০ হাজার ডজন প্যান্ট, শার্ট ও ট্রাউজার; ফ্যানটম ট্যাক ১৯ লাখ পিস পোলো শার্ট ও টি-শার্ট; ফ্যানটম অ্যাপারেলস ছয় লাখ পিস প্যান্ট, শার্ট, জ্যাকেট ও ট্রাউজার এবং ইথারটেক্স পাঁচ লাখ পিস প্যান্ট ও শার্ট উৎপাদন করত।
এই কারখানাগুলো ভবনধসের আগে দীর্ঘদিন ধরে বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, স্পেন, যুক্তরাজ্য, ইতালি, পোল্যান্ড, সুইডেন, নেদারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, জার্মানিতে পোশাক রপ্তানি করে আসছিল।


উল্লেখ্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইপিবিকে দিয়ে সাভারে ভবনধসের যে তদন্ত করিয়েছে, তাতে সাভার ট্র্যাজেডির জন্য ভবনের মালিক, পোশাক কারখানার মালিক ও ভবন নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়ী করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে ‘দুর্ঘটনার জন্য দায়ী’ অংশে বলা হয়, ত্রুটিপূর্ণ নকশা ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় রানা প্লাজা ধসে পড়ে এবং স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। এ জন্য ভবন এবং পোশাক কারখানার মালিকপক্ষ দায়ী। তাঁদের অসচেতনতা ও অদূরদর্শিতা, মাইকিং করে ভুল তথ্য প্রকাশ এবং জোর করে শ্রমিকদের কাজে বাধ্য করায় এই হূদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে।
তবে ইপিবিতে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের বিশেষজ্ঞ না থাকায় এ-সংক্রান্ত ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।

যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য আরেকটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।