আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সফল উদ্যোক্তা হতে প্রয়োজন

আমারে দিবো না ভুলিতে ‘সততা, দৃঢ়তা, নিষ্ঠা, ঈমান এবং একাগ্রতা- এসব গুণই একজন মানুষকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে পারে’ - এমনটিই মনে করেন দেশের অন্যতম ব্যবসায়ী এবং ‘ইফাদ গ্রুপ’ এর চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ টিপু। গত ২৫ বছরে তার ব্যবসায়িক ক্যারিয়ারে তিনি গড়ে তুলেছেন ইফাদ অটোস, ইফাদ এন্টারপ্রাইজ, ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টস, ইফাদ এগ্রো কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। লিখেছেন মোজাহেদুল ইসলাম ১৯৮৫ সালে ভারতীয় অশোক লেল্যান্ড কোম্পানির এদেশীয় পরিবেশক হিসেবে বাস, ট্রাক, ভ্যান, কভার্ড ভ্যান, দ্বিতল বাস বাংলাদেশ সরকারের বিআরটিসি বিভাগ ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত পরিবহন পুলে এবং ব্যক্তিগত পরিবহন কোম্পানিতে সরবরাহ করে আসছেন। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলো হতে এসব গাড়ি আনতে যেখানে কোটি কোটি টাকার প্রয়োজন হয় সেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত হতে অনেক কম মূল্যে যানবাহন এনে এদেশে সরবরাহ করতে থাকেন তিনি। ২০০৩ সালে স্বয়ংক্রিয় মেশিনে প্রস্তুত আটা, ময়দা, সুজি প্রভৃতির কারখানা ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টস স্থাপন করেন আশুলিয়াতে।

এই ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টস ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক থেকে আগামী দু’এক মাসের মধ্যেই বাজারে ছাড়া হবে বিস্কুট, নুডলস, কেক প্রভৃতি খাদ্যদ্রব্য। ইফাদ-এর এসব খাদ্যদ্রব্যের মান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘স্বয়ংক্রিয় মেশিনে প্রস্তুত হয়, তাই ভেজালের আশংকা নেই। নষ্ট গম কোন মেশিনে দিলে তা নেয় না। বাজারের খারাপ পণ্যের চেয়ে এক টাকা বেশি দিয়ে তাই গ্রাহকরা আমারটাই কিনে থাকেন’। ইফাদ অটোস এর কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ধামরাইয়ে অবস্থিত ইফাদ অটোস-এর এসেম্ব্লিং সেন্টার থেকে প্রতি মাসে ৩০০ অশোক লেল্যান্ড বিক্রি করেছি।

আমরা বিক্রোয়োত্তর সেবা পৌঁছে দেই সবার দোরগোড়ায়। বিআরটিসিকে প্রতিযোগী বাস কোম্পানির চেয়ে কম দামে মাল দিচ্ছি এবং সেরা সার্ভিস দিচ্ছি। তাইতো সরকারি প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে কাজ দিচ্ছে’। ময়মনসিংহের ভালুকায় ইফাদ প্রতিষ্ঠা করেছে দেশের সবচেয়ে বড় মত্স হ্যাচারী ইফাদ এগ্রো কমপ্লেক্স। প্রতি মৌসুমে ৫,০০০ কেজি রেনু পোনা তৈরি করে মত্স চাষীদের মধ্যে বিতরণ করে এই হ্যাচারী।

অন্যদিকে দেশের বড় বড় ফার্মাসিউটিক্যালস, কেমিক্যাল, টেক্সটাইল, প্লাস্টিক, ফুড ও বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভারতের এলজি ব্র্যান্ডের এয়ার কম্প্রেসার বাজারজাত করছে ইফাদ এন্টারপ্রাইজ। অন্যসব ক্যারিয়ার থাকতে ব্যবসাকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিলেন কেন ? এমন প্রশ্নের উত্তরে ইফতেখার আহমেদ টিপু বলেন, আমার কর্মজীবন প্রথমে ব্যবসায়ী হিসেবে শুরু করিনি। চাকুরি দিয়েই ক্যারিয়ার শুরু করেছি। পাকিস্তান আমলে আমার বাবা ছিলেন পাকিস্তান সরকারের কর্মকর্তা। তখন দেখতাম শিল্প বাণিজ্য সবাই পাকিস্তানিদের দখলে।

১৯৭২ সালে আমি কলকাতায় একটি পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতের বিভিন্ন স্থানে দেশের অবহেলিত গরীব দুঃখী মানুষের জন্য সাহায্য চেয়ে বেড়াতাম। যা পেতাম তা একসাথে করে দেশে পাঠিয়ে দিতাম। এরপরও আমি অনেকদিন চাকরি করেছি। ইফাদ গ্রুপের সাফল্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ১৯৮৫ সালে আমি ব্যবসা শুরু করি।

বর্তমান ইফাদ গ্রুপে প্রত্যক্ষভাবে ১৩০০ লোক কাজ করে। এই ২৬ বছরের ব্যবসায়িক সাফল্য হচ্ছে বাংলাদেশের সেরা ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ইফাদ গ্রুপ এখন ১২তম। ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে আমরা অনেক কিছুই করতে পারি। আমরা বিদেশে শ্রমিক পাঠিয়ে রেমিট্যান্স আনছি। আমি একে বলি শ্রম এক্সপোর্ট করছি।

শ্রম বাজার আমাদের দেশেই রয়েছে। এতটাকা খরচ করে বিভিন্ন দেশে শ্রমিক গিয়ে শূন্যহাতে ফিরে আসছে। এরা যদি বিভিন্ন খাল, পুকুরে মাছের চাষ করে, তবে এরা নিজেরাই সাবলম্বি হতে পারে। নানামুখী শিল্পের দিকে গুরুত্ব দিতে চান ইফতেখার আহমেদ টিপু। তিনি বলেন, দিন দিনই নানা কারণে আমাদের আবাদী জমির পরিমাণ কমছে।

তাই আমাদের কৃষি নির্ভরতা কমিয়ে শিল্প উত্পাদনের দিকে ঝুঁকতে হবে। গার্মেন্টস শিল্পের মতো অন্য শিল্প খুঁজে বের করতে হবে যাতে বৃহত্ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হয়। শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত ১৫% লাভ হতে ৫% শ্রমিকদের জন্য ছেড়ে দিলে শ্রমিকরা দ্বিগুণ উত্সাহে কাজ করবে এবং উত্পাদনশীলতা বাড়বে। দেশে তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তার সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, দেশে আরো বেশি তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে হলে ব্যাংকগুলো বিনা জামানতে বা স্বল্প জামানতে স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ দিতে হবে। এ ব্যাপারে আমি একটি বাস্তব উদাহরণ দিতে চাই।

লন্ডনে একটি ব্যাংকে চীনা একজন রাঁধুনী তার নিজের ছোট একটি রেস্টুরেন্ট খোলার জন্য ঋণ নিতে আসলে ব্যাংক কর্মকর্তা তাকে জানায় যে তার ঋণ নিতে হলে গ্যারান্টার লাগবে। উত্তরে সে বলে, আমার নিজের হাতই আমার গ্যারান্টার। এই হাত দিয়ে আমি খাবার তৈরি করে পরিবেশন করে টাকা উপার্জন করব। আর ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করব। ইফতেখার আহমেদ টিপু বলেন, বিশ্বের খাদ্য খাটতির সঙ্গে বাংলাদেশের খাদ্য ঘাটতি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।

দেশের লোকসংখ্যার অনুপাতে দেশের আয়তন কম। সেই সঙ্গে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উত্পাদনও কম। একারণেই বাংলাদেশ যথার্থই আমদানীকারক দেশ। খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্যাদি আমদানি করতে গিয়ে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে প্রতি বছর। এই আমদানি চট্টগ্রাম ও খুলনা বন্দর দিয়ে করা হয়ে থাকে।

বর্তমানে নদীগুলোর নাব্যতা নেই বললেই চলে। যার ফলে নৌপথ থেকে সড়কপথে মাল পরিবহন একমাত্র সুবিধাজনক মাধ্যম। এজন্য দরকার রাস্তাঘাটের দ্রুত উন্নয়ন। তবেই দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। নতুন প্রজন্মের যারা উদ্যোক্তা হিসেবে আসতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্ম এখন আরো বেশি সচেতন।

তাই তাদের নতুন নতুন ক্রিয়েটিভ আইডিয়াগুলোতে অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান ও সরকার সহযোগিতার হাত বাড়ালেই তারা ভালো উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।