আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেখ হাসিনার ত্রিশ বছরের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভালমন্দ দিক

আবদুল গাফ্ফার চৌধুর---- দিনটার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। ত্রিশ বছর আগে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভানেত্রী হিসেবে বিদেশ থেকে স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন সে কথাটা ভুলেই গিয়েছিলাম। একজন সচেতন এবং হাসিনার শুভাকাঙ্ৰী কলামিস্ট হিসেবে এই ভুলে যাওয়া যে অপরাধ হয়েছে এ কথাটা কবুল করব। দিনটির কথা মনে থাকলে একদিন আগেই এ লেখাটা লিখতাম এবং গতকালই (১৭ মে) তা কাগজে প্রকাশিত হতো। অবশ্য শেখ হাসিনা এখন ৰমতায়।

সুতরাং তাঁকে নিয়ে লেখার গুণীজনের অভাব নেই। আমি শুধু কবিগুরুর সার্ধশত জন্মবর্ষের জন্মমাসে তাঁর ভাষায় প্রধানমন্ত্রীকে নিবেদন করতে পারি_ 'দেবি, অনেক ভক্ত এসেছে তোমার চরণতলে অনেক অর্ঘ্য আনি আমি অভাগ্য এনেছি বহিয়া নয়নজলে ব্যর্থ সাধনখানি। ' এ নয়নজলের ব্যর্থ সাধনখানিও জননেত্রীকে উপহার দিতে পারতাম না, যদি ১৭ মে মঙ্গলবার ভোরে বন্ধুবর মোনায়েম সরকার টেলিফোনে আমাকে দিনটির কথা স্মরণ করিয়ে না দিতেন। আমি বিস্মিত হয়ে ভেবেছি, ত্রিশ বছর আগে এই ১৭ মে তারিখে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটিতে বর্ষণসিক্ত ঢাকা বিমানবন্দরে দশ লাখ মানুষের সমাবেশের কথাটি কি করে ভুলে গেছি? মোনায়েম সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুল করিনি। তাঁর অবস্থা এখন দেবী কর্তৃক পরিত্যক্ত পূজারির মতো।

পরিত্যক্ত হয়েও মন্দিরের আশপাশে ঘোরাঘুরি করা অব্যাহত রেখেছেন। সুতরাং দিনটির কথা তিনি ভোলেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক ভুলত্রম্নটির যতই সমালোচনা করি, এ কথা স্বীকার করি। তিনি যদি বাংলাদেশের মতো একটি ছোট ও গরিব দেশের রাজনৈতিক নেতা বা প্রধানমন্ত্রী না হয়ে একটি বড় বা মাঝারি ধরনের দেশেরও রাজনৈতিক নেতা বা প্রধানমন্ত্রী হতেন, তাহলে যে ঝড়ঝঞ্ঝা মোকাবেলা করে তিনি তিন দশক ধরে দেশের এবং দলেরও অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা হিসেবে টিকে আছেন, তাতে গোল্ডা মেয়ার ও ইন্দিরা গান্ধীর মতো বিশ্বখ্যাতি অর্জন করতেন। সম্ভবত সেই খ্যাতি তিনি শীঘ্রই অর্জন করবেন।

কারণ, অনেক বিশ্বখ্যাত রাজনৈতিক নেতাও তিন দশকের মতো দীর্ঘ সময় একটা দেশের জনপ্রিয় নেতা বা নেত্রীর আসনে থাকতে পারেননি। ব্রিটেনের লৌহমানবী মিসেস মার্গারেট থ্যাচারও পারেননি। আর শেখ হাসিনা তো দেশী-বিদেশী চক্রানত্ম, বারম্বার তাঁর প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র ইত্যাদি মোকাবেলা করে ত্রিশ বছর ধরে দেশের শীর্ষনেতার পদে অধিষ্ঠিত আছেন। হয়ত কোন বড় ভুল না করলে আরও দীর্ঘকাল থাকবেন। এজন্য বিশ্বের খ্যাতিমান শীর্ষনেতাদের নামের তালিকায় তাঁর নাম যুক্ত হওয়া উচিত এবং সম্ভবত তা হবে।

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার চাইতেও জ্ঞানগরিমায় বড় এবং 'আনত্মর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী' ও রাজনীতিক; রাজনৈতিক নেতা হওয়ার অভিলাষী, উচ্চাকাঙ্ৰী নোবেল লরিয়েট প্রমুখ আছেন। তাঁরা এখন যতই কীর্তিমান বলে বিবেচিত হোন, তাঁরা ইতিহাসে বেঁচে থাকবেন না। কিন্তু শেখ হাসিনা বেঁচে থাকবেন। তাঁর ভুলের কথা বলা হবে, কিন্তু সেই সঙ্গে তাঁর অতুলনীয় সাহস এবং সাফল্যগুলোর কথাও ইতিহাসে চিরকালের জন্য খোদিত থাকবে। রবীন্দ্রনাথের একটি চার লাইনের কবিতায় বলা হয়েছে : "কে লইবে মোর কার্য্য কহে সন্ধ্যা রবি শুনিয়া জগৎ রহে নিরম্নত্তর ছবি।

মাটির প্রদীপ ছিলো সে কহিল স্বামী আমার যেটুকু সাধ্য করিব তা আমি। " পঁচাত্তর সালের নির্মম ট্র্যাজেডির পর দানবকবলিত রক্তাক্ত বাংলাদেশের হতভাগ্য মানুষের পাশে দাঁড়ানোয়, তাদের আশা ও ভরসার বাণী শোনানোর মতো বহু বিজ্ঞ নেতা দেশে ছিলেন। তাঁরা তখন কেউ অঙ্ফোর্ডে পালিয়ে রয়েছেন, কেউ সামরিক শাসকদের কাছে আত্মসমর্থন ও আত্মবিক্রয় করেছেন। ঠিক এই সময় একজন গৃহবধূ যার রাজনীতিতে আসার সামান্যতম ইচ্ছাও ছিল না, তিনি নেতাহীন, নেতৃত্বহীন দেশে অসীম সাহসের সঙ্গে রাজনীতিতে নেমে এলেন এবং আজ অনেক অগি্নদহনের মধ্য দিয়ে অগি্নশুদ্ধ রাজনৈতিক নেত্রীর আসনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। তিনি রাজনীতিতে মাটির প্রদীপ হয়ে এসেছিলেন, কিন্তু আজ সূর্যের দায়িত্ব পালন করছেন।

আমার কথাগুলো অনেকের কাছে চাটুবাক্য মনে হতে পারে। কিন্তু এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির সবচাইতে বড় সত্য এবং বড় বাসত্মবতা। সঠিক সময়ে সঠিক এবং সাহসী সিদ্ধানত্ম নিয়ে, নিজের জীবনবাজি রেখে শেখ হাসিনা যদি আওয়ামী লীগের হাল না ধরতেন এবং গণতন্ত্র পুনরম্নদ্ধারের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে না আসতেন, তাহলে দেশের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দলটি অভ্যনত্মরীণ কোন্দলে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যেত এবং সামরিক শাসন দীর্ঘস্থায়ী হতো। এখন যেসব অঙ্ফোর্ড ও হার্ভার্ডফেরত নেতা গণতন্ত্রের বড় বড় চোখাবুলি আওড়াচ্ছেন, সুশীল সমাজ গঠন করে গণতন্ত্রের জন্য অশ্রম্ন বিসর্জন করছেন, জাতির চরম দুর্দিনে তাঁরা ছিলেন নিজেদের সুযোগসুবিধা ও প্রিভিলেজগুলো রৰায় ব্যসত্ম। এ সুশীল সমাজের কেউ কেউ তো নতুন তত্ত্ব প্রচার করছিলেন যে, 'সশস্ত্র বাহিনী হচ্ছে দেশের সিভিল সোসাইটির অংশ।

' এ সময় একজন সাধারণ গৃহবধূ তাঁর নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা না ভেবে রণৰেত্রে সেনাপতির পতাকা হাতে নেমে এসেছিলেন। জয়ে-পরাজয়ে সেই পতাকা তিনি নমিত হতে দেননি। এখানেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে হাসিনা-নেতৃত্বের অভূতপূর্ব সাফল্য এবং বিজয়। তাঁর রাজনীতিতে অনেক ভুলভ্রানত্মি আছে, অসাফল্য আছে। কিন্তু তা ইতিহাসে বেঁচে থাকার পৰে তাঁর সাফল্যগুলোকে এখনও মস্নান করেনি।

বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় নেতাদের নির্মম হত্যাকা-ের পর শুধু আওয়ামী লীগের একদল সমালোচক নন, অনেক সমর্থকও বলতে শুরম্ন করেছিলেন, ুঅধিসর খবধমঁব রং ধহ ঁহবষবপঃধনষব ঢ়ধৎঃু. ঞযবৎব রং হড় যড়ঢ়ব ঃযধঃ ঃযরং ঢ়ধৎঃু রিঃয রিহ ধহ বষবপঃরড়হ রহ হবধৎ ভঁঃঁৎব.চ্ (আওয়ামী লীগ আর নির্বাচনে জয়ী হওয়ার দল নয়, অদূরভবিষ্যতে এই দল নির্বাচনে জয়ী হবে তার কোন আশা নেই)। ড. কামাল হোসেন এবং তাঁর সহমতের স্বনামধন্য বুদ্ধিজীবীরা আওয়ামী লীগের সংস্পর্শে থেকে সরে দাঁড়ালে মনে হয়েছিল আওয়ামী লীগ দল হিসেবেও শেষ হয়ে গেল। কিন্তু বাসত্মবে দেখা গেল, আওয়ামী লীগ শেষ হয়নি। বরং দলত্যাগী নেতারাই একে একে শেষ হয়ে গেছেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার একক নেতৃত্বেই বলতে গেলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়ী হয় এবং ৰমতায় বসে।

২০০৮ সালে দলত্যাগী প্রবীণ নেতা একশ্রেণীর তথাকথিত নিরপেৰ মিডিয়া ও একটি প্রভাবশালী সুশীল সমাজের বিরোধিতা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিশাল ঐতিহাসিক নির্বাচনে বিজয় লাভ করে। প্রমাণিত হয় দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ক্রমাগত জয়-পরাজয়েও হাসিনা নেতৃত্বের জনপ্রিয়তা বেড়েছে, কমেনি। বিশ্বের অনেক সফল ও সেরা রাজনীতিকদের জীবনেও এত দীর্ঘ সাফল্যের প্রমাণ পাওয়া যায় না। শেখ হাসিনা তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে যে 'পতন অভু্যদয় বন্ধুর পন্থা' অতিক্রম করেছেন তার তুলনা বিরল। তাঁর বিরম্নদ্ধে দলের ভেতরে ষড়যন্ত্র হয়েছে; বাইরের শত্রম্নরা জোট বেঁধে শত্রম্নতা করেছে।

সিভিল এ্যান্ড মিলিটারি বু্যরোক্র্যাসি এবং উগ্র মৌলবাদী জোট বেঁধে তাঁর নেতৃত্ব খতম করার চেষ্টা করেছে। তাঁর জীবনের ওপর হামলা হয়েছে বার বার। তাতে আনত্মর্জাতিক চক্রানত্মও যুক্ত। ওয়ান ইলেভেনেরও লৰ্য ছিল মাইনাস টু থিওরির নামে হাসিনা নেতৃত্ব খতম করা। আধাসামরিক শাসনের বন্দুকের ছায়ায় আওয়ামী লীগকে খতম করে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করা হয়েছে নোবেল শানত্মি পুরস্কারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসাধনে ব্যবহার দ্বারা।

তারপরও যে হাসিনা-নেতৃত্ব ও তাঁর রাজনীতিকে খতম করা যায়নি, তা বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে একটি অতুলনীয় ঘটনা হিসাবে যুক্ত হওয়ার মতো। আধুনিক বিশ্বেও বহু রাষ্ট্রনায়ক ও রাজনৈতিক নেতা তাঁদের রাজনৈতিক প্রতিপৰ বা রাজনৈতিক শত্রম্নকে রাষ্ট্রীয় ৰমতার সাহায্যে অথবা গোপন হত্যাকা- দ্বারা নিশ্চিহ্ন করেছেন। শেখ হাসিনাকেও তাঁর প্রতিপৰ এভাবে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে। এখন তো এটাও ওপেন সিক্রেট যে, শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলা দ্বারা হত্যা করার ব্যর্থ প্রচেষ্টার পেছনে তারেক রহমানসহ বিএনপির অনেক জাঁদরেল নেতায় সংস্রব ছিল। শেখ হাসিনা এভাবে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপৰকে উচ্ছেদ করেননি।

গণতান্ত্রিক পন্থাতেই সাহস, নীতিনিষ্ঠা ও বুদ্ধির খেলায় তাদের রাজনীতি খতম করে দিয়েছেন। পা-িত্যের বিদেশী ডিগ্রী ও বিদেশী মদদ দ্বারাও এই প্রতিপৰ রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারেনি। শেখ হাসিনার এককালের রাজনৈতিক অভিভাবক ড. কামাল হোসেনই তাঁর সবচাইতে বড় রাজনৈতিক প্রতিপৰ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি নিজস্ব রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন এবং আওয়ামী লীগের বিরম্নদ্ধে গোপন ও প্রকাশ্য নানা বিরোধীদলীয় তৎপরতায় হাত মেলাতে দ্বিধা করেননি। বলা হয়, তিনি ওয়ান ইলেভেনেরও উদ্যোক্তাদের একজন।

কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এ আনত্মর্জাতিক খ্যাতি ও মদদ লাভের অধিকারী ড. কামাল হোসেন একজন গৃহবধূর কাছে হেরে গেছেন এবং তিনি এখন হারাধনের বনবাসী একটি মাত্র পুত্র। নোবেল জয়ী ড. ইউনূস তো রাজনীতিতে নামতে চেয়েছিলেন বাঘের মূর্তি ধারণ করে। গলায় নোবেল পুরস্কার, ঝোলায় পশ্চিমী সমর্থন, দুই পাশে নন্দীভৃঙ্গির মতো দুই তথাকথিত নিরপেৰ পত্রিকায় দুই বকেয়া বাম সম্পাদক। মনে হয়েছিল এবার আওয়ামী দুর্গ আর টিকে থাকবে না। দু'দিন পর দেখা গেল মহাবীর ড. ইউনূস রণে ভঙ্গ দিয়েছেন।

তিনি আর রাজনীতি করবেন না বলে তওবা করছেন। আওয়ামী লীগ থেকে হাসিনা-নেতৃত্ব অপসারণ করার লৰ্যে চার প্রবীণ নেতাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ওয়ান ইলেভেনের সামরিক গোয়েন্দা চক্র একটি সংস্কারপন্থী গ্রম্নপ গঠন করেছিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী রাজনীতিতেই তারা একেবারে কোণঠাসা এবং শেখ হাসিনা তাদের ছাড়াই একটি বিশাল মন্ত্রিসভা গঠন করে সরকার পরিচালনা করছেন। এছাড়াও সঙ্কট ও সমস্যার অনেক বিন্ধ পর্বত হাসিনাকে একে একে অতিক্রম করে সাফল্যের কাঞ্চনজঙ্গায় আরোহণ করতে হয়েছে। লেখাটি বড় হয়ে যাবে বিধায় এ সম্পর্কে আর উদাহরণ টানছি না।

২০০৮ সালে দ্বিতীয় দফায় ৰমতায় আসার পরও শেখ হাসিনার সাফল্য অতুলনীয়। অনেক অসম্ভব কাজ তিনি যে সম্ভব করতে পারবেন, তা তাঁর অতি বড় সমর্থকরাও ভাবতে পারেননি। তিনি তা সম্ভব করেছেন। কে ভেবেছিল, বিএনপি-জামায়াতের এত বিরোধিতা ও বাধাদান সত্ত্বেও দীর্ঘ তেত্রিশ বছর পর বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের পালের গোদাদের তিনি বিচার ও শাসত্মি প্রদান করতে পারবেন? কে ভেবেছিল, যে খালেদা জিয়া নিরীহ বিধবা সেজে সেনানিবাসে অবৈধ ঘাঁটি গেড়ে বসে একটার পর একটা চক্রানত্মের ছুরি শানাচ্ছিলেন, তাঁকে সেনানিবাস ছেড়ে যেতে বাধ্য করা যাবে? ড. কামাল হোসেন ও ড. ইউনূসের মতো বিদেশী মদদপুষ্ট বলে প্রচারিত দুই জাঁদরেল ব্যক্তিকে রাজনীতিতে একেবারে নিষ্ক্রিয় ও গুরম্নত্বহীন করে ফেলা যাবে? এমনকি মার্কিন হুমকিধমকি সত্ত্বেও ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কর্মকর্তা পদ থেকে ইসত্মফা দিতে বাধ্য করা যাবে? এসব কে ভেবেছিল? এসব অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন শেখ হাসিনা, এটা বিশ্বের যে কোন বড় নেতাই নিজের সবচাইতে বড় সাফল্য বলে মনে করবেন। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের নেতৃস্থানীয় একটা বড় অংশকে এতকাল পর তিনি গ্রেফতার করার সাহস দেখাবেন তাই-বা কে ভেবেছিল? এসব কাজই তিনি মাত্র আড়াই বছরে ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে সমাধা করেছেন।

আমার ধারণা, তিনি তাঁর বর্তমান প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদকালেই বিদু্যত, পানি ও গ্যাস সঙ্কটেরও অনেকটা সমাধান করে ফেলতে পারবেন। শহরের মধ্যবিত্ত নাগরিকদের মনে বর্তমান সরকার সম্পর্কে নানা অসনত্মোষ জমা হলেও বিশাল পলস্নী এলাকায় আওয়ামী লীগের সাফল্য সাধারণ মানুষ লৰ্য করতে শুরম্ন করেছে। গ্রামীণ মানুষের ক্রয়ৰমতা বহুগুণ বেড়ে গেছে। গ্রামে একজন দিনমজুরের দৈনিক মজুরি পাঁচ শ' টাকায় উন্নীত হয়েছে। এগুলো আমার কথা নয়।

আওয়ামী লীগের সমালোচকদেরও ভাষ্য। কিন্তু চাঁদের যেমন কলঙ্ক আছে, তেমনি হাসিনা-রাজনীতিতেও কালি দাগ লাগিয়েছে, তাঁর অতীতের ফতোয়া চুক্তি, ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের প্রতি এপীজমেন্ট নীতি, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের অনেককে গ্রেফতার করার পরও তাদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রম্নততর না করা এবং সর্বোপরি '৭২-এর সংবিধানে বিসমিলস্নাহ ও রাষ্ট্রধর্মের বিধান বলবত রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী হাসিনার দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ। তিনি সুযোগ পেয়েও সম্ভবত নিজের অতিরিক্ত ধর্মপ্রীতির জন্য বাহাত্তরের সংবিধানের ধর্মনিরপেৰ চরিত্রে ফিরে যেতে চাচ্ছেন না। তা যদি হয় তাহলে মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক আদর্শেরই তিনি বিরোধিতা করবেন এবং তাঁর সরকারের প্রশাসনিক সাফল্যগুলোর সুফল তিনি ধরে রাখতে পারবেন না। মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে তোয়াজ করা দ্বারা তিনি আগামী নির্বাচনে জয়ী হবেন সেই আশাও পূর্ণ হবে না।

আমি জানি না, শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ৰিত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন বাসত্মবায়িত করে ইতিহাসে তাঁর আসন স্থায়ী করে যেতে চান, না আরও কিছুকাল ৰমতায় থাকার ইচ্ছা পূর্ণ করার জন্য ইতিহাস এবং জনগণ দুইয়েরই আশাভঙ্গের কারণ সৃষ্টি করে ৰমতা থেকে বিদায় নিতে চান? আমার প্রত্যাশা, তিনি ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর মতো বেঁচে থাকার পথই বাছাই করবেন; ৰমতার রাজনীতির পিচ্ছিল পথে হাঁটতে গিয়ে পদস্খলন ঘটাবেন না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।