পাওয়ার অব পিপল স্ট্রংগার দেন দি পিপল ইন পাওয়ার। http://mhcairo.blogspot.com/
আরব বিশ্বের কলঙ্ক মুছে ফেলার সন্ধিক্ষন। মিসরের আট কোটি মানুষের মুক্ত হয়ে আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়ানোর অপেক্ষার মুহূর্ত। নতুন করে আরবের ইতিহাস লেখার সরন্জাম অপেক্ষমান।
রক্ত দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ চলছিল নীলনদের পাড় তাহরীর স্কোয়ারে।
এক কথায় বলতে গেলে আধুনিক ইতিহাসের পট পরিবর্তন হবার মুহুর্ত। কাজেই দিনটি একেবারে সাধারণ দিন ছিল না। এমন একটি দিন যে আমার জীবনেও স্মরনীয় হয়ে থাকবে সেটা তার পূর্ব পর্যন্ত আমারও জানা ছিল না।
“বাকহীন আরব” নামের কলঙ্ক থেকে মুক্ত হতে টগবগে আরব তরুনদের সাহসের সামনে স্বৈরশ্বাসকদের পরাজয় দেখতে আমিও সেদিন উপস্থিত হয়েছিলাম নীলনদের তীরে তাহরীর স্কয়ারের অদূরে মিসরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনের সামনে।
দিনটি ছিল ২৯ ই জানুয়ারী ২০১১।
দীর্ঘ ৩০ বছরের সালতানাতে কাপন শুরূ হয়েছিল ২৫শে জানুয়ারি রোজ সোমবার ২০১১। অল্পসঙ্খক আধুনিক যুবক ফেসবুক ও টুইটারকে মাধ্যম করে, সাহস ও দেশপ্রেমকে অস্ত্র বানিয়ে, নেমে পড়েছিল পাহাড় ধাক্কিয়ে সরিয়ে নেয়ার কাজে। এটা যে ভূমধ্য সাগরের পানি সেঁচের চেয়ে সহজ নয় সেটা প্রমান হয়েছিল প্রথম দিনেই। স্বৈরশাসক বলেন আর আরব্য নেতা বলেন তিনি যে শক্তিতে কারো চেয়ে কম নয় তা ছিল সবারই জানা।
ধিরে ধিরে পিরামিডের চেয়েও শক্তিশালী হতে থাকা সালতানাতের মুকূটযে কোন বোকাই এত সহজে ছাড়তে চাইবে না, সেটা চায়নি হুসনি মোবারকও।
তিনি তাই প্রথমেই বিক্ষোভকে ছত্রভঙ্গ করতে তার পুলিশ বাহিনী দিয়ে বেধম মার শুরু করলেন। বন্দি করলেন অসংখ্য তরুনদের। নিখোঁজ হয়ে গেলো আন্দোলনের অন্যতম নেতা 'অয়েল গুনাঈম'ও। এ খবর মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ল পুরো মিশরে। এবার পরিবর্তনের দাবি আরো জোড়ালো হলো।
তাদের প্রতি মায়া বেড়ে গেলো মিশরের সাধারন জনগনের। তাই বিশাল আন্দোলনের ডাক দেয়া হলো ২৬ তারিখ। এবার পরিবর্তনের পাশাপাশি বন্দি করা তরুনদের মুক্তির দাবিও উঠে এলো।
কিন্তু এত সহজেই কি রাজা বাদশাহরা হার মানে? না! মানে না। মানতে পারে না।
তাই এবার পুলিশের সাথে রাস্তায় নেমে এলো হালকা সাঁজোয়া যান। মিছিল ঠেকাতে তাহরীর চত্তর সহ সারা মিশরে নামানো হলো অতিরিক্ত পুলিশ। যাদেরকে অনেকে মোবারকের লাঠিয়াল বাহিনী ও বলে থাকে। এদিন সন্ধ্যায় তুমুল গন্ডগোল বেধে গেল তরুনদের সাথে পুলিশ বাহিনীর। নিহত হলো দু'জন যুবক।
আহত হলো শতাধিক।
বিক্ষোভ গড়ালো তৃতীয় দিনে। ২৭ তারিখ সকাল থেকেই কায়রোর বিভিন্ন সড়কে মিছিল বের হতে থাকে। পুলিশ এদের থামাতে লাঠি চার্জ করতে মোটেই কুন্ঠা বোধ করেনি। এদিন মিশরের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেকজান্দ্রিয়ায়ও মোবারকের বিরূদ্ধে প্রচন্ড বিক্ষোভ শুরু হয়।
কিন্তু এখানেও পুলিশের ভূমিকা একই রকম দেখা যায়। পেটানো হয় অসংখ্য সাধারন মানুষদের। মুহূর্তের মধ্যে এই খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু মিসরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন রূপ নেয় যুবকদের নতুন শত্রুতে। কারন তারা এই বিক্ষোভকে বিদেশীদের উস্কানি হিসেবে আক্ষা দিতে থাকে।
ফলশ্রুতিতে ২৮ তারিখ রোজ শুক্রবার ডাক দেয়া হয় “জুমাতুল গদব” (The Day of Angry)এর। তাহরীর চত্তরে জুমার নামাজ আদায়ের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবন ঘেরাও কর্মসূচি নেয়া হয়। এবং তাহরীর চত্তরেই আয়োজন করা হয় দুই মিলিয়ন মুসল্লির জুমার নামাজের। ভূমধ্য সাগরের তীরবর্তী শহর আলেকজান্দ্রিয়ায়ও জুমার নামাজে শরীক হয় দুই লক্ষাধিক মুসল্লী। সেখানেও শহড়ের রাষ্ট্রীয় অফিস ঘেরাও কর্মসুচি নেয়া হয়।
আলজাজিরা, বিবিসি সহ অসঙ্খ বিদেশী টিভি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করতে থাকে জুমার নামাজ।
জুমার আযান হওয়ার সাথে সাথে মিশরের আকাশ বাতাস ভারী হতে থাকে। এক অজানা ভয় দানা বাঁধতে থাকে সবার মনে। সরকারও সব ধরনের আক্রমন মোকাবেলা করার আক্রমনাত্ত্বক সিদ্ধান্ত নিতে থাকে। তরুনদের ডাকে তাহরীর চত্ত্বরে ঠিকই ছুটে আসে দুই মিলিয়ন মুসল্লী।
যাদের অধিকাংশই বয়সে তরুন। তরুনীদের সংখ্যাও ছিল উল্লেখযোগ্য।
টিভি পর্দায় তাহরীরের বিশাল জামায়াত দেখে এর আশে পাশের তরুনদের মনেও সাহসের সঞ্চার হতে থাকে। তারাও নামাজ শেষে মিছিল নিয়ে এগুতে থাকে তাহরীরের দিকে।
জুমার নামাজ শেষে মিশরের মানুষ দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।
এক ভাগ চলে যায় তাহরীর চত্তরে ও তার আশে পাশের রাস্তায়। বাকিরা সব বসে থাকে টেলিভিশনের সামনে। রাস্তা ঘাট সব ফাঁকা। সকাল থেকেই কায়রোর সাথে অন্যান্য জেলার ট্রেন ও দূরপাল্লার বাস যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। বিচ্ছিন্ন করা হয় ইন্টারনেট সংযোগ।
বেলা ১১টা থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় সমস্ত মোবাইল নেটওয়ার্ক। আজ যে ঝড় সুনামির আকার ধারণ করবে সেটা সবাই আঁচ করতে পেরেছিল।
কিন্তু তাহরীর চত্তরে হাজির হওয়া তরুনদের ছিল সুনামির মোকাবেলা করার সাহস। তারা দমেনি। ভয় পায় নি।
জীবনের মায়াও করে নি। তারা পরিকল্পনা মত এগুতে থাকে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের দিকে।
কিন্তু এটাতো আর হতে দেয়া যায় না। তাই এই বিশাল সমাবেশকে ছত্রভঙ্গ করতে বল প্রয়োগ শুরু করে মোবারকের লাঠিয়াল বাহিনী। প্রথমে টিয়ার গ্যাস,পরে ফুটন্ত পানি, তাতেও কাজ না হলে সরাসরি গুলি চালাতে শুরু করে নিষ্ঠুর এই ক্ষমতাসীন দল।
আপন ভাইয়ের রক্তের চেয়েও দামী মনে করল ক্ষমতার চেয়ারকে। গুলির শব্দে প্রকম্পিত হতে থাকে সারা মিসর।
তাহরীর স্কোয়ার, সিক্স অক্টোবর ব্রিজ, গালা রোড, আব্দুল মো্নঈম রিয়াদ, গিজা, মোহান্দিসীন ও মা’আদিতে চলে চরম সংঘর্ষ। জমাট বেধে থাকা মানুষের উপর দিয়ে পুলিশের গাড়ি উঠিয়ে দেয়ার দৃশ্য টিভিতে দেখেও তা সহ্য করা ছিল কঠিন।
“মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী” প্রতিজ্ঞা বদ্ধ তরূনরাও মোটেও পিছপা হয়নি।
নিরস্ত্র এই তরুনরা পুলিশের গুলি উপেক্ষা করে পুড়িয়ে দেয় মোবারকের দলের (হিযবুল ওয়াতানী আল দিমোক্রাতি National democratic party )হেড কোয়াটার সহ তাদের সমস্ত অফিস। টেলিভিশন ভবন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ঘেরাও করতে গিয়ে শহীদ হয় প্রায় ৩০০ জন তরুন তরুনী।
আছরের সময় থেকে শুরু করে এ যুদ্ধ চলতে থাকে রাত ১০টা পর্যন্ত।
এতদিন যারা মোবারকের পক্ষে কথা বলত তাদের অনেকেও এখন ছি! ছি! করতে থাকে। ওবামা সরকার দফায় দফায় বৈঠক করে সরাসরি মোবারককে সরে দাড়ানোর আহ্বান করে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন সরাসরি মোবারককে সরে দাড়িয়ে দেশের অবস্থা স্বাভাবিক করতে অনুরোধ করে। দেশটির চলচ্চিত্র ও ক্রীড়াংগনের অনেক জনপ্রিয় ব্যক্তিরাও মিসরের সাধারণ মানুষের পক্ষে অবস্থান নিতে থাকে।
ফলে পরিস্থিতি বলে যে এবার মোবারকের চলে যাওয়াই উত্তম। রাত ১১টার দিকে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ঘোষনা দেয় যে, আগামীকাল ২৯শে জানুয়ারী রোজ শনিবার সন্ধায় প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক জাতির উদ্দেশ্যে গুরূত্বপূর্ন ভাষন দিবেন। মিসরীয়দের মনে আনন্দ বইতে থাকে।
স্বস্থি নেমে আসে পুরো মুসলিম বিশ্বে। নতুন দিনের অপেক্ষায় রাত্রিযাপন করে সবাই।
চলবে।
কিংবা http://sonarbangladesh.com/blog/bdcairo/40871
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।