আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গরিব আমেরিকানের বন্ধু শ্যাভেজ

আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে...! দূরের বাতিঘর বেঁচে থাকা অবস্থায় আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী ভূমিকার একজন কট্টর সমালোচক ছিলেন হুগো শ্যাভেজ। রাখঢাক না রেখেই প্রকাশ্যে সাম্রাজ্যবাদের সমালোচনা করতে পারার সাহসিকতা বিশ্ববাসীর কাছে তাকে একটি প্রিয়মুখ করে তুলেছিল। কিন্তু শ্যাভেজ এই সত্যিটা জানতেন যে, গরিবের কোনো দেশ নেই, সেই গরিব সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকারই হোক কিংবা ল্যাটিন আমেরিকার কোনো দেশেরই হোক। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে আমেরিকা প্রতিপক্ষ হলেও সেই আমেরিকার দরিদ্রদের জন্য সাহায্য পাঠাতে চেয়েছিলেন শ্যাভেজ। মঙ্গলবার শ্যাভেজের মৃত্যুর সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর আমেরিকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি তার এই সহানুভূতির কথা প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যমগুলো।

সময়টা ২০০৫ সাল। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে তখন অধিষ্ঠিত জর্জ ডাব্লিউ বুশ জুনিয়র। আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখা যে কোনো ব্যক্তিমাত্রই জানেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের সঙ্গে কতটা বৈরি সম্পর্ক ছিল ভেনেজুয়েলার এই বিপ্লবী নেতার। এমনকি যুদ্ধপ্রিয়তা এবং মিথ্যাচারের জন্য জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তাকে ‘শয়তান’ বলতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি শ্যাভেজ। সেই বুশের সময় আমেরিকায় আঘাত হানে ইতিহাসের ভয়াবহতম ঝড়গুলোর একটি; হারিকেন ‘ক্যাটরিনা’।

আমেরিকার ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম পাঁচটি ঝড়ের একটি ছিল ক্যাটরিনা। সেই ঝড়ে ১ হাজার ৮৩৮ ব্যক্তি নিহত হয়। জর্জ বুশ তখন টেক্সাসে তার খামারবাড়িতে ছুটি কাটাচ্ছিলেন। হারিকেন ক্যাটরিনার আঘাতে লুইসিয়ানা, নিউ অরলিয়েন্সের শহররক্ষাকারী বাঁধগুলো ভেঙে যায়। খুব দ্রুত পানিতে তলিয়ে যায় প্রায় ১০ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি।

অথচ আমেরিকান সরকারের পক্ষ থেকে তখন পর্যন্ত ত্রাণ সহায়তার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছিল না। জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়ে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করতে বেশ দেরি করে আমেরিকান প্রশাসন। এমন অবস্থায় আমেরিকার জনগণের সাহায্যে অত্যন্ত দ্রুত পদক্ষেপ নেন শ্যাভেজ। জর্জ বুশকে ‘কিং অব ভ্যাকেশন’ বা ‘ছুটি কাটানোর রাজা’ আখ্যা দিয়ে আমেরিকার প্রশাসনের নিশ্চলতারও সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, ‘ক্যাটরিনার গতিপথে হাজারো মানুষকে অসহায় রেখে আসা হয়েছে।

তাদের একবার বলাও হয়নি এমন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। ’ তাই উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য খুব দ্রুত সেনাবাহিনী, স্বেচ্ছাসেবক, অগ্নিনির্বাপক এবং চিকিৎসকের ১ হাজার জনের একটি দল, ত্রাণ এবং এক মিলিয়ন আমেরিকান ডলার পাঠানোর প্রস্তাব করেন তিনি। দুর্ভাগ্যের বিষয়- আমেরিকার সরকার তার সেই সাহায্য আমেরিকার মাটিতে নামানোর অনুমতি দেয়নি। সম্ভবত জনগণের মধ্যে শ্যাভেজ জনপ্রিয় হয়ে যেতে পারেন, এমন একটি ভয় আমেরিকান সরকারের ছিল। এছাড়া প্রশ্ন উঠেছিল- কেবল দরিদ্রদের সাহায্য, নাকি আমেরিকার কাছে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার চেষ্টা শ্যাভেজের।

যদিও পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে, ৫৮ বছরের জীবনে শ্যাভেজ কখনোই আমেরিকার মন রেখে চলার নীতি গ্রহণ করেননি। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে শ্যাভেজের নিজ দেশ ভেনেজুয়েলা ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হলে দুর্গতদের জন্য নিজ বাসস্থান মিরাফ্লোরেস প্যালেসও ছেড়ে দিয়েছিলেন। একমাত্র ২০০৫ সালে পাঠানো এই ত্রাণই নয়, আমেরিকার দরিদ্রদের জন্য বারবারই সাহায্য পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন শ্যাভেজ। বলা বাহুল্য, আমেরিকার সরকারের অপছন্দের কারণে তার বেশিরভাগই বাস্তবতার মুখ দেখেনি। যদিও আমেরিকার অনেক উদারপন্থীদের নীতিগত ভাবনার সঙ্গে শ্যাভেজের নীতিগত অবস্থান মিলে যায়।

তেল শোধন কোম্পানি সিটগো করপোরেশনের মাধ্যমে ‘ওয়েল-হিট প্রোগ্রাম’র অধীনে প্রায় ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন দরিদ্র ও শীতার্ত আমেরিকানের কাছে শীতে নিজেদের গরম রাখার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য এদের অনেকেই শীতে ঘর গরম রাখার অতিরিক্ত জ্বালানি কিনতে অসমর্থ ছিল। আমেরিকার হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের সাবেক সদস্য জোসেফ কেনেডি (দ্বিতীয়) বলেন, ‘শ্যাভেজ দরিদ্রদের অবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন হতেন, তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসতেন। অথচ আমাদের দেশের ধনীরা; যাদের অর্থ সারাজীবনেও ব্যয় করে শেষ করতে পারবে না, তারা দরিদ্রদের জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ নেন না। ’ জোসেফ কেনেডি (দ্বিতীয়) আমরিকার দরিদ্র জনগণের কাছে বিনামূল্যে ঘর গরম রাখার তেল পৌঁছে দেয়ার জন্যে সিটিজেন এনার্জি নামে একটি অলাভজনক সংগঠন পরিচালনা করছেন।

কেনেডির দেয়া হিসাবমতে, শ্যাভেজ এখন পর্যন্ত তার সংগঠনে আমেরিকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ২০০ মিলিয়ন গ্যালন তেল দিয়েছেন। তথ্যসূত্র : হাফিংটন পোস্ট, ওয়াশিংটন পোস্ট  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।