সম্প্রতি তথ্য প্রযুক্তির তিনটি অ্যাসোসিয়েশন বিসিএস, বেসিস ও আইএসপিএবির যৌথ উদ্যোগে জাতীয় আইসিটি নীতিমালা ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন : প্রেক্ষিত জাতীয় বাজেট শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। প্যান-প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. নাসিরুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আফতাব-উল-ইসলাম।
সেমিনারে সফ্টওয়্যার ও আইটিইএসএর উপর থেকে জাতীয় আইসিটি নীতিমালা অনুসারে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আয়কর মওকুফ করার এবং সফ্টওয়্যার ও আইটিইএসএর জন্য একটি নতুন সার্ভিস কোড ঘোষণা করার প্রস্তাব করা হয়।
সেমিনারে সব ধরনের কম্পিউটার, এক্সেসরিজ ও নেটওয়ার্কিং দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে একই ধরনের অ্যাডভান্সড ইনকাম ট্যাক্স (এআইটি) ধার্য করার প্রস্তাব করা হয়।
কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রীর খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য বাৎসরিক নির্দিষ্ট পরিমাণ ভ্যাট ধার্য করা প্রয়োজন বলেও সেমিনারে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি কম্পিউটার ও নেটওয়ার্ক সামগ্রী আমদানিকারকদের ক্ষেত্রে ৩ ভাগ এ টি ভি ধার্য আছে। এই ৩ ভাগ চূড়ান্ত ভ্যাট হিসেবে গণ্য করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সব ধরনের কম্পিউটার, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ও নেটওয়ার্ক পণ্যের ওপর বর্তমানে যে ৩ ভাগ বা ততোধিক হারে শুল্ক বিদ্যমান তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয়। বর্তমানে বেশকিছু সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটার ও নেটওয়ার্ক সামগ্রীর পর যেমন ইউটিপি ক্যাবল, ডিএসএল রাউটার ইত্যাদির ওপর অত্যধিকহারে (২৫ ভাগ পর্যন্ত) শুল্ক ধার্য করা আছে এবং একই ধরনের অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে অনেক কম হারে শুল্ক ধার্য আছে বলে উল্লেখ করে এ ক্ষেত্রে সব ধরনের পণ্যের সম্পূর্ণ শুল্ক মওকুফের প্রস্তাব করা হয়।
সেমিনারে জাতীয় আইসিটি নীতিমালায় উলি্লখিত ৭০০ কোটি টাকার আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ফান্ড অবিলম্বে গঠনের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়াও ইইএফএর সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, সব ধরনের তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক কার্যক্রম বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়ন করা, জাতীয় আইসিটি নীতিমালা সমন্বয়ের জন্য একটি সেল গঠন করা ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. নাসিরুদ্দিন আহমেদ তার বক্তৃতায় বলেন_ রাজস্ব প্রতিবছরই বাড়াতে হয়। অনলাইনে আয়কর প্রদান ও ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন করার বিষয়ে আইটি অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে সঙ্গে নেয়া। পর্যায়ক্রমে অটোমেশন করা হবে।
২০১৩ সালের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ডিজিটাইজেশন করার জন্য মডার্ন অ্যাকশন প্ল্যান করা হয়েছে। নতুন ভ্যাট আইন করা হচ্ছে। গত দুই বাজেটেই এ সেক্টরের গুরুত্ব ছিল এবং এ সেক্টরের আরো গুরুত্ব পাওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। সফটওয়্যার ও আইটিইএস যাতে একটা নতুন সার্ভিস কোডের আওতায় আনা যায় এবং আইটিইএসএর পরিধি বাড়ানোর জন্য তিনি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিজ্ঞান, তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, এখানে না এলে অনেক বিষয়ই আমি জানতে পারতাম না।
অনেক পরিশ্রম করে জাতীয় আইসিটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব শুধু মন্ত্রণালয়ের একার নয়, আমাদের সবার। তিনি আরো উল্লেখ করেন মোবাইল ফোন তথ্য প্রযুক্তি প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। গত ২ বছরে ২ কোটি গ্রাহক বেড়েছে। এটা এখন শুধু ভয়েস মেইলের যন্ত্র শুধু নয়, এটা এখন তথ্য প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। ২০০৭-২০০৮ সালে আমরা নেপালের পেছনে ছিলাম।
এখন আমরা অনেকখানি এগিয়েছি। তিনি সবাইকে একসঙ্গে তথ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে কাজ করার আহ্বান জানান। টেকনোলজি ব্যবহারের ফলে কী কী সুবিধা হচ্ছে তা যদি স্পষ্ট করে বলা যেত তাহলে তহবিল বা বরাদ্দ সংগ্রহে আরো সুবিধা হতো। হাইটেক পার্ক ব্যবহারের উপযোগী করার জন্য অবিলম্বে উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দেন। বাজেট বরাদ্দের ব্যাপারেও তিনি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন বলে জানান।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসিসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট একেএম ফাহিম মাশরুর, আইএসপিএবির সহ-সভাপতি সুমন আহমেদ সাবির। এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে বেসিসের সভাপতি মাহবুব জামান এবং আইএসপিএবির সভাপতি আখতারুজ্জামান মঞ্জু বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন বিসিএসএর সভাপতি মোস্তাফা জব্বার।
সেমিনারে আলোচক হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন আমিনুর রহমান, সদস্য, আয়কর পলিসি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, ব্র্যাক ব্যাংকের সিটিও নাভিদ ইকবাল, বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ কাওছার উদ্দিন, বিসিএস ও আইএসপিএবির সাবেক সভাপতি এস এম ইকবাল, বেসিসের সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম, মহাসচিব আতিক-এ-রব্বানী প্রমুখ।
সেমিনারে ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধি, বেসিস, বিসিএস ও আইএসপিএবির সদস্যরা এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তথ্য প্রযুক্তি খাতের বাজেট প্রস্তাব ২০১১-১২
বিসিএস বেসিস ও আইএসপিএবির যৌথ প্রস্তাবনা
আয়কর প্রস্তাবনা
১. দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সফটয়্যার ও আইটিইএস (ওঞ ঊহধনষবফ ঝবৎারপবং) এর উপর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আয়কর মওকুফ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। এখানে উল্লেখ যে, জাতীয় আইটি নীতিমালা ২০০৯-এ ২০১৮ সাল পর্যন্ত আয়কর মওকুফের প্রস্তাব আছে। এছাড়া আইটি এনাবেন্ড সার্ভিসের সংজ্ঞার পরিমার্জন করা প্রয়োজন। যা সংযুক্ত হিসেবে দেয়া হলো। (সংযুক্তি-১)।
২. বর্তমানে কিছু সুনির্দিষ্ট কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক পণ্য ও যন্ত্রাংশের উপর আমদানি পর্যায়ে ৩ ভাগ এআইটি (অফাধহপবফ ওহপড়সব ঃবী) প্রযোজ্য আছে। আমরা প্রস্তাব করছি সকল ধরনের কম্পিউটার, এক্সসরিজ ও নেটওয়াকিং দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে একই ধরনের এআইটি ধার্য করা হোক।
৩. বর্তমানে কম্পিউটার ব্যবসার আয় নিরূপনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোন হার ধার্য করা নেই। আমরা এই ক্ষেত্রে জিপি (এৎড়ংং চৎড়ভরঃ) সর্বোচ্চ ৫ ভাগ হারে ধায় করার প্রস্তাব করছি।
৪. দেশের কম্পিউটারের মূল্য কমানোর মাধ্যমে এর ব্যবহার বৃদ্ধিকে উৎসাহ প্রদানের জন্য কম্পিউটার (ঐধৎফধিৎব, ঘবরিবশপ) ব্যবসার উপর আয়করের হার সর্বোচ্চ ২০ ভাগ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি।
মূল্য সংযোজন কর প্রস্তাব
১. দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইন্টারনেট সার্ভিসের উপর থেকে বর্তমান ধার্য ১৫ ভাগ ভ্যাট সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করা হোক।
২. বর্তমানে বেশ কিছু কম্পিউটার ও এর আনুষঙ্গিক পণ্যে আমদানী পর্যায়ে শূন্য হারে ভ্যাট ধার্য আছে। তবে বেশ কিছু সংখ্যক অতি প্রয়োজনীয় কম্পিউটার এবঙ নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে ১৫ ভাগ হারে ভ্যাট আছে (যেমন ইউটিপি ক্যাবল, ওয়েব ক্যাম, ডিএসএল রাউটার, ফাইবার অপটিক টুলস, ফায়ারওয়াল, আইপি ফোন, ভিডিও আইপি ফোন, কুলিং ফ্যান, সিপিইউ কেসিং ইত্যাদি)। এ সকল পণ্যের ক্ষেত্রেও আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট মওকুফ করা হোক। (সংযুক্ত-২ এ বিশদ বিবরণ দেয়া আছে।
।
৩. কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সামগ্রী আমদানিকারকদের ক্ষেত্রে ৩ ভাগ এটিভি (অফাধহপবফ ঞৎধফব ঠঅঞ) ধার্য আছে। আমরা প্রস্তাব করছি এই ৩ ভাগ চূড়ান্ত ভ্যাট হিসেবে গণ্য করা হোক।
৪. কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রীর খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য এই ক্ষেত্রে বাৎসরিক নির্দিষ্ট পরিমাণ ভ্যাট ধার্য করা হোক (৪৫০০ টাকা - ৬০০০ টাকা)।
৫. ঝড়ভঃধিৎব ধহফ ওঞঊঝ এর জন্য একটি নতুন সার্ভিস কোড ঘোষণা করা হোক যা ঝড়ভঃধিৎব ধহফ ওঞঊঝ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তাদের মূসক তালিকাভুক্ত/নিবন্ধেনের সময় ব্যবহার করতে পারে।
(এখানে উল্লেখ, যথার্থ ঝবৎাপব ঈড়ফব প্রযোজ্য না থাকায় বর্তমানে কোম্পানিসমূহ ভ্যাট নিবন্ধন এবং এ সম্পর্কিত তাদের বাণিজ্যিক দলিলাদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারছে না। একই সঙ্গে বর্তমান প্রচলিত সফটওয়্যার এর জন্য মূসক মওকুফ এর বিষয়টি যা স্টোরেজ সফটওয়্যার পণ্যসমূহের জন্য উল্লেখিত তা প্রস্তাবিত নতুন সার্ভিস কোডের আওতায় সেবাসমূহের জন্য প্রযোজ্য করার প্রস্তাব করা হচ্ছে।
আমদানি শুল্ক প্রস্তাবনা
১. সকল প্রকার কম্পিউটার, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ও নেটওয়ার্ক পণ্যের উপর বর্তমানে যে ৩ ভাগ বা ততোধিক হারে শুল্ক বিদ্যমান তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হোক।
২. বর্তমানে বেশ কিছু সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটার ও নেটওয়ার্ক সামগ্রীর উপর (যেমন ইউটিপি ক্যাবল, ডিএসএল রাউটার ইত্যাদি, বিশদ বর্ণনা সংযুক্তি-২ এ দেয়া হলো) অত্যাধিকহারে ২৫ ভাগ পর্যন্ত শুল্ক ধার্য করা আছে, যদিও একই ধরনের অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে অনেক কম হারে শুল্ক ধার্য আছে। আমরা এক্ষেত্রে সকল ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ শুল্ক মওকুফের প্রস্তাব করছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।