বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
মা’আত : প্রাচীন মিশরের দেবী। মাত যেমন দেবী তেমনি একই সঙ্গে সত্যের কনসেপ্ট (ধারণা) ; আর এখানেই অন্য দেবদেবীর সঙ্গে মা’আত- এর পার্থক্য। মিশরীয় ভাষায় ‘মা’আত’ শব্দের অর্থ: সত্য।
মা’আত সত্য শৃঙ্খলা ভারসাম্য এবং ন্যায় বিচারের প্রতীক। সে জন্যই বলা হয়েছে: She was harmony, she was what was right, she was what things should be. It was thought that if Ma'at didn't exist, the universe would become chaos, once again! প্রাচীন মিশরীয় বিশ্বাস অনুযায়ী বিশ্ব জগৎ সৃষ্টি করেছেন দেবতা রা। এবং শুরু থেকেই দেবতা রা- এর সঙ্গে ছিলেন মা’আত । Ra created it (বিশ্ব জগৎ) on a foundation of Ma’at. আর এ জন্যেই মা’আত-এর স্থান মিশরীয় ধর্মসংস্কৃতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ন। প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করত: সূর্যদেব রা আকাশপথে প্রতিদিন নৌকা ভাসান এবং সেই যাত্রার দিক নির্দেশনা দান করতেন দেবী মা’ আত ।
পরবর্তীকালে অবশ্য মা’আত -এর গুণাবলী আত্বসাৎ করেন দেবী আইসিস ...
মা’আত। সত্য ন্যায়বিচার এবং বাস্তবতার (রিয়েলিটি) দেবী মা’আত দেবতা রা এর কন্যা এবং দেবতা থোথ -এর স্ত্রী। দেবী মা’আত আটটি সন্তানের জননী। দেবী মা’আত-এর সন্তানদের বলা হত হার্মোপোলিস নগরের দেবদেবী। এদের মধ্যে আমন হলেন প্রসিদ্ধ সন্তান।
আমরা জানি সত্য কেবলি বিমূর্ত নয়, এটি প্রতিষ্ঠার বিষয়। এবং মা’আত সত্যের ধারণা । কাজেই প্রাচীন মিশরে উপাসনাগুলোয় প্রতিদিনের কৃত্যানুষ্টানের মাধ্যমে আ’আত প্রতিষ্ঠা করা হত। সত্য প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব প্রাচীন মিশরের ফারাও এর উপরও বর্তেছিল। কেননাম মা’আত ছিলেন সুপ্রাচীন (বা আদিম) বিধানের প্রতীক- যা সৃষ্টিকে ধরে রাখে এবং নৈরাজ্যে (ক্যাওস) পতিত হওয়া থেকে সৃষ্টি রক্ষা করে।
এভাবেই ভারসাম্য এবং সঙ্গতি রক্ষা করেন মা’আত। এ কারণে মা’আত-এর ক্ষমতা ফারাওদের চেয়ে বহুগুণ বেশি। ফারাওরা দাবী করতেন তারা দেবী মা’আত -এর প্রিয় এবং সত্য ও ন্যায়ের নীতি উর্ধে তুলে ধরার ব্যাপারে সচেতন। প্রাচীন মিশরীয়রা চারটে নীতিতে বিশ্বাসী ছিল। (১) সবই নৈরাজ্য (ক্যাওস) থেকে উদ্ভূত।
(২) সবই নৈরাজ্যে ফিরে যাবে। (৩) মা’আত (সত্য এবং শৃঙ্খলা) -এ রয়েছে নৈরাজ্য এবং (৪) নৈরাজ্যে রয়েছে মা’আত।
এই চারটি নীতিতে প্রাচীন মিশরের দার্শনিক চিন্তার বীজ লুকিয়ে আছে।
অস্ট্রিচ। দেবী মা’আত- এর প্রিয় পাখি।
পশুপাখির সঙ্গে আমরা প্রাচীন মিশরীয় দেবদেবীর সংশ্লিষ্টতা আগেই লক্ষ করেছি। যেমন দেবী মা’আত এর স্বামী দেবতা থোথ- এর প্রাণি হচ্ছে বেবুন এবং আইবিস পাখি। দেবী মা’আত এর প্রধানতন নারীরূপই লক্ষ করা যায়। মাথায় অষ্ট্রিচ পাখির সাদা পালক; হাতে রাজদন্ড এবং ankh (জীবনের চাবি);
আমরা জানি প্রাচীন মিশরের ধর্মকর্মে পরকালের গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা ছিল। মৃত্যুর পরে দেবী মা’আত- এর বিশেষ ভূমিকা পালন করতেন।
মৃতের আত্মার প্রাথমিক বিচার তিনিই করতেন। ভারি বিচিত্র সে বিচার পদ্ধতি । মৃতের আত্মাকে দেবী মা’আত এর কাছে ‘বিশুদ্ধতার ৪২ টি ঘোষনা’ দিতে হত। এই ঘোষনা পাওয়া গিয়েছে সুবিখ্যাত ‘বুক অভ ডেড এ’ (প্যাপিরাস অব অনি) । প্রাচীন মিশরের জীবনধারা উপলব্দি করতে ‘বিশুদ্ধতার ৪২ টি ঘোষনা’ সহায়ক হবে বলে উল্লেখ করা হল।
১ আমি পাপ করিনি।
২ আমি নৃশংস ভাবে ডাকাতি করিনি।
৩ আমি চুরি করিনি।
৪ আমি নরনারী হত্যা করিনি।
৫ আমি শষ্য চুরি করিনি।
৬ আমি দেবতাদের অর্ঘ চুরি করিনি।
৭ আমি দেবতাদের সম্পদ চুরি করিনি।
৮ আমি মিথ্যে কথা বলিনি।
৮ আমি খাদ্য (চুরি করে) নিয়ে যাইনি।
১০ আমি কারুকে অভিশাপ দিইনি।
১১ আমি ব্যাভিচার করিনি। আমি পুরুষের সঙ্গে শুইনি। (I have not lain with men. অর্থাৎ, ঘোষনাটি নারীদের বেলায় প্রযোজ্য!)
১২ আমি কাউকে কাঁদাইনি। (অর্থাৎ কারু মনে কষ্ট দিইনি)
১৩ আমি অহেতুক আক্ষেপ প্রকাশ করিনি।
১৪ আমি কোনও পুরুষকে আক্রমন করিনি।
১৫ আমি প্রতারক নই।
১৬ আমি কৃষিজমি চুরি করিনি।
১৭ আমি কারও কানে কথা লাগাইনি।
১৮ আমি কারও সম্মানহানি করিনি।
১৯ যথাযথ কারণ ছাড়া রাগ করিনি।
২০ অন্যের স্ত্রীকে নীতিভ্রস্ট করিনি।
২১ অন্যের স্ত্রীকে নীতিভ্রস্ট করিনি। (এটি ২০ নং ঘোষনার মতো হলেও অন্যদেবতাকে বলা। সম্ভবত থোথ। )
২২ আমি নিজেকে দূষিত করিনি।
২৩ আমি কাউকে আতঙ্কিত করিনি।
২৪ আমি আইনের বিধান লংঘন করিনি।
২৫ আমি অতিরিক্ত রাগান্বিত হয়নি।
২৬ সত্য কথার প্রতি আমি আমার কান বন্ধ রাখিনি।
২৭ আমি দেবদেবীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াইনি।
২৮ আমি সন্ত্রাসী নই।
২৯ আমি শান্তি শান্তিকে বিঘিœত করিনি।
৩০ আমি তাড়াহুড়ো করে বিচার করিনি।
৩১ আমি কোনও বিষয়ে প্রতি শিকারীসুভল আচরণ করিনি। (নাক গলানো অর্থে সম্ভবত)
৩২ কথা বলার সময় শব্দকে দ্বিগুন করিনি।
৩৩ আমি কারও ক্ষতি করিনি, আমি অশুভ কিছু করিনি।
৩৪ আমি রাজার (ফারাও) এর বিরুদ্ধে জাদুটোনা করিনি।
৩৫ আমি জলের প্রবাহ রুদ্ধ করিনি।
৩৬ আমি ক্রোধান্বিত হয়ে কন্ঠস্বর উচ্চে তুলিনি।
৩৭ দেবতাদের অভিশাপ দিইনি।
৩৮ আমি উদ্ধত হয়ে কাজ করিনি।
৩৯ আমি দেবতাদের রুটি চুরি করিনি।
৪০ আমি মৃতদের আত্মা থেকে পিঠা নিয়ে যাইনি। (সম্ভবত পিরামিড বা সমাধিসৌধ থেকে কোনও কিছু নেওয়াকে বোঝানো হচ্ছে)
৪১ আমি শিশুদের থেকে খাবার কেড়ে নিইনি, এমন কী আমার নগরের অধিশ্বর দেবতার বিরুদ্ধে কটূবাক্য বলিনি।
৪২ আমি দেবতাদের পশু হত্যা করিনি।
প্রাচীন মিশরীয় সমাজে এই ৪২টি ঘোষনাই যে লঙ্ঘিত হত সে বিষয়ের সন্দেহের অবকাশ নেই। যে কারণে তখন বলছিলাম যে ‘বিশুদ্ধতার ৪২ টি ঘোষনা’ থেকে প্রাচীন মিশরের জীবনধারা উপলব্দি করতে সহায়ক হবে।
দেবতা থোথ। দেবী মা’আত-এর স্বামী। ইনি ও বিচার কার্যে উপস্থিত থাকতেন।
৪২ টি ঘোষনার পর দেবী মা’আত দাড়িপাল্লার এক পাল্লায় তুলে দিতেন আত্মা, অন্য পাল্লায় পালক। যদি আত্মার ওজন পালকের ওজনের সমান হয় তাহলে আত্মাটি স্বর্গে যাবে। আর যদি আত্মার ওজন পালকের ওজনের বেশি হয় তাহলে কুমীরমাথা দেবতা আম্মুট আত্মাটিকে গিলে খাবে!
অবশ্য কখনও কখনও দেবী মা’আত কে ডানাওয়ালা দেবীর রূপও দেখা যায়।
দেবী মা’আত সংক্রান্ত একটি প্রাচীন প্রশস্তি তে বলা হয়েছে
প্রণতি জানাই অতি মহৎ সত্যকে
দেবী আপনার সান্নিধ্যে এসেছি
আপনার অনন্ত জ্যোতি দর্শন করতে
আপনার নাম অতি পবিত্র
যে নাম পারলৌকিক জীবনের সহায়
তুলাদন্ডের ভারসাম্যদাত্রী
দুরাত্মা আত্মার ভীতিকর যাত্রা
যাবতীয় শুভের আশ্রয়স্থল
প্রণতি জানাই সেই মহৎ সত্যকে ...
একালের শিল্পীর কল্পনায় দেবী মা’আত
দেবী মা’আত এর উপাসনালয় (পুনঃনির্মান)
দেবী মা’আত এর উপাসনালয় (অভ্যন্তর ভাগের নকশা)
ছবি: ইন্টারনেট
তথ্যসূত্র:
Click This Link
http://www.egyptartsite.com/maat.html
http://en.wikipedia.org/wiki/Maat
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।