আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই নেত্রীকে মাইনাস এবং ক্ষমা চাওয়ার শীর্ষে মতিউর

আমি নতুন কিছু লিখবো

গত ১৬ বছরে আপনাদের দুজনের ক্ষমতা ও প্রতিহিংসার রাজনীতির অনেক অত্যাচার দেশবাসী নীরবে সহ্য করতে বাধ্য হয়েছে। দয়া করে আপনারা রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। দুর্নীতি আর অপশাসন ছাড়া আপনাদের দেশকে দেওয়ার মতো আর কিছু নেই, যত তাড়াতাড়ি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, তা দেশের জন্য ততই মঙ্গলজনক হবে। ' ২০০৭ সালের ১১ জুন দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান তার পত্রিকার মন্তব্য প্রতিবেদনে বাংলাদেশের দুটি প্রধান দলের দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে এভাবেই নসিহত করেন। রাজনীতি থেকে দুই নেত্রীকে মাইনাস করতে এ সময় মতিউর রহমান ব্যাপকভাবে তৎপর ছিলেন।

তার লেখার উপরের অংশটি একটি নমুনা। শুধু পত্রিকায় লেখা নয়, বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শো, সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে অংশ নিয়ে তিনি দুই নেত্রীকে কটাক্ষ করে মাইনাস করার পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। জানা গেছে, বর্তমান সরকার আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখোমুখি হয়েছিলেন মাইনাস টু ফর্মুলার নায়ক মতিউর রহমান। তখন বিষয়টি উত্থাপিত হলে প্রথম আলো সম্পাদক তার বিতর্কিত ভূমিকার জন্যে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছেও লোক পাঠিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

মতিউর রহমান যখন ভোরের কাগজের সম্পাদক ছিলেন, তখন পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় অসত্য সংবাদ পরিবেশনের দায়ে তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন। অপসাংবাদিকতার জন্য এ রকম অসংখ্যবার দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের অবস্থান এখনো শীর্ষে। প্রতিবেদন প্রকাশের পর তার দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রথম আলোর রম্য ম্যাগাজিন 'আলপিন'-এ হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে ব্যঙ্গ কার্টুন প্রকাশিত হলে সারা দেশের আলেম-ওলামাসহ ধর্মপ্রাণ মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা প্রথম আলো নিষিদ্ধ এবং মতিউর রহমানকে গ্রেফতারের দাবি জানান।

তখন ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে এ বিষয়ে এক সালিস বৈঠকে তিনি করজোড়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদের তৎকালীন খতিব মাওলানা উবায়দুল হকের কাছে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। বিভিন্ন পত্রিকায় করজোড়ে ক্ষমাপ্রার্থনার ছবিও পরদিন প্রকাশিত হয়। প্রথম আলোর জন্ম নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। ভারতীয় সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক সুনীতা পাল তার বেশ কয়েকটি বিশ্লেষণধর্মী লেখায় প্রথম আলোর জন্ম এবং এর উত্থান সম্পর্কে বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকায় নানা তথ্য প্রকাশ করেন, যা ওয়েবসাইটে এখনো রয়েছে। সুনীতা পাল লিখেছেন, বাংলাদেশকে নিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দৈনিক প্রথম আলো এবং একই গ্রুপের ইংরেজি ডেইলি স্টার পত্রিকা দুটিতে অর্থলগ্নী করছে উলফা।

এসব কারণে বাংলাদেশের রাজনীতির নানা উত্থান-পতনে মতিউর রহমান ও তার সম্পাদিত পত্রিকাটির অবস্থান সব সময় অস্বচ্ছ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রাজনীতি থেকে রাজনীতিকদের উচ্ছেদ করে সুশীল নাগরিকদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালিয়েছে প্রথম আলো। দেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ তত্ত্ব দিয়ে অসাংবিধানিক শক্তিকে ক্ষমতারোহণে উৎসাহ জুগিয়েছে মতিউর রহমানের সম্পাদিত বিতর্কিত এই দৈনিকটি। দেশের শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের হয়রানিও এর অন্যতম কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীসংক্রান্ত মামলার রায়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট সামরিক সরকারকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলেছেন।

ভবিষ্যতে যাতে অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্য সুপ্রিমকোর্ট আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছেন। কিন্তু এই অসাংবিধানিক সরকারকেই স্বাগত জানিয়ে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান তার সম্পাদিত পত্রিকায় মন্তব্য প্রতিবেদন লিখে কাগজ ভরেছেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় পত্রিকাটির ভূমিকা ছিল কোনো এক ষড়যন্ত্রকারী নেপথ্যশক্তির তল্পিবাহক হিসেবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে তিনি যত মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছেন, প্রথম আলোর ১২ বছর বয়সের বাকি ১০ বছরে তিনি ততগুলো মন্তব্য প্রতিবেদন লেখেননি। তার সব মন্তব্য প্রতিবেদনের সারবস্তু ছিল অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক শক্তিকে উসকে দেওয়া।

২০০৭ সালের ১৫ জানুয়ারি এটিএন বাংলার 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দেশে জরুরি অবস্থার পক্ষে তিনি সাফাই গান, সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি ভূমিকা রাখার উসকানি দেন। ২০০৭ সালের ১৫ জুলাই 'সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই' শিরোনামে প্রথম আলোয় এক মন্তব্য প্রতিবেদনে মতিউর রহমান লেখেন, 'দেশের সব পরিবর্তনের পেছনে একটি বিষয় লক্ষণীয়, তা হলো সশস্ত্র বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্যোগই এখন পর্যন্ত প্রধান। এসব পরিবর্তনের পেছনে রাজনৈতিক শক্তি বা নাগরিক সমাজের ভূমিকা বড় নয়। ' রাজনীতিকদের হেনস্থা করে রাজনীতি থেকে উচ্ছেদ করতে একের পর এক নিবন্ধ, প্রবন্ধ ও মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশ করে পত্রিকাটি, যার পথ ধরে জরুরি অবস্থার সময় রাজনীতিকদের অপদস্থ করা হয়। ২০০৭ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রথম আলোর সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, '... ক্ষমতায় থেকে লুটপাট ও দুর্নীতি করে সম্পদ গড়ে তোলা এবং লুটপাট অব্যাহত রাখতে ও সেই সম্পদ টিকিয়ে রাখার জন্য আবার নির্বাচনে জয়ী হতে যে কোনো পথ অবলম্বন, এই কাজটিই তো করেছেন আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

...' ২০০৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পত্রিকাটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনাবাহিনীর অবস্থানকে সমর্থন করে সম্পাদকীয় লেখে। এর জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি সব মহল, বিশেষভাবে সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থন ও সাহায্য-সহযোগিতা প্রয়োজন বলে লেখায় উল্লেখ করা হয়। রাজনীতি থেকে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে সরাতে মতিউর রহমানের চেষ্টার কমতি ছিল না। সে চেষ্টা ব্যর্থ করে দুই নেত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলে এবার মতিউর রহমান লেখেন, 'রাজনীতিবিদদের অনেকে এখন উল্টো সুরে কথা বলছেন, যেন দেশে ১১ জানুয়ারির পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন ছিল না, রাজনৈতিক নেতৃত্বের কোনো ভুল বা বাড়াবাড়ি ছিল না, কোনো ষড়যন্ত্র ছিল না। ভাবখানা এমন যে, দ্রুত একটা নির্বাচন দিয়ে অতীতের ব্যর্থ রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

' যখন যেটা তখন সেটা করতে সিদ্ধহস্ত মতিউর রহমান যখন দেখলেন, দুই নেত্রীকে সরানো যায়নি, বরং দেশ পরিচালনা তাদের হাতেই রয়ে গেল তখনই তিনি তার অবস্থান পাল্টে ফেলেন। কখনো ভুল স্বীকার আবার কখনো ক্ষমা চেয়ে পরিস্থিতি অনুকূলে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সংবাদপত্র মালিক সমিতির (নোয়াব) নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রথম আলো সম্পাদক বলেন, 'ওয়ান-ইলেভেন-পরবর্তী আমাদের কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এ জন্য আমরা দুঃখিত। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এটা করা ছাড়া তখন আমাদের উপায় ছিল না। তবে ওই ভূমিকা ভুল ছিল।

' বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। অবশ্য ভারতীয় সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক সুনীতা পাল অনেক আগেই এ ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক করেন। সুনীতা পাল 'উলফা ও বাংলাদেশের মিডিয়া' শিরোনামের লেখায় বলেছেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার গ্রুপের মালিক লতিফুর রহমানের যখন আর্থিক অনটনের মধ্যে দিন কাটছিল তখন তার স্ত্রীর ভাই উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া তাকে সাহায্য করেন। ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য আসামকে আলাদা করার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশের গণমাধ্যমকে কাজে লাগাতে চায় উলফা। যে কারণে অনুপ চেটিয়া তাকে অল্প সময়ে কয়েক মিলিয়ন ডলার দেন।

ওই ডলার দিয়েই প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয়। অনুপ চেটিয়া ঢাকায় গ্রেফতার হলে লতিফুর রহমান তার প্রতিষ্ঠানে উলফার সব গোপন শেয়ার অস্বীকার করেন। এ নিয়ে অনুপ চেটিয়ার সঙ্গে লতিফুরের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সুনীতা পাল তার লেখায় বলেছেন, আমদানিনির্ভর লতিফুর রহমানের ব্যবসার জন্য তার মিডিয়া গ্রুপকে কাজে লাগিয়ে বিপুল অংকের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। সুনীতা পাল তার লেখায় আরও বলেন, ১/১১ এর পর দুদক লতিফুর রহমানের সম্পদের হিসাব তলব করলে তা প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ধামাচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করে।

তিনি তার পিৎজাহাট, কেএফসির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করলেও পত্রিকার প্রভাব খাটিয়ে তিনি রক্ষা পান।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।