রফিকুল ইসলাম ( ১৪/০৫/২০১১ --)----ঃ 'চেয়ারের প্রতি আমার কোন মোহ নেই' জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের আগামী মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেছেন, 'রাজ্য সরকারের প্রশাসন চালানোর কাজগুলো শেখা শুরম্ন করেছি। এক সপ্তাহের মধ্যেই সব কাজ শিখে ফেলব। '
শুক্রবার বিকেলে কলকাতার কালীঘাট এলাকার হরিশ চ্যাটার্জী রোডের বাসভবন সংলগ্ন তৃণমূল কংগ্রেসের দফতরে বসে বাংলানিউজকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে মমতা ব্যানার্জী এ কথা বলেন। কলকাতার স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেল ও বাংলানিউজকে তিনি এক সঙ্গে এ সাক্ষাতকার দেন। দেশী-বিদেশী কোন সংবাদমাধ্যমের কাছে মমতার এটিই সবচেয়ে আগে দেয়া প্রথম পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাতকার।
সাক্ষাতকার প্রত্যাশী অনত্মত শ'দুয়েক সাংবাদিকের ভিড় লেগে ছিল। তাদের মধ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যম হিসেবে ওই টেলিভিশনকে এবং বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম হিসেবে বাংলানিউজকে প্রথম সাক্ষাতকার গ্রহণের সুযোগ করে দেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা। প্রায় আধাঘণ্টার ওই সাক্ষাতকারটিতে মমতা স্বভাবসুলভ অকপট ভঙ্গিতে তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, নির্বাচন, জীবনযাপনসহ নিজের অনেক কথাই বললেন।
বিধানসভায় নিরঙ্কুশ ও বিপুল জয়ের খবর পাওয়ার পর প্রথম অনুভূতি প্রসঙ্গে মমতা বলেন, 'মানুষের কথা আমার প্রথম মনে পড়ছে। মা মাটি মানুষকে মনে পড়েছে।
তারাই আমার হৃদয়ের ভরপুর শক্তি। এ ছাড়া রবীন্দ্র-নজরম্নল-স্বামী বিবেকানন্দের কথা মনে পড়ছে। '
মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম কাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমাকে একটু বুঝতে দিন। আমার কাজটি বুঝতে সাতদিন সময় লাগবে। এরই মধ্যে আমি জানার চেষ্টা করছি।
'
সংসদ সদস্য হিসেবে লোকসভায় কাজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ওখানে সব কাজ হয় সিস্টেমেটিক। '
তিনি বলেন, 'এখানে বিধানসভায় ফালতু কাজ হয় বলে শুনেছি। '
রাজ্যের সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আমাকে সহযোগিতা করম্নন। কোন সমস্যা নেই। আমি দলীয় মনোভাবে কাউকে মূল্যায়ন করব না।
কাজ দেখেই মূল্যায়ন করব। '
তিনি বলেন, 'দু'-একজন আমলা ছাড়া অন্যরা সবাই কাজ করতে চান। কিন্তু তাদের এতদিন কাজ করতে দেয়া হতো না। আমলাদের মধ্যে যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, তাদের আমরা চিনি। '
তিনি বিরোধীদের উদ্দেশে বলেন, 'আপনারা ভাল থাকুন।
আপনাদের পরিবার ভাল থাকুক। আমি মানুষের ভাল চাই। '
'বিরোধী দলের কাছ থেকে কেমন ব্যবহার আশা করছেন'_ এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মমতা বলেন, 'একটি রাজনৈতিক দল তার নিজের মতোই কাজ করে। অন্য দলের কথা আমি বলতে পারব না। '
১৯৯৮ সালে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আসেন মমতা ব্যানার্জী।
২০০০ সালের জানুয়ারিতে তিনি 'তৃণমূল কংগ্রেস' (টিএমসি) গঠন করেন।
মাত্র ১৩ বছরের মধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বন্দুকের জোরে ঘুরে আসা যায় না। মনের জোর লাগে, কাজ লাগে, মানুষের ভালবাসা লাগে। '
'বামফ্রন্টের বিরম্নদ্ধে লড়াই আজকের লড়াই নয়' বলে উলেস্নখ করে মমতা বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে আমি লড়ে আসছি। একা ২৬ দিন অনশনও করেছি।
তখন কেউ কথা বলতে যায়নি। এখন তো চার ঘণ্টা অনশন করলেই সরকার দৌড়ে যায় আলোচনার জন্য। '
তিনি বলেন, 'শুধু রাজনীতি নয়, সামাজিক ও মানবিক কাজ করে আমি মানুষের মন জয় করেছি। '
মানুষকেই নিজের পরিবার বলে অভিহিত করে মমতা ব্যানার্জী বলেন, 'দেখুন আমার নিজের কোন বাড়ি নেই, গাড়িও নেই। এই যে বাড়িটাতে আমি আছি, এটাও তো টেনেনসি এ্যাক্টে পাওয়া।
নিজের কিছুই নেই। '
তিনি বলেন, 'আমি তুফানের মধ্যে সাঁতার কাটতে চাই, আমি দুর্গমকে অতিক্রম করেই চলতে চাই। '
তিনি বলেন, 'আমি যদি চাইতাম, তো অনেক কিছুই করতে পারতাম। গত ২৫ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে আছি। সে বেতন জমালেও তো আমার কাছে এতদিনে কোটি টাকার বেশি জমে যেত।
তা তো হয়নি, মানুষের জন্যই সব খরচ করেছি। '
মমতা আরও বলেন, 'রেলমন্ত্রী হওয়ার পরও আমি বিজনেস ক্লাসে চড়ি না। রেলওয়ের টাকায় এক কাপ চাও খাই না। '
এই বাড়িতে থেকেই মহাকরণে যাবেন কীনা_ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'লোক দেখানো নিরাপত্তায় আমি বিশ্বাস করি না। এখানে তো রাতে ঘুমানোর জন্য আমি আসব।
সারাদিন তো আমি মহাকরণেই কাজ করব। রাতে এক ঘণ্টা ঘুমানোর জন্য হলেও এখানে আসব। '
তিনি বলেন, 'আমাকে কেউ রেলমন্ত্রী বললে আমার ভাল লাগে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা_ এটাও যেন কেমন লজ্জা লজ্জা লাগে। '
৩৪ বছর ধরে একটি শাসনের বাইরে এসে মানুষ যে রায় দিয়েছে তাতে রাজ্যে 'গণতন্ত্র' ফিরে এসেছে বলেও দাবি করলেন মমতা।
রেলমন্ত্রী হিসেবে রেলওয়ের বাইরেও রাজ্যের জন্য কাজ করেছেন এমন তথ্য জানিয়ে মমতা বলেন, 'এক লাখ কোটি টাকা এখানেই বিনিয়োগের ব্যবস্থা করেছি। '
তিনি আরও বলেন, 'রেলকে আমি যা করে দিয়েছি, তাতে আগামী ২০ বছর ধরে তারা ভালভাবে চলবে। '
নিজের একটা ব্যাগের নাম তিনি 'জঙ্গলমহল' রেখেছেন বলে উলেস্নখ করে মমতা বলেন, 'জঙ্গলমহলের মানুষ গণতন্ত্রের পক্ষে রায় দিয়েছেন। তিন মাসের মধ্যে ওখানকার ও উত্তরের পাহাড়ের সমস্যা সমাধান হবে। '
প্রশাসনের বিন্যাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমাকে দায়িত্বে বসার পর সাতদিন সময় দিন।
কারণ পুরনো বাড়িতে অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে হয়। '
রাজ্যের নির্বাচনে জয়লাভের পর তিনি অনেকের ফোন পেয়েছিলেন। অনেককেই তিনি ফোনও করেছিলেন।
মমতা বলেন, 'বাংলাদেশ থেকে হাসিনা দি'র ফোন পেয়েছি। খুব ভাল লাগল।
মনে হচ্ছে যেন দুই বাংলা এক হয়ে গেল। '
মমতা বলেন, 'আঞ্চলিক উন্নয়নে এক সঙ্গে কাজ করার কথা হাসিনা দি আমাকে বলেছেন, আমিও তাই মনে করি। '
'ফুরফুরা শরীফের হুজুর ও নাখোদা মসজিদের ইমাম সাহেবের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে', বলেন তিনি।
রাজ্যের নবীন প্রজন্মকে নিশ্চিনত্ম থাকতে বলে, তিনি বলেন, 'সব দেব। দেখুন না, অপেক্ষা করম্নন।
অন্য কোন রাজ্যে যেতে হবে না, এখানেই চাকরির ব্যবস্থা করব।
'ছবি বিক্রি করা থেকে এক কোটি এক টাকা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে আমি দান করব' বলে জানিয়ে তিনি বলেন, 'ছবি বিক্রি করার ওই টাকা আমার একার টাকা। এটা দিয়েই বাংলার শূন্য তহবিল ভরানো শুরম্ন করব। '
সরকার গঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাব। একদিনের জন্য দিলস্নী গিয়ে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও দেখা করব।
'
তিনি বলেন, 'রেল মন্ত্রণালয় আমাদের হাতেই রাখার জন্য অনুরোধ করব। এই একটাই তো সবেধন নীলমণি। '
বাংলার সরকারে জোটের কংগ্রেস ও এসইউইসিআইকেও মন্ত্রিসভায় নেয়া হবে বলে জানান তৃণমূল নেত্রী।
তিনি বলেন, 'সবাইকে নিয়ে পরিবারে থাকাই তো শানত্মি। আমি ভাগাভাগি করতে চাই না।
'
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।