বুকের ভেতর বহু দূরের পথ...
বব মার্লে নামটা সারাবিশ্বে সম্ভবত কারও কাছেই আপরিচিত নয়। মাত্র ৩৬ বছরের জীবনে যার অ্যালবাম দশ-দশবার ইউএস প্লাটিনাম সনদ লাভ করে, আর সারাবিশ্বে যার বিক্রীত অ্যালবামের সংখ্যা পঁচিশ মিলিয়নেরও বেশি, তাঁর জনপ্রিয়তার মাত্রাটা কত উঁচুতে তা বোধ করি আর না বললেও চলবে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে মিউজিকের জন্য স্কুল ছাড়া বালকটি যে একদিন দুনিয়া কাঁপাবে তা কস্মিনকালে কেউ না ভাবলেও শেষ পর্যন্ত ঘটল তা-ই। কিন্তু বেশি দিন নিজ প্রতিভার আলো ছড়াতে পারলেন না। ১৯৮৬ সালে দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে।
১৯৪৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জ্যামাইকায় শ্বেতাঙ্গ নাবিক বাবা আর কালো মায়ের সন্তান হয়ে জন্ম নেন বব মার্লে। মিশ্র বর্ণে জন্ম নিয়েও প্রচণ্ডভাবে রাজনীতিসচেতন মার্লে কালো মানুষের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন। তার সঙ্গীতের মূল বিষয়ই ছিল মানুষ। তিনি গান করতেন মানুষের অধিকার নিয়ে, অধিকারবঞ্চিত সব মানুষের জন্য, মানুষের দুঃখ-কষ্ট আর কান্নার বিরুদ্ধে, মানুষের আবেগ-উচ্ছ্বাস আর মানুষের একান্ত চাওয়া নিয়ে। তিন সব সময়ই সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করেছেন।
তার রচিত 'আফ্রিকান হার্বসম্যান', 'রিডেমশন সং', 'বাফেলো সোলজার', 'আই শট দ্য শেরিফ', 'ব্ল্যাক প্রগ্রেস', 'নো ওমেন নো ক্রাই', 'ওয়ান লাভ', 'ফোর হানড্রেড ইয়ারস'সহ অসংখ্য গানে এসব বিষয়ের প্রকাশ ছিল স্পষ্ট । মার্লে ও তার ব্যান্ড দি ওয়েলার্স ১৯৭৪ সালে 'বার্নিন' নামে যে অ্যালবামটি নিয়ে আসে তাতে ছিল বিখ্যাত গান 'গেট আপ অ্যান্ড স্ট্যান্ড আপ'। ষাট ও সত্তরের দশকে দেশে দেশে উত্তাল জাতীয়তাবাদী ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনে বিদ্রোহী মানুষের বুকে সাহস জুগিয়েছে এ গান।
তাঁর গান ও জটপড়া চুল যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি তাঁর ধর্মবিশ্বাসটিও কম আকর্ষণীয় ছিলোনা। মার্লে 'রাশতাফারি' ধর্মের অনুসারী ছিলেন, যে ধর্মের অনুসারীরা আফ্রিকার এক সম্রাটকে ঈশ্বর মনে করে এবং গাঁজা সেবন বৈধ মনে করে।
সঙ্গীতচর্চার মাধ্যমে মার্লে রাশতাফারি আন্দোলনও চালিয়ে গিয়েছিলেন সমান তালে।
মৃত্যুর ত্রিশ বছর পেরিয়ে এলেও বব মার্লে আজও সমানভাবে জনপ্রিয়। আজ পৃথিবীর নিপীড়িত, শোষিত, প্রতিবাদী মানুষের কণ্ঠস্বরের নাম বব মার্লে। টি-শার্ট থেকে শুরু করে মগ, কলম, টুপি, এমনকি শরীরের উল্কিতেও ঠাঁই করে নিয়েছেন বব মার্লে।
গত ১১ মে ছিলো কিংবদন্তিতুল্য এ শিল্পীর ত্রিশতম মৃত্যুবার্ষিকী।
তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
(১২ মে ২০১১ দৈনিক সমকালে প্রকাশিত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।