আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিন লাদেনের জামার ভাঁজে ৭৪০ ডলার, ২টি ফোন নম্বর

তক
আচমকা পালাতে হলে যাতে অথৈ জলে না-পড়েন, সে জন্য আপৎকালীন বন্দোবস্ত করে রেখেছিলেন ওসামা বিন লাদেন। পরনের জামার ভাঁজে সেলাই করে লুকিয়ে রাখা ছিল ৭৪০ ডলার। ছিল দু’টি ফোন নম্বরও। রবিবার রাতে মার্কিন বাহিনীর হাত এড়িয়ে কোনও মতো পালাতে পারলে এগুলোই হতো আল কায়দা প্রধানের প্রাথমিক রসদ! যে বাড়িতে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন ওসামা, সেই ‘ওয়াজিরিস্তান হাভেলি’-ও ছিল এক গোলকধাঁধা। মূল ভবনে ঢুকতে হলে টপকাতে হয় বেশ কয়েকটি প্রাচীর।

কিন্তু তার পরে প্রধান দরজা বলে যেটা মনে হচ্ছে, তা খুলতে গেলে বোকা বনতে হয়। কারণ, তার পিছনেই ইটের দেওয়াল। বাড়ির প্রতিটি তলায় ছিল ব্যারিকেডও। তবে এমন দুর্গে ঘাঁটি গাড়লেও ওসামার সঙ্গে কিন্তু ছিলেন হাতে গোনা কয়েক জন দেহরক্ষী। এবং গোড়ায় ওসামা একে-৪৭ হাতে প্রতিরোধ করেছিলেন বলে মার্কিন কর্তারা দাবি করলেও এখন হোয়াইট হাউস স্বীকার করছে, তাঁর কাছে কোনও অস্ত্রই ছিল না।

তাই প্রশ্ন উঠছে, ধরা পড়বেন না বলে কি এতটাই নিশ্চিন্ত ছিলেন বিশ্বের পয়লা নম্বর সন্ত্রাসবাদী? কংগ্রেস সদস্যদের সামনে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সিআইএ অধিকর্তা লিয়ন পানেত্তার দাবি: লাদেন নিশ্চিত ছিলেন, তাঁর প্রভাব এতটাই বেশি যে কোনও অভিযানের খবর তিনি অনেক আগেই পেয়ে যাবেন এবং পালাতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবেই পোশাকে ওই ডলার এবং পরবর্তী সাহায্য জোগাড়ের জন্য ফোন নম্বর ছিল। কিন্তু এত কম অর্থ কেন? তার ব্যাখ্যা মেলেনি। কংগ্রেস সূত্রে খবর, পানেত্তাই তাঁদের জানান, ওসামার বাড়িটাও বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছিল। যাতে কোনও অভিযান হলে প্রতি পদে বাধা পান কম্যাণ্ডোরা।

অর্থাৎ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছিল না, এমনটা নয়। ওসামার ১২ বছরের মেয়ে আবার পাক গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, তাঁর বাবাকে জীবন্ত ধরে তার পরে গুলি করে মারা হয়েছে। একটি আরবি চ্যানেল দাবি করেছে, ওই বাড়ি থেকে ধৃত মেয়েটি এখন পাকিস্তানের হেফাজতে। সে দেশের নিরাপত্তা-কর্তাদের উদ্ধৃত করে চ্যানেলটি জানিয়েছে, মেয়েটি বলেছে, বাবাকে খুঁজে পাওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে, পরিবারের অন্য লোকদের সামনে তাঁকে গুলি করে মারা হয়। তার পর দেহটি টেনে নিয়ে হেলিকপ্টারে তোলা হয়।

ওসামার মৃত্যু সংক্রান্ত প্রাথমিক বিবৃতি নিয়ে ‘ভুল’ স্বীকার করে নিচ্ছে হোয়াইট হাউসও। ওসামার মৃত্যু সংবাদ ঘোষিত হওয়ার পরে মার্কিন অফিসাররা বলেছিলেন, ওসামার কাছে একে-৪৭ ছিল। এবং তিনি তাঁর এক স্ত্রীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। এখন সেই সব বক্তব্য শোধরানো হচ্ছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জে কার্নে কাল রাতে জানান, আল কায়দা প্রধান নিরস্ত্রই ছিলেন।

তাঁর বুকে ও মাথায় গুলি করা হয়। কিন্তু মার্কিন কর্তারা যখন নিজেরাই বলছেন, ওসামা কোনও প্রতিরোধ না-করলে বা আত্মসমর্পণ করতে চাইলে তাঁকে গ্রেফতারের নির্দেশই ছিল, তা হলে তাঁকে মারা হল কেন? কার্নের দাবি, “নিরস্ত্র থাকলেও প্রতিরোধ করা যায়। এ ছাড়া, বাড়িতে ঢোকার পর থেকে সশস্ত্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছিল কম্যাণ্ডোরা। নিজেদের জীবন বিপন্ন বুঝেই তারা ওসামাকে গুলি করে। ” মার্কিন প্রশাসনের সূত্রে খবর, গুলির লড়াইয়ের পরে নেভি সিল (সি-এয়ার-ল্যাণ্ড) কম্যাণ্ডোরা যখন ওসামার কাছে পৌঁছে যান, তখন ঘরে পরিবারের অন্তত ১০ জন তাঁকে ঘিরে ছিলেন।

ছিলেন স্ত্রী এবং বেশ কয়েকটি অল্প বয়সী ছেলেমেয়ে। একটি কোলের শিশুও ছিল। ওসামার ইয়েমেনি স্ত্রী, ২৭ বছর বয়সী আমাল আল সাদা প্রথমে সামনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তখন তাঁর পায়ে গুলি করা হয়। তার পরে স্বয়ং ওসামা আগ্নেয়াস্ত্রের দিকে হাত বাড়ান এবং এমন কোনও ‘হুমকি’ বা ‘ইঙ্গিত’ দেন, যাতে কম্যাণ্ডোরা বুঝতে পারেন, তাঁদের জীবনই বিপন্ন।

তখন আল কায়দা প্রধানকে গুলি করা হয়। কার্নের বক্তব্য, “কম্যাণ্ডোদের বলাই ছিল, প্রতিরোধ করলেই ওসামাকে গুলি করে মেরে ফেলতে হবে। ” তবে শুধু ওসামার ‘অস্ত্র’ নিয়ে ভুল স্বীকার করাই নয়। আগের অনেক বক্তব্যই এখন পাল্টে ফেলছে হোয়াইট হাউস। যেমন, মার্কিন সন্ত্রাসবাদ দমন বিষয়ক শীর্ষ কর্তা জন ব্রেনান গোড়ায় বলেছিলেন, ওসামার এক স্ত্রীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল এবং তিনি নিহত হন।

কিন্তু পরে জানানো হয়, মারা গিয়েছেন ওসামার অনুচরের স্ত্রী। হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ওসামার ছেলে হামজা মারা গিয়েছে। পরে জানানো হয়, মারা গিয়েছে ওসামা-পুত্র খালিদ। হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, খালিদের দেহও সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল মার্কিন কম্যাণ্ডোর। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।

ওসামার আহত স্ত্রী এবং ছয় ছেলেমেয়েকেও পাকিস্তানেরই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ওয়াজিরিস্তান হাভেলি-তে মার্কিন অভিযানের কিছুটা বিবরণ দিয়েছেন কার্নে। তিনি জানান, ওই চত্বরে দু’টি বাড়ি ছিল। ওসামা এবং তাঁর পরিবার থাকতেন একটি বাড়ির দ্বিতীয় এবং তৃতীয় তলায়। এক তলায় থাকতেন তাঁর এক অনুচর।

অন্য বাড়িটিতে আর এক অনুচরের পরিবার থাকত। কম্যাণ্ডোদের প্রথম দলটির হাতে প্রথমে দুই অনুচর মারা পড়ে। তার পরে তারা উপরে উঠে সন্ধান পায় ওসামার পরিবারের এবং খোদ ওসামার। একটি সূত্র এ-ও বলছে, কম্যাণ্ডোরা যাতে ওসামাকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাতে পারেন, সে জন্য তাদের আরবি শেখানো হয়েছিল। সম্ভবত এক মহিলা কম্যাণ্ডোদের দেখেই চিৎকার করে ওসামার নাম উচ্চারণ করেন।

বাড়ির চার দিকে ছিল গাঁজার গাছ। একটি মার্কিন টিভি চ্যানেল জানিয়েছে, কিডনির অসুখে ভুগতেন ওসামা। এবং গাঁজার কিছু ওষধি গুণ আছে, সম্ভবত সেই কারণেই তা লাগানো হয়েছিল। বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রচুর ভেড়া, ছাগলও। বাড়ির কাছে এক দোকানদার আনজুম কায়সার আবার সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, আকবর এবং রশিদ খান নামে দুই যুবক এসে তাঁর দোকান থেকেই গাদা গাদা খাবার কিনে নিয়ে যেত।

মাত্র ১৫০ মিটার দূরের দোকানে তারা সব সময়ই আসত পাজেরো বা সুজুকি ভ্যানে চেপে এবং প্রায় ১০ জন লোকের খাবার নিয়ে যেত। শুধু খাবার নয়, তারা নিয়ে যেত নরম পানীয়ের গাদা গাদা বোতল বা ক্যান। মার্কিন বহুজাতিক সংস্থার তৈরি। যার বিরুদ্ধে সারা জীবন জেহাদ করে গিয়েছেন ওসামা বিন লাদেন।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।